Home Bangla Recent সাভারে ট্যানারি সরানোর সময় আরও দুই বছর বাড়ল

সাভারে ট্যানারি সরানোর সময় আরও দুই বছর বাড়ল

পরিবেশসম্মত উপায়ে চামড়া শিল্পনগরী গড়ে তোলার লক্ষ্যে পুরান ঢাকার হাজারীবাগ থেকে ট্যানারি স্থানান্তরের মেয়াদ আবারও বাড়ানো হয়েছে। এবার আরও দুই বছর সময় বাড়িয়ে তৃতীয়বারের মতো এ সংক্রান্ত প্রকল্পে সংশোধনী এনেছে সরকার। এটিসহ মোট ৮ প্রকল্পের চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ হাজার ৯৭৯ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। মঙ্গলবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে একনেক চেয়ারপার্সন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় এসব প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়। সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল প্রকল্প বিষয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।

পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, মোট ব্যয়ের মধ্যে সরকারী তহবিল থেকে পাওয়া যাবে ৪ হাজার ৬৯ কোটি ৩৪ লাখ টাকা, বাস্তবায়নকারী সংস্থার নিজস্ব তহবিল থেকে ব্যয় হবে ৫১ কোটি ১৬ লাখ টাকা এবং বৈদেশিক সহায়তা হিসেবে প্রকল্প সাহায্য পাওয়া যাবে ৮৫৮ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, বুড়িগঙ্গাকে বাঁচাতে গিয়ে ধলেশ^রী নদীকে দূষিত করা হবে না। এ জন্য চামড়া শিল্পনগরী প্রকল্প সফলভাবে বাস্তবায়ন করতে চায় সরকার। ট্যানারি মালিকদের সহযোগিতা নিয়েই সাভারে চামড়াশিল্প স্থানান্তর করা হচ্ছে। তবে নতুন করে প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হলেও ব্যয় খুব একটা বাড়ানো হয়নি।

তিনি বলেন, শিল্প কারখানা স্থানান্তর একটি জটিল প্রক্রিয়া। ২০০৩ সালে এই প্রক্রিয়া শুরু হলেও বর্তমান সরকারের আন্তরিকতার কারণে ট্যানারি স্থানান্তর দ্রুত হচ্ছে। এবার আশা করছি, নির্ধারিত সময়েই প্রকল্পের কাজ শেষ হবে। মন্ত্রী জানান, ১৫৫টি ট্যানারির মধ্যে ৯২টি ইতোমধ্যে সাভারে স্থানান্তরিত হয়েছে এবং বাকি ৬৩টি ট্যানারি স্থানান্তরের প্রক্রিয়া চলছে। প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীরগতি এবং ধলেশ্বরী নদীর দূষণসংক্রান্ত সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করে দ্রুত রিপোর্ট দেয়ার জন্য বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) সচিবকে তাৎক্ষণিক নির্দেশ দেন।

উল্লেখ্য, প্রকল্পটি মোট ১৭৫ কোটি ৭৫ লাখ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে ২০০৩ সালের জানুয়ারি হতে ২০০৫ সালে ডিসেম্বরে বাস্তবায়নের জন্য ২০০৩ সালে ১৬ আগস্ট একনেকে অনুমোদন পায়। পরবর্তীতে ২০১৩ সালের ১৩ আগস্ট প্রকল্পটির দ্বিতীয় সংশোধন ১ হাজার ৭৮ কোটি ৭১ লাখ টাকা ব্যয়ে অনুমোদন দেয় একনেক। ২০১৭ সালের জুনে এর কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। এখন ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত ২ বছর মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। ‘চামড়া শিল্পনগরী, ঢাকা (৩য় সংশোধিত)’ প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৭৮ কোটি ৭১ লাখ টাকা। এর পুরোটাই সরকারী তহবিল থেকে ব্যয় করা হবে। প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য হলো-পিইটিপি, ডাম্পিং ইয়ার্ড এবং পানি উত্তোলন, পরিশোধন ও সরবরাহ ব্যবস্থার অসমাপ্ত কাজ সম্পন্ন করা।

মুস্তাফা কামাল জানান, টেকসই চামড়াশিল্প গড়ে তোলার জন্য ব্যবসায়ীরা চামড়াশিল্প নিয়ে ইকোনমিক জোন করতে চাইলে, সরকার প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দেবে। এর জন্য প্রয়োজনীয় জমি দেয়া হবে। বাংলাদেশে বিদ্যমান চামড়াশিল্প কারখানার ৯৫ শতাংশ ঢাকার ঘনবসতিপূর্ণ হাজারীবাগ এলাকায় স্থাপিত। এ শিল্পগুলোর অধিকাংশই নন-পমকানাইজড বা সেমি-পমকানাইজড পদ্ধতিতে চামড়া প্রক্রিয়াজাত করার ফলে প্রচুর পরিমাণে পরিবেশ দূষণকারী তরল ও কঠিন বর্জ্য নির্গত হয়। এ পরিস্থিতিতে ঢাকার অদূরে সাভারে আধুনিক বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণ ব্যবস্থাসহ একটি চামড়া শিল্পনগরী স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ এবং এর জন্য উন্নয়ন প্রকল্প নেয়া হয়।

একনেকে অনুমোদন পাওয়া অন্য প্রকল্পসমূহ হচ্ছে-ক্ষুদ্রাকার পানি সম্পদ উন্নয়ন (২য় পর্যায়) প্রকল্পের বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ২৮৫ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। টাঙ্গাইল জেলার ভূঞাপুর উপজেলার অর্জুনা এলাকাকে যমুনা নদীর ভাঙ্গন হতে রক্ষার্থে নদী তীর সংরক্ষণ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ২৮১ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। ওয়েস্ট জোন এলাকায় বিদ্যুত বিতরণ ব্যবস্থার সম্প্রসারণ ও পরিবর্ধন প্রকল্পের ব্যয় হবে ১ হাজার ২৪৯ কোটি ৫ লাখ টাকা। এ ছাড়া দেশের ৮টি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ক্যাম্পাসে ইনস্টিটিউট অব নিউক্লিয়ার মেডিসিন এ্যান্ড এলায়েড সায়েন্সেস স্থাপন প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৫৮২ কোটি ৩০ লাখ টাকা। সৈয়দপুর-নীলফামারী মহাসড়ক (আর-৫৭০) প্রশস্তকরণ ও মজবুতিকরণ প্রকল্পে ব্যয় হবে ২২৫ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। নওগাঁ-আত্রাই-নাটোর মহাসড়কে অসমাপ্ত কাজ সমাপ্তকরণ প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ২০১ কোটি ২৯ লাখ টাকা। জয়পুরহাট-আক্কেলপুর-বদলগাছী (জেড-৫৪৫২) এবং ক্ষেতলাল-গোপিনাথপুর-আক্কেলপুর (জেড-৫৫০৮) জেলা মহাসড়ক প্রশস্তকরণ ও মজবুতিকরণ প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ৭৪ কোটি ৫১ লাখ টাকা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here