Home Bangla Recent যুক্তরাষ্ট্রে শার্ট ও ট্রাউজার রফতানিতে ৮ মাসে আয় কমেছে ৮ শতাংশ

যুক্তরাষ্ট্রে শার্ট ও ট্রাউজার রফতানিতে ৮ মাসে আয় কমেছে ৮ শতাংশ

গত দুই যুগে পোশাক খাতে বাংলাদেশের রফতানি আয়ের ৮০ শতাংশের বেশি এসেছে মোট পাঁচটি পণ্য থেকে। এগুলো হলো— শার্ট, ট্রাউজার, জ্যাকেট, টি-শার্ট ও সোয়েটার। বাংলাদেশে তৈরি এসব পণ্যের সর্ববৃহত্ একক বাজার হলো যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির হালনাগাদ পরিসংখ্যান বলছে, চলতি বছরের আট মাসে বাংলাদেশ থেকে মার্কিন বাজারে শার্ট ও ট্রাউজার রফতানি কমেছে ৮ শতাংশের বেশি।

যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য বিভাগের অধীনস্থ অফিস অব টেক্সটাইলস অ্যান্ড অ্যাপারেলসের (ওটিইএক্সএ) পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত আট মাসে দেশটিতে সব ধরনের পোশাক রফতানিতে বাংলাদেশের আয় হয়েছে ৩৫০ কোটি ৬৭ লাখ ৯৪ হাজার ডলার। গত বছরের একই সময়ে আয় হয়েছিল ৩৭১ কোটি ৬৫ লাখ ৩৩ হাজার ডলার। এ হিসাবে আট মাসে মার্কিন বাজারে পোশাক পণ্য রফতানি থেকে বাংলাদেশের আয় কমেছে প্রায় ৬ শতাংশ।

ওটিইএক্সএর পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা যায়, মার্কিন বাজারে রফতানি হওয়া সব ধরনের পোশাকপণ্যের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো কটন শার্ট ও ট্রাউজার। চলতি বছরের আট মাসে এ দুই পণ্যের রফতানি বাবদ দেশের আয় হয়েছে ১৩১ কোটি ৮৪ লাখ ৭ হাজার ডলার। গত বছরের একই সময়ে পণ্য দুটির রফতানি থেকে আয় হয়েছিল ১৪৪ কোটি ২৪ লাখ ৬৩ হাজার ডলার। এ হিসাবে আয় কমেছে ৮ দশমিক ৬ শতাংশ।

পোশাক খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোয় বিশ্বে পোশাক বাণিজ্য উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, ২০১৫ সালে বিশ্বে পোশাক রফতানি কমেছে ৭ দশমিক ৯ শতাংশ। ২০১৬ সালে কমেছে আরো দশমিক ২৯ শতাংশ। এছাড়া উন্নত দেশগুলোয় আশঙ্কাজনক হারে খুচরা বিক্রয়কেন্দ্র বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। মার্কিন বাজারে এ প্রবণতা বেশি। স্বাভাবিকভাবেই এর প্রভাব পড়েছে মার্কিন বাজারে বাংলাদেশের পোশাকপণ্য রফতানিতে।

এ প্রসঙ্গে পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ গার্মেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বণিক বার্তাকে বলেন, গত ১০ বছরে এ খাতের গড় প্রবৃদ্ধি ছিল ১৩ শতাংশ। কিন্তু গত বছর আমাদের প্রবৃদ্ধি ছিল মাত্র দশমিক ২ শতাংশ। আন্তর্জাতিক বাজারের মুদ্রা বিনিময় হারের ওঠানামা, মূল্য কমে যাওয়া, চাহিদা হ্রাস ও অনলাইন চাহিদার সঙ্গে খাপ খাওয়াতে না পারার কারণেই পোশাক রফতানিতে প্রবৃদ্ধি বাড়ছে না। বরং ক্ষেত্রবিশেষে কমছে। যুক্তরাষ্ট্রসহ গুরুত্বপূর্ণ সব বাজারেই এ পরিস্থিতি দেখা যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশ নিয়ে নেতিবাচক প্রচারণাও বেশি হচ্ছে, যার প্রভাব ক্রয়াদেশে পড়েছে বলে দাবি করেন তিনি।

