Home বাংলা নিউজ কাতারে তৈরি পোশাকের নতুন বাজার

কাতারে তৈরি পোশাকের নতুন বাজার

apparel

দীর্ঘদিনের সুসম্পর্কের সূত্র ধরে কাতারসহ উপসাগরীয় দেশগুলোতে তৈরি পোশাকের নতুন বাজার প্রত্যাশা করছে বাংলাদেশ। তেল সমৃদ্ধ দেশ কাতার বাংলাদেশে পেট্রো-কেমিকেলভিত্তিক কারখানা স্থাপনের মাধ্যমে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরও জোরদার করতে পারে বলে ঢাকায় কাতারের রাষ্ট্রদূতকে বলেছেন সংশ্লিষ্টজনেরা।

বৃহস্পতিবার ঢাকায় নিট পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএ আয়োজিত ‘প্রমোশন অফ নিটওয়্যার এঙ্পোর্ট ইন কাতার’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে বিকেএমইএ নেতারা ছাড়াও ঢাকায় নিযুক্ত কাতারের রাষ্ট্রদূত আহমেদ মুহামেদ আল-দেহায়মি, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান কাজী এম আমিনুল ইসলাম, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) ভাইস চেয়্যারম্যান মাফরুহা সুলতানা উপস্থিত ছিলেন।

বিডা চেয়ারম্যান বলেন, মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ হিসেবে উপসাগরীয় দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের সুসম্পর্ক রয়েছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় হচ্ছে কাতারসহ এ অঞ্চলের দেশগুলোর সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক অতোটা জোরালো নয়। বাংলাদেশে কাতারের বিনিয়োগ এবং দেশটিতে বাংলাদেশি পোশাক পণ্য রপ্তানির মধ্যমে বাণিজ্যিক সম্পর্ক সুদৃঢ় করা সম্ভব।

সুদূর পাশ্চাত্যের দেশগুলোর সঙ্গে বড় বাণিজ্যের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে ভবিষ্যতে মধ্যপ্রাচ্য ও প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ক জোরদারের পরিকল্পনার কথাও জানান তিনি। দক্ষিণ এশিয়ার দেশ হিসেবে বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরে ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকার দেশগুলোর সঙ্গে তৈরি পোশাকসহ অন্য পণ্য রপ্তানি করছে। এখন বাংলাদেশের টার্গেট হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যে নিকটবর্তী দেশগুলোর সঙ্গে বাণিজ্য বাড়ানো। আমরা এমন একটি প্রস্তাবনা দাঁড় করাতে পারি যাতে দুই দেশই লাভবান হবে। দেশের তৈরি পোশাক খাতের সক্ষমতার কথা তুলে ধরে আমিনুল ইসলাম বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের এক জরিপে বিশ্বের শীর্ষ ১০ গ্রিন পোশাক কারখানার মধ্যে সাতটি বাংলাদেশে রয়েছে। পোশাক রপ্তানির ভলিউমের দিক থেকে বাংলাদেশ বিশ্বে দ্বিতীয়, কিন্তু সক্ষমতায় প্রথম।

আমরা হাতে হাত মেলাতে পারি, বাংলাদেশ ওষুধ শিল্পে কাতারে বিনিয়োগ করতে পারে। আর কাতার চাইলে বাংলাদেশে পেট্রো কেমিকেল ইন্ডাস্ট্রিজসহ এ ধরনের শিল্প প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করতে পারে।

রাষ্ট্রদূত দেহায়মি বলেন, ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসারে বাংলাদেশ সরকার ও ব্যাবসায়ীদের প্রত্যাশার কথা তিনি দেশীয় ব্যবসায়ীদের কাছে তুলে ধরবেন। তারা এদেশে এসে সরেজমিন ঘুরে দেখে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেবেন। বাংলাদেশ ও কাতারের মধ্যে দীর্ঘ দিনের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, এ সম্পর্ক ভবিষ্যতে আরও এগিয়ে যাবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্ব বাংলাদেশ ভবিষ্যতে অনেক দূর এগিয়ে যাবে।

