Home Bangla Recent অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় প্রয়োজন জ্ঞাননির্ভর প্রশাসন

অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় প্রয়োজন জ্ঞাননির্ভর প্রশাসন

দেশের আর্থ-সামাজিক খাতে গৌরবজনক অগ্রগতি হলেও ভবিষ্যতের দিনগুলো হবে আরো বেশি চ্যালেঞ্জের। বৈশ্বিক অর্থনীতির ধারাবাহিক পরিবর্তন এই চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে, যা মোকাবেলায় জ্ঞাননির্ভর প্রশাসন পরিচালনব্যবস্থার দরকার হলেও বিভিন্ন খাতে এই জ্ঞানের প্রয়োগ খুব একটা দেখা যাচ্ছে না।

গতকাল বুধবার বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) বার্ষিক গবেষণা সম্মেলনের উদ্বোধনী পর্বে বক্তারা এসব কথা বলেন। রাজধানীর গুলশানের লেকশোর হোটেলে দুই দিনের এ সম্মেলনের উদ্বোধন করা হয়।

সম্মেলনের উদ্বোধনী অংশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান বলেন, দেশের সামগ্রিক অবস্থার গৌবরজনক অগ্রগতি হয়েছে। তবে তা ধরে রাখা বেশ চ্যালেঞ্জের। এ জন্য জ্ঞাননির্ভর প্রশাসন, সিদ্ধান্তগ্রহণ ও পরিচালনব্যবস্থা দরকার থাকলেও জ্ঞানের প্রয়োগ বিশেষ দেখা যাচ্ছে না। তার মানে এই নয় যে জ্ঞান নেই। জ্ঞান থাকলেও ব্যবহারিক জীবনে প্রয়োগবিমুখ হয়ে যাচ্ছে মানুষ। তিনি বলেন, অনেক রেগুলেটরি কমিশন হয়েছে। গ্যাস, বিদ্যুৎ, মোবাইল ফোনের কলরেট নির্ধারণে কমিশন রয়েছে; কিন্তু তাদের ক্ষমতা ও ক্ষমতা প্রয়োগে বেশ সীমাবদ্ধতা রয়েছে।

কমিশনগুলোর ক্ষমতা বাড়ানো গেলে এগুলো আরো কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারবে। দেশে করব্যবস্থায় যে অন্তর্নিহিত সামঞ্জস্য থাকে, তা বর্তমানে নেই বলে মনে করেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক এই চেয়ারম্যান।

মসিউর রহমান বলেন, করব্যবস্থা যদি বিনিয়োগ ও সঞ্চয় নিরুৎসাহিত করে তাহলে জাতীয় আয়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বিনিয়োগ বাড়ানো যাবে না। এ জন্য করব্যবস্থায় কোনো ত্রুটি থাকলে তা দূর করতে হবে। এত দিন বিনিয়োগে ভর করে এগিয়েছে দেশ। ভবিষ্যতে এগোতে গেলে দক্ষতা ও জ্ঞানের প্রয়োগ দরকার। আবার বিনিয়োগ বাড়াতে রেমিট্যান্সের ব্যবহার ভোগ থেকে সরিয়ে বিনিয়োগে আনার পরামর্শ দেন তিনি। এ ছাড়া ইট, গরু-মহিষের নাড়িভুঁড়ি, হোগলা ও গোলপাতার তৈরি পণ্যের রপ্তানিতে সর্বোচ্চ নগদ সহায়তার সমালোচনা করেন তিনি।

বিশেষ অতিথি সাবেক অর্থমন্ত্রী এম সাইদুজ্জামান সরকারের নতুন ব্যাংক অনুমোদনের সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, আর ব্যাংক দেওয়া ঠিক হবে না। কারণ অনেক ব্যাংক হয়ে গেছে; কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের সক্ষমতা বাড়েনি। এ ছাড়া ব্যবসা শুরু করতে অতিরিক্ত সময় ও অবকাঠামোর অভাবে পর্যাপ্ত বিদেশি বিনিয়োগ আসছে না বলে জানান তিনি।

বিশেষ অতিথি বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন বলেন, বাংলাদেশের সম্ভাবনা প্রচুর; কিন্তু সামনের দিনগুলোতে পথচলা অত্যন্ত কঠিন হবে। বিশ্ব অর্থনীতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে বাংলাদেশের এখন একজন অর্থনৈতিক দার্শনিক দরকার, যিনি ২০ বা ২৫ বছর পরে কী হবে, তার আগাম ধারণা দিতে পারবেন। তিনি বলেন, সব ক্ষেত্রে ভালো হলেও বৈষম্য বেড়েছে, এটা ভালো লক্ষণ নয়। এ বিষয়ে এখনই নজর দেওয়া উচিত।

আগামী দিনে রপ্তানি এখনকার মতো সুবিধাজনক অবস্থায় নাও থাকতে পারে। এ জন্য রপ্তানি ও অভ্যন্তরীণ বাজার বিষয়ে গবেষণার পরামর্শ দেন সাবেক এ গভর্নর। তিনি বলেন, উৎপাদন, শিল্পায়ন, কর্মসংস্থান ও রপ্তানি বহুমুখীকরণ করতে হবে।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিআইডিএসের মহাপরিচালক কে এ এস মুরশিদ। দুই দিনের এ সম্মেলনের ছয়টি অধিবেশনে ২২টি গবেষণাপত্র উপস্থাপন করবেন বিআইডিএসের গবেষকরা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here