Home Bangla Recent টেকসই পোশাক শিল্প গঠনে দিকনির্দেশনা নেই : বিজিএমইএ

টেকসই পোশাক শিল্প গঠনে দিকনির্দেশনা নেই : বিজিএমইএ

বাজেট প্রতিক্রিয়া

সুস্থ ও টেকসই পোশাক শিল্প গঠনের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে উল্লেখযোগ্য দিকনির্দেশনা নেই বলে মন্তব্য করেছে পোশাক খাতের বড় সংগঠন বিজিএমইএ। গতকাল পাঠানো বাজেটের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় সংগঠনটি বলে, বাজেটে পোশাক শিল্পে নগদ সহায়তার বিষয়ে সুষ্পষ্ট কোন প্রস্তাব রাখা হয়নি, যদিও পোশাক খাতের পক্ষ থেকে দাবি ছিল আগামী ২ বছরের জন্য উৎসে কর সম্পূর্ণরূপে প্রত্যাহার করা; কর্পোরেট করের হার হ্রাস করে ১০ শতাংশ করা ও তা আগামী ০৫ বছরের জন্য কার্যকর রাখা; এবং আগামী ২ বছরের জন্য পোশাক রপ্তানির এফওবি মূল্যের ওপর প্রচলিত সুবিধাগুলোর অতিরিক্ত ৫ শতাংশ হারে নগদ সহায়তা প্রদান করা (যা শুধুমাত্র বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ’র সদস্য প্রতিষ্ঠানের জন্য প্রযোজ্য হবে)। তবে প্রস্তাবিত বাজেটে অগি্ননির্বাপক ও ফায়ার ফাইটিং সিস্টেমের বিভিন্ন পণ্য রেয়াতি হারে শুল্কায়নের সুবিধা প্রদানের ঘোষণা দেয়া হয়েছে। এটি ভালো উদ্যোগ বলে মনে করছে সংগঠনটি। বিজিএমইএ মনে করে, এটি নিরাপদ শিল্প গঠনে অনুঘটকের ভূমিকা পালন করবে। এ জন্য সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন সংগঠনের নেতারা।

প্রতিক্রিয়ায় বলা হয়, ১১তম বাজেট ঘোষণার জন্য অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতকে আন্তরিক অভিনন্দন জানিয়েছে বিজিএমইএ। বিজিএমইএ মনে করে, ২০১৭-১৮ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেট জনকল্যাণমুখী বাজেট। প্রস্তাবিত বাজেটের আকার ৪ লক্ষ ২৬৬ কোটি টাকা। প্রস্তাবিত বাজেটে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার নির্ধারণ করা হয়েছে ৭.৪ শতাংশ, মূল্যস্ফীতি ধরা হয়েছে ৫.৫ শতাংশ। পুর্ববতী বছরে প্রবৃদ্ধি ৭.১ শতাংশের ওপর ছিল। আর চলতি অর্থবছরে এই প্রবৃদ্ধি ৭.২৪ শতাংশ হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জন ও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে থাকার জন্য বিজিএমইএ অর্থমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানিয়েছে।

বাজেট প্রস্তাবনায় অবকাঠামোখাত_ পদ্মা সেতু, রাস্তাঘাট নির্মাণকে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। বিজিএমইএ আশা করে, এ প্রকল্পগুলো যথাযথভাবে বাস্তবায়িত হবে। বিদ্যুৎখাতে যেসব স্বল্পমেয়াদি প্রকল্প গ্রহণ করা হচ্ছে, সেগুলো যত্নসহকারে বাস্তবায়িত হবে বলে বিজিএমইএ আশাবাদী। কারণ, শিল্পে এখন ব্যাপক গ্যাস-বিদ্যুৎ সংকট চলছে। বিজিএমইএ আশা করে, আগামীতে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে শিল্পে গ্যাস-বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হবে।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, বর্তমানে পোশাক শিল্প একটি ক্রান্তিলগ্ন অতিক্রম করছে। পণ্যের অব্যাহত দরপতন, বছরে গড়ে ৮ শতাংশ হারে উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি, রিমেডিয়েশন বাবদ ব্যয় বৃদ্ধি ও সর্বোপরি প্রতিযোগী দেশগুলোর সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাজার ধরে রাখার সংগ্রামের ফলে পোশাক শিল্পের সক্ষমতা আশংকাজনক হারে হ্রাস পেয়েছে। এ পরিস্থিতিতে বিজিএমইএ আশা করেছিল, ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে বাজেটে পোশাক শিল্পে বিনিয়োগ সুসংহত করা ও এ শিল্পের বিকাশে কিছু ব্যতিক্রমধর্মী পদক্ষেপ_ পোশাক শিল্পের জন্য প্রণোদনা আকারে সহায়তা দেয়া হবে। যেখানে কিনা বাংলাদেশের প্রতিযোগি দেশ ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার আগামী বছরের মধ্যে ৪০০ কোটি মার্কিন ডলারের পোশাক রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে তার পোশাক রপ্তানিকারকদের জন্য ৬ হাজার কোটি রূপী নগদ সহায়তার প্যাকেজ ঘোষণা করেছে এবং বিভিন্ন রাজ্য সরকার সেখানকার বিনিয়োগকারীদের বিশেষ আর্থিক সুবিধা প্রদান করছে।