এক বছরেরও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশে অবস্থানের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে দুহাইমি বলেন, এক বছর আগেও কাতারের কর্মকর্তারা এদেশ সফর নিয়ে অনেক সংশয়ে ছিলেন। আমি তাদের অভয় দিয়ে নিয়ে আসতে শুরু করি। এখন প্রায় প্রতিদিনই কাতারের প্রতিনিধিরা বাংলাদেশে আসছেন। বিশ্বকাপ ফুটবল-ওয়ার্ল্ড এঙ্পোকে ঘিরে আশাবাদী বিকেএমইএ : অনুষ্ঠানে বিকেএমইএর প্রথম সহ-সভাপতি এ এইচ আসলাম সানি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে বাজার সম্প্রসারণের বিষয়ে ব্যবসায়ীদের নির্দেশনা দেন। তারই আলোকে আগামী ২০২০ সালে দুবাই ওয়ার্ল্ড এঙ্পো এবং কাতারে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া ফুটবল বিশ্বকাপ ২০২২-কে মূল ভিত্তি হিসেবে গ্রহণ করে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে বাজার সম্প্রসারণের কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণের এই প্রয়াস। এই দুটি মিলনমেলায় সারা বিশ্ব হতে প্রায় ২৬ মিলিয়ন পর্যটক ও ক্রেতা একত্রিত হবে। তার পাশাপাশি পারস্য উপসাগরীয় এই অঞ্চলের দেশগুলোতে অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য ব্যাপক হারে বিনিয়োগ বৃদ্ধি করা হচ্ছে। সেখানে পোশাকের যে বাজার সৃষ্টি হচ্ছে তাতে বিশ্বের প্রথম সারির দেশ হিসাবে বাংলাদেশ প্রবেশাধিকার প্রত্যাশা করে।

রাষ্ট্রদূতকে মুসলিম ভাতৃপ্রতীম দুই দেশের শুল্কবাধা দূর করে বাণিজ্যের পথ সুগম করার উদ্যোগ নিতে অনুরোধ জানান বিকেএমইএর এই নেতা। তিনি বলেন, মধ্যপ্রাচ্যের অন্য দেশের মতো কাতার বাংলাদেশের নিট পণ্য রপ্তানি বৃদ্ধির ক্ষেত্রে সম্ভাবনাময় একটি দেশ। কিন্তু আন্তর্জাতিক বাণিজ্য পরিচালনার ক্ষেত্রে ৫ শতাংশ শুল্ক বাধা কাতারে রপ্তানি বৃদ্ধির ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে। আশা করছি, রাষ্ট্রদূত এ বিষয়ে উদ্যোগী হবেন।

 

বিকেএমইএ’র আরেক সহ-সভাপতি মনসুর আহমেদ বলেন, বাংলাদেশ ব্রাজিল বিশ্বকাপের অনুশীলন জার্সি সরবরাহ করেছে। কাতার বিশ্বকাপেও এ ধরনের সুযোগ আশা করে।

আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড এডিডাস, পুমা, নিকিসহ এ ধরনের কোম্পানির পণ্য বাংলাদেশে উৎপাদন হয় জানিয়ে তিনি বলেন, অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ মুসলিম দেশ হিসাবে কাতার চাইলে এ ধরনের আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড সৃষ্টি করতে পারে। সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশে এর উৎপাদন কেন্দ্র করা হলে দুই দেশই লাভবান হবে।

অনুষ্ঠানে বিকেএমইএর পক্ষ থেকে কাতার-বাংলাদেশ দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বিষয়ে সংক্ষিপ্ত বিবরণ, সম্ভাবনা ও সমস্যা তুলে ধরা হয়। এতে বলা হয়, কাতার বাংলাদেশ থেকে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৪৭ দশমিক ৭২ মিলিয়ন ডলার মূল্যের পণ্য আমদানি করে, যার মধ্যে নীটওয়্যার আমদানির পরিমাণ মাত্র এক দশমিক ৭৫ মিলিয়ন ডলার। অথচ দেশটি একই সময়ে বিশ্ববাজার থেকে ২৬৭ দশমিক ৬২ মিলিয়ন ডলার মূল্যের নীট পণ্য আমদানি করে।

বিকেএমইএ’র সহ-সভাপতি (অর্থ) জিএম ফারুক, পরিচালক এমআই সিদ্দিক, মোস্তফা জামাল পাশা, মো. হুমায়ুন কবির খান, সৈয়দ একিউএম জাহিদ, আলমগীর কবির অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।