Home Bangla Recent কমপ্লায়েন্স বিবেচনায় এখনও সর্বোচ্চ ঝুঁকিতে বাংলাদেশের পোশাক শিল্প

কমপ্লায়েন্স বিবেচনায় এখনও সর্বোচ্চ ঝুঁকিতে বাংলাদেশের পোশাক শিল্প

কমপ্লায়েন্স বিবেচনায় বাংলাদেশের পোশাক শিল্প এখনও সর্বোচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে বলে মনে করছেন পোশাক পণ্যের মার্কিন ক্রেতা প্রতিনিধিরা। তাদের মতে, প্রথমে তাজরীন ফ্যাশনে আগুন ও রানা প্লাজা ধসের পর ২০১৩ সালে শুরু হয় দেশের পোশাক খাতের কমপ্লায়েন্স ব্যবস্থাপনার মানোন্নয়নের কাজ। এ কার্যক্রমের আওতায় গত সাড়ে তিন বছরে কারখানাগুলোর অনেক ত্রুটি সংশোধনও হয়েছে। তারপরও এশিয়ার অনেক দেশের তুলনায় বাংলাদেশে পোশাক তৈরিতে মূল্য সুবিধা বেশি হলেও কমপ্লায়েন্স বিবেচনায় বাংলাদেশ পিছিয়ে রয়েছে।

বাংলাদেশি পোশাকের সর্ববৃহৎ গন্তব্য যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংগঠন ইউনাইটেড স্টেটস ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন (ইউএসএফআইএ) সমপ্রতি বিভিন্ন দেশের পোশাক খাতের কমপ্লায়েন্স নিয়ে একটি জরিপ চালিয়েছে। ইউএসএফআইএ’র পক্ষে জরিপটি পরিচালনা করে ইউনিভার্সিটি অব ডেলাওয়ারের ফ্যাশন অ্যান্ড অ্যাপারেল স্টাডিজ বিভাগ। ফ্যাশন পণ্যের মার্কিন ক্রেতা প্রতিনিধিদের (সোর্সিং এঙ্িিকউটিভ) ওপর চালানো জরিপের ভিত্তিতে ‘২০১৭ ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রি বেঞ্চমার্ক স্টাডি’ শীর্ষক প্রতিবেদনটি গত সপ্তাহে প্রকাশ করা হয়েছে। ওই প্রতিবেদনেই বাংলাদেশের পোশাক খাতে কমপ্লায়েন্স ঝুঁকির বিষয়টি উঠে এসেছে। প্রতিবেদনে মার্কিন বাজারে পোশাকপণ্য সরবরাহকারী দেশগুলোকে নিয়ে একটি সোর্সিং রেটিং দেখানো হয়েছে। দেশগুলো থেকে সরবরাহের গতি, সোর্সিং ব্যয় ও কমপ্লায়েন্স ঝুঁকি এ তিনটি বিষয়ের ভিত্তিতে রেটিংটি করা হয়েছে। সোর্সিং রেটিংয়ে মোট ১১টি দেশের অবস্থান দেখানো হয়েছে। আর রেটিংয়ের মান প্রকাশ করা হয়েছে এক থেকে পাঁচ তারকা দিয়ে। গড়ের চেয়ে ভালো অবস্থান বোঝাতে ব্যবহার করা হয়েছে পাঁচ তারকা। এক তারকা দিয়ে বোঝানো হয়েছে গড়ের চেয়ে খারাপ অবস্থানকে।

জরিপ প্রতিবেদনে কমপ্লায়েন্স ঝুঁকি সূচকে বাংলাদেশের রেটিং এক তারকা, যার অর্থ হলো সর্বোচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ। জরিপের অধীন আর কোনো দেশের পোশাক খাতই এ সূচকে এক তারকা পাইনি। কমপ্লায়েন্স ঝুঁকি সূচকে বাংলাদেশের উপরে থাকা দেশগুলোর মধ্যে ভারত ও কম্বোডিয়ার রেটিং দুই তারকা। একই সূচকে শ্রীলঙ্কা, ইন্দোনেশিয়া, ভিয়েতনাম ও চীনের রেটিং তিন তারকা।

কমপ্লায়েন্স নিয়ে জরিপের এ ফলাফলের সঙ্গে একমত নন পোশাক খাতের ব্যবসায়ীরা। তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ’র সহ-সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বলেন, যে কোন কমপ্লায়েন্স ইস্যু ও প্রেক্ষাপট বিবেচনায় বাংলাদেশ কোনভাবেই সর্বোচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ উৎস হতে পারে না। রানা প্লাজা ধসের আগের ও পরের বাংলাদেশ এক নয়। আমার মনে হয়, জরিপকারীরা বাংলাদেশের সর্বশেষ অগ্রগতি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল নন।