বিজিএমইএর দাবি, ২০১৬ সালের শেষ তিন মাসে যুক্তরাষ্ট্রে পোশাকের দরপতন হয়েছে ৩ দশমিক ৩ শতাংশ। ২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত দরপতনের হার ছিল যথাক্রমে ৪ দশমিক শূন্য ৩, ৬ দশমিক ১৩, ৪ দশমিক ৭৪, ৩ দশমিক ৮৬, ৫ দশমিক ৭২, ৩ দশমিক ৫৩ ও ৭ দশমিক ৭৭ শতাংশ। ওটিইএক্সএর তথ্য অনুযায়ী, জুলাই-আগস্টে শার্ট ও ট্রাউজারের পাশাপাশি কটন ড্রেস, নিট ব্লাউজ ও স্ল্যাকসের রফতানি কমেছে।

এদিকে জুলাইয়ে প্রকাশিত যুক্তরাষ্ট্রে ফ্যাশন পণ্য বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সোর্সিং এক্সিকিউটিভদের ওপর পরিচালিত একটি জরিপ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কমপ্লায়েন্স বিবেচনায় বাংলাদেশ এখনো সর্বোচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ একটি দেশ। এ মনোভাবের প্রভাবও পড়েছে বাংলাদেশ থেকে পোশাক ক্রয়াদেশে। ২০১৭ সালে জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ৬১ শতাংশ বাংলাদেশ থেকে পণ্য কিনছেন। ২০১৪ ও ২০১৫ সালের জরিপে অংশ নেয়া নির্বাহীরা বাংলাদেশের বিষয়ে আরো বেশি আশাবাদী ছিলেন। এবার তারা জানিয়েছেন, মূল্য সুবিধা থাকলেও সর্বোচ্চ কমপ্লায়েন্স ঝুঁকির কারণে ক্রেতাপ্রতিষ্ঠানগুলো বাংলাদেশ থেকে পণ্য ক্রয় বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে। জরিপে অংশগ্রহণকারীরা জানিয়েছেন, বাংলাদেশে সোর্সিং সম্প্রসারণের বিষয়ে তারা অনেক সচেতন অবস্থান নিয়েছেন। মাত্র ৩২ শতাংশ নির্বাহী আগামী দুই বছর বাংলাদেশে সোর্সিং বাড়ানোর বিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। এশিয়ার অনেক দেশের তুলনায় বাংলাদেশে পোশাক তৈরিতে মূল্য সুবিধা বেশি বলে জরিপে প্রকাশ পেয়েছে।

২০১৭ সালে পোশাক খাতে সোর্সিংয়ের ক্ষেত্রে শ্রম ব্যয় সবচেয়ে গুরুত্ব পাবে বলে জরিপে অংশ নেয়া নির্বাহীরা মত প্রকাশ করেছেন। এক্ষেত্রে তাদের উদ্বেগের বিষয় হলো এ ব্যয় বেড়ে যাওয়া। মার্কিন বাজারের মূল সরবরাহকারী দেশ চীন, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, শ্রীলংকা ও বাংলাদেশে দ্রুতগতিতে শ্রম ব্যয় বাড়ছে— এমন উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন নির্বাহীরা। পণ্য সরবরাহকারী হিসেবে এশিয়ায় সবচেয়ে বড় প্রতিযোগী দেশ চীন। প্রতিযোগীদের মধ্যে পাঁচ ধরনের পণ্যে ভিয়েতনাম ও মাত্র দুই ধরনের পণ্যে বাংলাদেশ শীর্ষ সরবরাহকারী বলে জরিপে উঠে এসেছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here