Home বাংলা নিউজ গার্মেন্টস শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়ন নিবন্ধনসহ প্যাকেজ প্রোগ্রাম

গার্মেন্টস শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়ন নিবন্ধনসহ প্যাকেজ প্রোগ্রাম

২৪ এপ্রিল রানা প্লাজার চার বছর পূর্তি

trade union

গার্মেন্টস শ্রমিকদের জন্য নিরাপদ কর্মপরিবেশ তৈরি ও শ্রম অধিকার রক্ষায় প্যাকেজ প্রোগ্রাম গ্রহণ করা হতে পারে। এ প্রোগ্রামের আওতায় কারখানা ও ভবনের সুরক্ষায় অগ্নিনিরপাত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার, কারখানা পরিদর্শন, নিয়মিত বেতন-ভাতা, ওভারটাইম পরিশোধে মালিকদের ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি এবং ট্রেড ইউনিয়নের নিবন্ধন কার্যক্রম দ্রুত করার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। আগামী ২৪ এপ্রিল এ যাবতকালের সবচেয়ে ভয়াবহ রানা প্লাজা দুর্ঘটনার চার বছরপূর্তি হতে যাচ্ছে। এ দিনটি সামনে রেখে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ বড় ক্রেতা দেশগুলো ইতোমধ্যে শ্রম অধিকারের বিষয়টি সামনে এনে এর অগ্রগতি জানতে চাচ্ছে। সরকার ও উদ্যোক্তাদের পক্ষ থেকে চার বছরের অগ্রগতি তুলে ধরা হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এ তথ্য।

জানা গেছে, পোশাক খাতের শ্রম অধিকার রক্ষায় এ পর্যন্ত প্রায় ৩০০ কারখানায় ট্রেড ইউনিয়নের নিবন্ধন করা হয়েছে। এছাড়াও কারখানা ভবনের সুরক্ষা ও অগ্নিনিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পোশাক কারখানা পরিদর্শন করা হচ্ছে। তবে ক্ষুদ্র ও মাঝারি মানের শিল্প-কারখানাগুলো কমপ্লায়েন্স ইস্যুতে এখনও অনেক পিছিয়ে রয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এসব কারখানায় নিয়মিত বেতন-ভাতা নিয়েও সমস্যা রয়েছে। একই সঙ্গে কিছু শ্রমিক সংগঠনের বিতর্কিত কর্মকা-ের কারণে এ শিল্পে প্রায়ই অস্থিরতা তৈরি হচ্ছে। সম্প্রতি আশুলিয়ায় কয়েক দফায় শ্রম অসন্তোষ তৈরি করা হয়। এর মূলে বিতর্কিত শ্রমিক সংগঠনগুলোর বড় ধরনের কারসাজির অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এ বাস্তবতায় কারখানার মালিকপক্ষ ও শ্রমিকদের মধ্যে বিরোধ নিরসনের লক্ষ্যে গার্মেন্টস খাতের জন্য ত্রিপক্ষীয় একটি পরামর্শক পরিষদ গঠন করেছে সরকার। আগামী ৪ এপ্রিল মঙ্গলবার এ কমিটির প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। গার্মেন্টসবিষয়ক ত্রিপক্ষীয় ওই পরামর্শক পরিষদে (টিসিসি) সরকার, মালিকপক্ষ ও শ্রমিকপক্ষের ২০ জন প্রতিনিধি কাজ করছেন। গার্মেন্টস শিল্পসম্পর্কিত বিরোধ নিষ্পত্তির লক্ষ্যে এ পরিষদ সরকারকে সহযোগিতা করবে। এছাড়াও এ বিষয়ে বিভিন্ন নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্ত গ্রহণেও সহযোগিতা করবে। শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু ওই পরিষদের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে শ্রম মন্ত্রণালয়ের এক উর্ধতন কর্মকর্তা জনকণ্ঠকে বলেন, গার্মেন্টসসংক্রান্ত পরামর্শক কমিটির প্রথম সভা আহ্বান করা হয়েছে। রানা প্লাজা দুর্ঘটনার চার বছর সামনে রেখে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা আইএলও, ইইউ, আমেরিকা এবং শ্রম সংগঠনগুলো শ্রম অধিকার রক্ষা ও কারখানার কর্মপরিবেশ নিয়ে অগ্রগতি জানতে চাচ্ছে। তিনি বলেন, গত চার বছরে শ্রম অধিকার রক্ষায় বাংলাদেশের যথেষ্ট অগ্রগতি হয়েছে। জিএসপি ইস্যুতে আমেরিকার দেয়া ১৬টি শর্ত বেশ ভালভাবে পূরণ করতে সক্ষম হয়েছে বাংলাদেশ। কিন্তু তারপরও দেশটি জিএসপি পুনর্বহাল না করে নতুন নতুন শর্ত জুড়ে দিচ্ছে। গার্মেন্টসসংক্রান্ত পরামর্শক কমিটির প্রথম সভায় এ বিষয়গুলো আলোচনা করা হবে। এছাড়া আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়া হতে পারে পরামর্শক কমিটির বৈঠকে।