এ বিষয়ে নিট পোশাক রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিকেএমইএ সহ-সভাপতি মনসুর আহমেদ বলেন, বাংলাদেশ থেকে পোশাক পণ্য কিনতে ক্রেতা প্রতিনিধিদের আস্থা আগের চেয়ে ভালো হওয়ার কথা। কারণ এখন কমপায়েন্স বিষয়ে জানতে হলে অ্যালায়েন্স ও অ্যাকর্ড রয়েছে। তারাই বলছে আমাদের অগ্রগতি ভালো। তাই কোনভাবেই মার্কিন ক্রেতা প্রতিনিধি ও নির্বাহীদের মতামত গ্রহণযোগ্য নয়।

জরিপে উঠে আসা মতামতের ভিত্তিতে প্রতিবেদনের প্রথম ভাগেই বলা হয়েছে, মার্কিন ফ্যাশন প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে এখন পর্যন্ত চীনই পোশাক পণ্যের শীর্ষ উৎস। যদিও চীনের বিকল্প খোঁজা অব্যাহত রয়েছে। আগামী দুই বছরে উৎস হিসেবে ভিয়েতনাম ও বাংলাদেশ থেকে সোর্সিং প্রবৃদ্ধির আশা থাকলেও তার গতি হবে অনেক মন্থর।

জরিপে অংশগ্রহণকারী নির্বাহীরা জানিয়েছেন, বাংলাদেশ থেকে সোর্সিং সমপ্রসারণের বিষয়ে তারা সতর্ক অবস্থান নিয়েছেন। মাত্র ৩২ শতাংশ নির্বাহী আগামী দুই বছরে বাংলাদেশ থেকে সোর্সিং বাড়ানোর পক্ষে মত দিয়েছেন। তাদের মতে, ২০১৭ সালে সোর্সিং করার ক্ষেত্রে শ্রমব্যয় সবচেয়ে গুরুত্ব পাবে। এক্ষেত্রে তাদের উদ্বেগের বিষয় হলো শ্রমব্যয় বেড়ে যাওয়া। মার্কিন বাজারের মূল সরবরাহকারী দেশ চীন, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, শ্রীলঙ্কা ও বাংলাদেশে দ্রুতগতিতে শ্রমব্যয় বাড়ছে এমন উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন নির্বাহীরা। পণ্য সরবরাহকারী হিসেবে এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় প্রতিযোগী চীন। প্রতিযোগীদের মধ্যে পাঁচ ধরনের পণ্যে ভিয়েতনাম এবং মাত্র দুই ধরনের পণ্যে বাংলাদেশ শীর্ষ সরবরাহকারী বলে জরিপে বেরিয়ে এসেছে।

মার্কিন নির্বাহীদের মতামতে বড় সোর্সিং গন্তব্য হিসেবে বিভিন্ন দেশের চলতি ও গত বছরের অবস্থান উঠে এসেছে। বাংলাদেশ এক্ষেত্রে পিছিয়েছে। সোর্সিং গন্তব্য হিসেবে ২০১৬ সালে পঞ্চম অবস্থানে থাকলেও ২০১৭ সালে সপ্তম অবস্থানে নেমে এসেছে বাংলাদেশ। ২০১৬ সালে জরিপে অংশ নেয়া ৭০ শতাংশ নির্বাহী বাংলাদেশ থেকে পণ্য কিনতেন। ২০১৭-তে অংশগ্রহণকারীদের ৬১ শতাংশ বাংলাদেশ থেকে পণ্য কিনছেন। ২০১৪ ও ২০১৫ সালের জরিপে অংশ নেয়া নির্বাহীরা বাংলাদেশের বিষয়ে আরও আশাবাদী ছিলেন। এবার তারা জানিয়েছেন, মূল্য সুবিধা থাকলেও সর্বোচ্চ কমপ্লায়েন্স ঝুঁকির কারণে ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো বাংলাদেশ থেকে ক্রয় বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত থেকে পিছিয়ে এসেছে।

বাংলাদেশ থেকে সোর্সিং কস্ট বা ব্যয়ের বিষয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ সবচেয়ে প্রতিযোগিতামূলক মূল্য প্রস্তাব করে থাকে। প্রতিযোগিতামূলক মূল্য প্রস্তাবকারী দেশের তালিকায় এশিয়ার আরও কিছু সরবরাহকারীর পাশাপাশি আছে আফ্রিকার কয়েকটি দেশ। এর বিপরীতে সবচেয়ে বেশি ব্যয়ের সোর্সিং গন্তব্যের মধ্যে আছে যুক্তরাষ্ট্র, মেঙ্েিকা এবং সিএএফটিএ-ডিআর (মধ্য আফ্রিকার দেশগুলোর মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চল ডোমিনিকান রিপাবলিক)।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here