Home Bangla Recent এফটিএ হলে তুরস্কে পোশাক রফতানি দ্বিগুণ হবে

এফটিএ হলে তুরস্কে পোশাক রফতানি দ্বিগুণ হবে

তুরস্কের সঙ্গে মুক্তবাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) হচ্ছে। সুবিধা-অসুবিধা যাচাই শেষে এ চুক্তি করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। চার বছর আগে দু’দেশের পণ্যের অবাধ আমদানি-রফতানির স্বার্থে এফটিএ করার প্রস্তাব দেওয়া হয় তুরস্কের পক্ষ থেকে। দু’দেশের মধ্যকার আগামী যৌথ অর্থনৈতিক কমিশনের (জেইসি) বৈঠকে এ চুক্তি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আগামী বছরের প্রথম দিকে আঙ্কারায় জেইসির বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। ঢাকা সফরে আসা তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী বিনাল ইলদিরিমের সঙ্গে গত মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বৈঠকেও এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। বৈঠকে উপস্থিত বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদও বাণিজ্য সংক্রান্ত অন্যান্য বিষয়ের সঙ্গে এটিও আলোচনায় আনেন।

তুরস্কের সঙ্গে এফটিএ হলে বাংলাদেশের প্রধান পণ্য তৈরি পোশাকের রফতানি বর্তমানের দ্বিগুণ হবে বলে মনে করেন রফতানিকারকরা। প্রধান প্রধান অন্যান্য পণ্যও রফতানিতে বড় ধরনের সুবিধা পাবে। চার বছর আগে স্থানীয় শিল্পের স্বার্থে নেওয়া সুরক্ষানীতির কারণে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকে ২৭ শতাংশ শুল্ক্ক আরোপ করে দেশটি। এ কারণে রফতানিতে এক রকম ধস নামে।

সর্বশেষ গত প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় দেশটিতে পোশাক রফতানি কমেছে ৫৫ শতাংশ। ১০ কোটি থেকে সাড়ে ৪ কোটি ডলারে নেমে এসেছে পোশাক রফতানি। সুরক্ষানীতি শুল্ক্কারোপের আগের বছর ৬৪ কোটি ডলারের পোশাক রফতানি করে বাংলাদেশ। ২০১০ সালে তৈরি পোশাকের বিশ্ববাজারে তুর্কিকে পেছনে ফেলে দ্বিতীয় প্রধান রফতানিকারক দেশের মর্যাদা পায় বাংলাদেশ। এর পরের বছরই পোশাক আমদানিতে শুল্ক্ক আরোপের সিদ্ধান্ত নেয় তুরস্ক।

রফতানিকারকরা জানান, তৈরি পোশাকের অন্যতম প্রধান রফতানিকারক দেশ হলেও অভ্যন্তরীণ বাজারের জন্য বাংলাদেশ থেকে বছরে ৬০ থেকে ৬৫ কোটি ডলারের পোশাক নেয় তুরস্ক। নতুন বাজার শ্রেণিতে সবচেয়ে বড় বাজার তুরস্কে শুল্ক্কমুক্ত সুবিধায় বাংলাদেশের পণ্য যেত। তবে সুরক্ষানীতির কারণে বাংলাদেশের রফতানি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে দু’দেশের মধ্যে মুক্তবাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) করার প্রস্তাব দেয় তুরস্ক। ঢাকায় তুরস্ক দূতাবাস ২০১২ সালে ওই প্রস্তাব দেয়। এফটিএ হলে কী ধরনের সুবিধা পাবে কিংবা অসুবিধায় পড়বে সে বিষয়গুলো যাচাই করেছে রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি)। সংস্থার ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, পর্যালোচনায় দেখা গেছে, বাংলাদেশের জন্য বেশ লাভজনক হবে এ চুক্তি। বিশেষ করে তৈরি পোশাকের বর্তমান রফতানি বাড়বে দ্বিগুণ। অন্যান্য পণ্যও সুবিধা পাবে। অথচ এফটিএর কারণে তুরস্ক থেকে খুব বেশি আমদানি হবে না। কারণ, তাদের উচ্চমূল্যের পোশাকের চাহিদা নেই এ দেশে। দেশটি থেকে লোহা, স্টিল, মেশিনারিজ ও কার্পেট বেশি আমদানি হয়ে থাকে। এর মধ্যে কার্পেট ছাড়া অন্যান্য পণ্য বাংলাদেশে উৎপাদিত হয় না। ফলে স্থানীয় শিল্প কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেনা। এ বিবেচনায় এফটিএ করার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানান ওই কর্মকর্তা।

জানতে চাইলে বিজিএমইএর পরিচালক এবং এম এস অ্যাপারেলসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আ ন ম সাইফুদ্দিন সমকালকে বলেন, এফটিএ হলে নিঃসন্দেহে পোশাক রফতানি দ্বিগুণেরও বেশি হতে বাধ্য। কারণ, তুরস্ক একসময় সবচেয়ে বড় উদীয়মান বাজার ছিল। শুল্ক্কারোপের কারণে অনেক উদ্যোক্তা এ বাজার ছেড়ে আসতে বাধ্য হয়েছেন। এখন শুল্ক্কমুক্ত সুবিধা পেলে তারা আবার ফিরবেন। তিনি বলেন, দেশটির বাজারে কী ধরনের পোশাকের বেশি চাহিদা, সে সম্পর্কে তাদের অভিজ্ঞতা আছে। ক্রেতারাও পরিচিত। ফলে খুব সহজেই দেশটিতে রফতানি বাড়ানো সম্ভব হবে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান অনুযায়ী দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যে বাংলাদেশ সুবিধাজনক অবস্থায় রয়েছে। গত বছর উভয় দেশের ১১১ কোটি ডলারের বাণিজ্যের মধ্যে বাংলাদেশ রফতানি করেছে ৯৩ কোটি ডলারের পণ্য। তৈরি পোশাকের বাইরে রফতানি তালিকায় রয়েছে পাট, পাটের সুতা, চামড়া ও সিরামিক পণ্য। অন্যদিকে তুরস্কের রফতানির পারিমাণ ছিল ১৮ কোটি ডলার। তুলা এবং বস্ত্র খাতের যন্ত্রপাতি ও নির্মাণ সামগ্রী রয়েছে এ তালিকায়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here