Home Bangla Recent উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে সাড়ে ১৭ শতাংশ

উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে সাড়ে ১৭ শতাংশ

চ্যালেঞ্জের মুখে পোশাক শিল্প

নারায়ণগঞ্জের এমবি নিট ফ্যাশন লিমিটেডের হিসাবে গত দু’বছরের ব্যবধানে তাদের উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে প্রায় ২৫ শতাংশ। ব্যয় বেড়েছে গাজীপুরের গ্রিন সার্টিফাইট এসকিউ গার্মেন্টের। ন্যূনতম মজুরি কাঠামো ও কমপ্লাইন্স বাস্তবায়ন এবং গ্যাস, বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির কারণে উল্লিখিত কারখানাসহ প্রতিটিতে উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে। বিজিএমইএ’র হিসাবে গড়ে সাড়ে ১৭ শতাংশ ব্যয় বেড়েছে পোশাক শিল্পে। একই সময়ে বিদেশি ক্রেতারা মূল্য কমাতে ব্যাপক চাপ সৃষ্টি করছেন। ক্ষেত্রবিশেষ গড়ে ১৫ থেকে ২০ শতাংশ দাম কমিয়েছে। এ পরিস্থিতিতে উভয় সংকটে পড়েছেন উদ্যোক্তারা। উল্লিখিত সংকট ছাড়াও নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস-বিদ্যুৎ সংকট ও ব্যাংক ঋণের উচ্চ সুদের কারণে স্থবির হয়ে আছে এ খাতের বিনিয়োগ। ফলে পোশাক খাতের প্রবৃদ্ধি লক্ষ্য অনুযায়ী অর্জন নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। যুগান্তরের অনুসন্ধানে পাওয়া গেছে এসব তথ্য।

উদ্যোক্তাদের মতে, অ্যাকর্ড ও অ্যালাইন্সের শর্তমতে, একটি ছোট আকারের পোশাক কারখানায় কমপ্লাইন্স বাস্তবায়ন করতে ন্যূনতম ব্যয় হচ্ছে ৫ কোটি টাকা। ন্যূনতম মজুরি বাস্তবায়নে বেতন খাতে ব্যয় বেড়েছে ২২৩ শতাংশ। ১ মার্চ থেকে প্রতি ঘন মিটার গ্যাসের দাম ৭ দশমিক ২৪ টাকা বেড়েছে। এর আগে বিদ্যুতের ইউনিট মূল্যও গড়ে ২ দশমিক ৯৩ শতাংশ বেড়েছে। পুরোটাই যোগ হচ্ছে পোশাক উৎপাদনে। জানতে চাইলে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ যুগান্তরকে বলেন, রানা প্লাজার ঘটনার পর পোশাক শিল্পে ব্যয় বেড়েছে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। প্রতিটি কারখানায় কমপ্লাইন্স বাস্তবায়ন করতে অগ্নিনিরাপদ, কর্মপরিবেশ ও ত্রুটিহীন ভবন নির্মাণ করতে হচ্ছে। কিন্তু সে অনুপাতে পোশাকের মূল্য বাড়াতে রাজি হচ্ছেন না ক্রেতারা।

জানতে চাইলে বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, পোশাক শিল্পে ব্যয় বৃদ্ধির পেছনে ইউটিলি সেবার মূল্য বৃদ্ধির সঙ্গে বাড়তি যোগ হয়েছে রফতানি জোনগুলোর মুদ্রার মান হ্রাস পাওয়ার বিষয়টি। তার মতে, সম্প্রতি মার্কিন ডলার, পাউন্ড ও ইউরোর মূল্য পতনের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। রানা প্লাজার ঘটনার পর ২৫ শতাংশ পোশাকের মূল্য ক্রেতারা কমিয়েছেন তা স্বীকার করে বিকেএমইএ’র সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. হাতেম যুগান্তরকে বলেন, মূল্য কমানোর ফলে সাশ্রয় অর্থ দিয়ে ক্রেতারা অ্যাকর্ড ও অ্যালাইন্সের মতো সংস্থাকে লালন-পালন করছেন।

জানা গেছে, উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধির কারণে বহির্বিশ্বে বড় ধরনের প্রতিযোগিতার মুখে পড়েছে এ শিল্প। বিশেষ করে বাংলাদেশের প্রতিযোগী দেশ ভারত আগামী বছরের মধ্যে ৪০০ কোটি মার্কিন ডলারের পোশাক রফতানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এজন্য ৬ হাজার কোটি রুপি নগদ সহায়তার প্যাকেজ ঘোষণা করে দেশটির সরকার। পাকিস্তানও বিশেষ সুবিধা ভোগ করছে রফতানির ক্ষেত্রে।