উল্লেখ্য, পোশাক শিল্প ৪৪ লাখ শ্রমিকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছে, যাদের কিনা অন্য কোন খাতে কর্মসংস্থানের সুযোগ নেই। পশ্চাৎসংযোগ শিল্পসহ প্রত্যক্ষভাবে ১ কোটি লোক ও পরোক্ষভাবে ৫ কোটি লোক পোশাক শিল্পের ওপর নির্ভরশীল। যদিও সম্ভবনাময় রপ্তানিখাত হিসেবে বিভিন্ন সময়ে ওষুধ শিল্প, চামড়া শিল্প ও আইটিখাতের কথা বলা হচ্ছে_ বাস্তবতা হচ্ছে এখাতগুলোতে পোশাক শিল্পের শ্রমিকদের কর্মসংস্থানের কোন সুযোগ নেই। তাই, কোন কারণে পোশাক শিল্প হোঁচট খেলে অনেক শ্রমিক ভাইবোন নিশ্চিতভাবেই কর্মসংস্থান হারাবে। আবার, পোশাক শিল্পের ওপর প্রত্যক্ষভাবে দেশের ১ কোটি মানুষ নির্ভরশীল। সে কারণে এ খাতটিকে নিবিড় সহায়তা দেয়া যৌক্তিক বলে বিজিএমইএ মনে করে।

বর্তমান সংকটময় পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে পোশাকখাতের সুরক্ষায় আগামী ২ বছরের জন্য পোশাক রপ্তানির ঋঙই মূল্যের উপর প্রচলিত সুবিধাগুলোর অতিরিক্ত ৫ শতাংশ হারে নগদ সহায়তা প্রদান করার জন্য (যা শুধুমাত্র বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ’র সদস্য প্রতিষ্ঠানের জন্য প্রযোজ্য হবে) বিজিএমইএ সরকারকে অনুরোধ জানাচ্ছে।

একই সঙ্গে বিজিএমইএ পোশাক রপ্তানির উপর উৎসে কর আগামী ২ বছরের জন্য সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাহার করা অর্থাৎ ০.০ শতাংশ (শূন্য শতাংশ) উৎসে কর ধার্য করার জন্য অনুরোধ করছে।

বাজেট প্রস্তাবনায় কর্পোরেট করের হার ২০ শতাংশ থেকে হ্রাস করে ১৫ শতাংশ (পরিবেশবান্ধব কারখানার ক্ষেত্রে ১৪ শতাংশ) নির্ধারণ করার জন্য বিজিএমইএ সরকারকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছে। তবে বিজিএমইএ মনে করে প্রস্তাবিত কর্পোরেট কর হার আরও হ্রাস করা দরকার। এটিকে হ্রাস করে পূর্বের ন্যায় ১০ শতাংশ করা ও তা আগামী ০৫ বছরের জন্য কার্যকর রাখার জন্য বিজিএমইএ সরকারকে অনুরোধ জানাচ্ছে।

লক্ষণীয় বিষয়, তৈরি পোশাক যেখানে শিল্পে মেশিনারিজ আপগ্রেডেশন হচ্ছে এবং শিল্প গ্রিন হচ্ছে, সেখানে শিল্পে দক্ষ শ্রমিকের ঘাটতি প্রতীয়মান। তাই, পোশাক শিল্পে দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তোলার জন্য ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরের বাজেটে শ্রমিক-কর্মচারী প্রশিক্ষণ তহবিল গঠনপূর্বক বিশেষ বরাদ্দ প্রদানের জন্য বিজিএমইএ সরকারকে অনুরোধ জানাচ্ছে।

২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবে। আর মধ্যম আয়ের দেশে যেতে হলে প্রবৃদ্ধি ৮ শতাংশের উপরে হতে হবে, যার বেশিরভাগেরই যোগান দিবে শিল্পখাত। তাই, কাঙ্খিত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে যে সকল খাত অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে, তাদের সহায়তাদান বাঞ্ছনীয়।

বিজিএমইএ একান্ত আশা করে, প্রতিযোগী দেশগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা ও কর্মসংস্থান, রপ্তানি ও জাতীয় স্বার্থে পোশাক শিল্পের সক্ষমতা ধরে রাখা ও এর সুরক্ষার জন্য সরকার বাজেটে বিজিএমইএ’র উপরোক্ত সুপারিশগুলো বিবেচনা করবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here