Home Bangla Recent আগামী সপ্তাহের মধ্যে গার্মেন্টসের নতুন মজুরি বোর্ড

আগামী সপ্তাহের মধ্যে গার্মেন্টসের নতুন মজুরি বোর্ড

কারখানা মালিক ও শ্রমিক পক্ষের প্রতিনিধির নামের প্রস্তাব শ্রম মন্ত্রণালয়ে

গার্মেন্টস খাতে কর্মরত শ্রমিকদের জন্য নতুন নিম্নতম মজুরি বোর্ড গঠন হচ্ছে আগামী সপ্তাহের মধ্যে। এ লক্ষ্যে প্রাথমিক প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে সরকার। মজুরি বোর্ড গঠনের জন্য কারখানা মালিক ও শ্রমিক প্রতিনিধিদের নামের তালিকাও ইতিমধ্যে শ্রম মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। মজুরি বোর্ড গঠনের ছয় মাসের মধ্যে নতুন মজুরি কাঠামো ঘোষণা করতে হবে।  সেই হিসেবে আগামী বছরের মাঝামাঝি নাগাদ এ খাতের শ্রমিকরা বর্ধিত নতুন মজুরি পেতে পারেন।

শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু ইত্তেফাককে বলেন, চলতি মাসের মধ্যে গার্মেন্টস খাতের জন্য নতুন মজুরি বোর্ড গঠনের লক্ষ্য রয়েছে। আগামী বুধবার (আগামীকাল) নাগাদ বলা যাবে, কবে বোর্ড গঠন করা হবে। এই বিষয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গেও আলোচনা করব।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, গত সপ্তাহে শ্রম মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে কারখানা মালিক ও শ্রমিকদের প্রতিনিধি চাওয়া হয়। তিন দিন আগে জাতীয় শ্রমিক লীগের সভাপতি শুক্কুর মাহমুদের নাম শ্রমিক পক্ষের প্রতিনিধি হিসেবে সরকারের কাছে পাঠানো হয়েছে। অন্যদিকে মালিকপক্ষের প্রতিনিধি হিসেবে বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান, সহ-সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বাবু ও পরিচালক আদনান কোরেশীর নাম প্রস্তাব আকারে পাঠানো হয়েছে। এর বাইরে বোর্ডের স্থায়ী প্রতিনিধি রয়েছেন। ফলে বোর্ড গঠনের আনুষ্ঠানিকতাই কেবল বাকি।

জাতীয় শ্রমিক লীগের সভাপতি শুক্কুর মাহমুদ ইত্তেফাককে বলেন, গত তিন দিন আগে শ্রমিকপক্ষের প্রতিনিধি হিসেবে আমার নাম প্রস্তাব করা হয়েছে। আশা করছি শিগগিরই বোর্ড গঠন হবে। মজুরি নির্ধারণের ক্ষেত্রে দ্রব্যমূল্যের বর্তমান পরিস্থিতি, মূল্যস্ফীতিসহ আরো কিছু বিষয়কে গুরুত্ব দেওয়া হবে। তবে শ্রমিকদের পক্ষের দাবি কী হবে, তা মজুরি বোর্ড গঠনের পর অন্যান্য শ্রমিক প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করে ঠিক করা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।

এদিকে ইন্ডাস্ট্রিঅল বাংলাদেশ কাউন্সিল (আইবিসি) মজুরি বোর্ডে নিজেদের প্রতিনিধি দেওয়ার দাবি তুলেছে। ইতিমধ্যে তারা এ দাবি শ্রম মন্ত্রণালয় ও মালিকপক্ষের কাছে জানিয়েছে। অন্যথায় এ মজুরি বোর্ড তারা মানবে বলে ইতিমধ্যে হুমকিও দিয়ে রেখেছে। আইবিসি’র মহাসচিব তৌহিদুর রহমান ইত্তেফাককে বলেন, মজুরি বোর্ডে প্রকৃত শ্রমিক প্রতিনিধি না থাকলে তাদের ঠকার শঙ্কা থাকে। এ জন্য সরকারকে শ্রমিক পক্ষের প্রতিনিধি হিসেবে আইবিসি’র প্রতিনিধি দেওয়ার দাবি জানিয়েছি। প্রতিনিধি দেওয়া না হলে এ বোর্ড আমরা মানবো না।

গার্মেন্টস খাতে নতুন মজুরি বোর্ড গঠনের জন্য গত বছর থেকেই শ্রমিক নেতাদের পক্ষ থেকে দাবি উঠে। এ খাতে সর্বনিম্ন ১৫ হাজার টাকা মজুরির দাবিতে গত জানুয়ারির শুরুতে সাভারের আশুলিয়ায় কয়েকটি কারখানার শ্রমিকরা হঠাত্ কর্মবিরতি করার পর তা নিয়ে অনেক ‘জল ঘোলা’ হয়। চলতি বছরের মধ্যে মজুরি বোর্ড গঠন করা না হলে নতুন বছর থেকেই আন্দোলনের ঘোষণা দিয়ে রেখেছে আইবিসি। অন্যদিকে এই প্রথমবারের মত গার্মেন্টস মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ চিঠি পাঠিয়ে নতুন মজুরি বোর্ড গঠনের জন্য সরকারকে অনুরোধ জানিয়েছে, যা অতীতে এর আগে দেখা যায়নি। ধারণা করা হচ্ছে, কোন ধরণের শ্রম অসন্তোষ এড়াতেই আগাম এ কৌশল নেয় বিজিএমইএ।

গার্মেন্টসের নিম্নতম মজুরির হার কী হবে, তা নির্ধারণের ক্ষেত্রে কয়েকটি বিষয়কে বিবেচনায় নেওয়া হয়। এর মধ্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বিদ্যমান বাজারমূল্য, সর্বশেষ মজুরি ঘোষণার  পর মূল্যস্ফীতি,  দেশের অন্যান্য খাতের ন্যুনতম মজুরি, প্রতিযোগি দেশের গার্মেন্টস খাতের ন্যুনতম মজুরি অন্যতম।

দেশে এ খাতের শ্রমিকদের জন্য ১৯৮৪ সালে প্রথম মজুরি ঘোষণা করা হয়। ওই সময় শ্রমিকদের ন্যুনতম মোট মজুরি ছিল ৬৩০ টাকা। পরবর্তীতে ১৯৯৪ সালে ৯৩০ টাকা, ২০০৬ সালে ১ হাজার ৬৬২ টাকা, ২০১০ সালে ৩ হাজার টাকা ও ২০১৩ সালে ৫ হাজার ৩শ’ টাকা নির্ধারণ করা হয়।

শ্রমিক সংগঠনগুলোর দাবি, বিশ্বে এখনো বাংলাদেশেই শ্রমিকের মজুরি সবচেয়ে কম। গার্মেন্টস খাতে বাংলাদেশে সর্বনিম্ন মজুরি প্রায় ৬৮ ডলার। মায়ানমারে ৯৭ ডলার। কম্বোডিয়ায় ১৭০ ডলার, ভিয়েতনামে ১৬০ ডলার, চীনে ২২৩ থেকে ২৪০ ডলার, ভারতে রাজ্যভেদে ৭ হাজার থেকে ৯ হাজার রুপি এবং পাকিস্তানে প্রায় ১৫ হাজার রুপি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here