সূত্রমতে, উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাওয়ার পর কঠিন পরিস্থিতির কথা তুলে ধরে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছে তৈরি পোশাক শিল্পের সংগঠন বিজিএমইএ। সেখানে বলা হয়, কমপ্লাইন্স নিশ্চিত করতে কারখানাগুলো পরিদর্শনের পর কিছু কারখানা আংশিক, সাময়িক ও পূর্ণাঙ্গভাবে বন্ধ হয়ে গেছে। ব্যাংক ঋণ, বাড়ি ভাড়াসহ অন্যান্য ব্যয় মিটিয়ে অনেকের পক্ষে টিকে থাকা সম্ভব হচ্ছে না। এ অবস্থায় উদ্যোক্তারা ব্যাক টু ব্যাক দায়, প্রকল্প ঋণ, স্টকলট, কাস্টমস লায়াবিলিটি, টার্ম লোন, মন্দ সিআইবি রিপোর্ট নিয়ে ঝুঁকিতে আছেন। চিঠিতে স্বল্প সুদে বিশেষ তহবিল বরাদ্দ এবং সব পর্যায়ে দেশের প্রচলিত আইন ও নিয়মকানুন প্রয়োগ নিশ্চিত করার সুপারিশ করা হয়।

এ শিল্পের ব্যয় কমাতে শ্রমিকদের উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর জন্য বিশেষ কর্মসূচি গ্রহণের প্রস্তাব দেয়া হয় ওই চিঠিতে। সেখানে বলা হয়, উৎপাদনশীলতার দিক থেকে বাংলাদেশের শ্রমিকদের সক্ষমতার হার ৭৭ শতাংশ। প্রতিযোগী দেশ ভারতের হচ্ছে ৯২, ভিয়েতনামের ৯০ ও চীনের ১০০ শতাংশ।

বিজিএমইএ’র ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ নাসির যুগান্তরকে রানা প্লাজার ঘটনার পর এ শিল্পে উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে প্রায় সাড়ে ১৭ শতাংশ। ব্যয় মেটাতে না পেরে প্রায় ১ হাজার ২০০ কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। ক্রেতারা পোশাকের মূল্য গড়ে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ কমিয়েছে। যে কারণে প্রবৃদ্ধি হচ্ছে না। তিনি এ শিল্পের জন্য অস্থায়ী ভিত্তিতে সহায়তা দেয়ার সুপারিশ করেন।

এদিকে উৎপাদন ব্যয় বাড়ছে, অন্যদিকে পোশাক খাতে বিনিয়োগে খরা চলছে। নতুন কোনো বিনিয়োগ হচ্ছে না। বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন পর্যবেক্ষণে বলা হয়, বস্ত্র খাতের কাক্সিক্ষত প্রবৃদ্ধি অর্জনে গ্যাস, বিদ্যুৎ ও জমির স্বল্পতা প্রধান প্রতিবন্ধকতা। এদিকে বিনিয়োগ বাড়াতে বিজিএমইএ’র পক্ষ থেকে বেশি কিছু সুপারিশ তুলে ধরে চিঠি দেয়া হয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে। সেখানে বলা হয়, মোট গ্যাস সরবরাহের মধ্যে ৪ শতাংশ যাচ্ছে পোশাক শিল্পে। এ খাতে সরবরাহের পরিমাণ, বৃদ্ধি, রেল ও সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার দ্রুত উন্নয়ন, বন্দরের আধুনিকায়ন ও সক্ষমতা বৃদ্ধি, নতুন শিল্প পার্ক স্থাপন, ঢাকা ও চট্টগ্রাম হাইওয়ের রাস্তার কাজ দ্রুত নিরসনের কথা বলা হয়।

বাংলাদেশ রফতানিকারক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সালাম মুর্শেদী বলেন, গ্যাস না থাকায় পোশাক খাতে বিনিয়োগ আসছে না। গ্যাসের সরবরাহ নিশ্চিত, ব্যাংক ঋণের সুদের সিঙ্গেল ডিজিট ও ওয়ানস্টপ সার্ভিস সুবিধা দেয়া হলে বিনিয়োগ বাড়বে।