জানা গেছে, সর্বশেষ গত ডিসেম্বরে আশুলিয়ায় হঠাৎ করে মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে শ্রমিকদের কর্মবিরতি শুরু করা ও এর পরিপ্রেক্ষিতে শ্রমিকদের চাকরিচ্যুতি, মামলা ও আটকের পর এ ইস্যুটি আবার সামনে এসেছে। কিছু ক্ষেত্রে শ্রমসংক্রান্ত বিরোধ নিষ্পত্তিতে আইনগত প্রক্রিয়া অনেক দীর্ঘ। আবার কিছু ক্ষেত্রে এ বিষয়ে বিদ্যমান শ্রম আইনে স্পষ্টভাবে কিছু বলাও নেই। কেননা, এখানে বেশিরভাগ কারখানায় ট্রেড ইউনিয়ন নেই। ওই ঘটনার পর শ্রমিকদের হয়রানি করা হচ্ছে বলে আন্তর্জাতিকভাবে ব্যাপক প্রচারণা পায়। বিশেষ করে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি গার্মেন্টস মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ আয়োজিত এ্যাপারেল সামিটকে ফ্লপ করাতে চেষ্টা করার অভিযোগ ওঠে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বেশ কয়েকটি শ্রমিক সংগঠনের বিরুদ্ধে। এ নিয়ে অস্বস্তিকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয় সরকার ও মালিকপক্ষকে। যদিও শেষ পর্যন্ত সফলভাবেই শেষ হয়েছে এ্যাপারেল সামিট।

শ্রম অধিকার রক্ষায় তাগিদ দিচ্ছে ইইউ ॥ বাংলাদেশের রফতানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলে (ইপিজেড) অবস্থিত কারখানাগুলোয় ট্রেড ইউনিয়ন চেয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। এর জবাবে বাংলাদেশ বলেছে, ট্রেড ইউনিয়ন নয়, সেখানে ওয়ার্কার্স ওয়েলফেয়ার এ্যাসোসিয়েশন হবে। তবে এ ওয়েলফেয়ার এ্যাসোসিয়েশন যাতে শ্রমিকদের দাবি-দাওয়া নিয়ে কথা বলতে পারে সে অধিকার থাকবে। সম্প্রতি সচিবালয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সফররত সাত সদস্যের প্রতিনিধি দলের আলাপকালে এ বিষয়ে আলোচনা হয়। ইইউ’র প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে ছিলেন আরনে লিটজ। এ প্রসঙ্গে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, ইইউ শ্রমিকদের বেতন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। তাদের জানানো হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন ক্ষমতায় আসেন তখন শ্রমিকদের সর্বনিম্ন বেতন ছিল ১৬০০ টাকা। সেখান থেকে বাড়িয়ে প্রথমে সর্বনিম্ন বেতন ৩০০০ হাজার করা হয়। পরবর্তীতে ২২৩ শতাংশ বাড়িয়ে সর্বনিম্ন বেতন করা হয় ৫৩০০ টাকা। তবে ওভারটাইম ও অন্যান্য ভাতা মিলিয়ে প্রত্যেক মাসে ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা পাচ্ছেন শ্রমিকরা। তবে কোন কোন ক্ষেত্রে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা শ্রমিকরা আয় করছেন। প্রতি বছর ৫ শতাংশ হারে ইনক্রিমেন্ট দেয়া হয়। তিনি বলেন, ইইউ দলকে এসব তথ্য জানানো হয়েছে। তারা বিষয়টিকে ইতিবাচক বলেছে। তিনি বলেন, ইইউ’র সঙ্গে আমাদের কোন সমস্যা হবে না। ছোটখাটো মতভিন্নতা আলোচনার মাধ্যমে দূর করা যাবে। রানা প্লাজা ধসের পর সরকার যেসব উদ্যোগ নিয়েছে সেগুলোর ভূয়সী প্রসংসা করেছে ইইউ।

এদিকে, ব্রাসেলসে অবস্থিত ইউরোপীয় ইউনিয়নে বাংলাদেশ দূতাবাসের কাউন্সিলর (কমার্স) এবং কমার্স উইংয়ের প্রধান মোহাম্মদ জহিরুল কাইয়ুম সম্প্রতি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো এক ই-মেইল বার্তায় জানিয়েছেন, ইউরোপীয় কমিশনের সঙ্গে ব্রাসেলস দূতাবাস নিয়মিত যোগাযোগ রাখছে। তবে কমিশন একটি বার্তাই বারবার দিচ্ছে, তা হলো- শ্রমিক অধিকার রক্ষা ও তাদের ট্রেড ইউনিয়ন করার সুযোগ বাংলাদেশ কবে নাগাদ কিভাবে বাস্তবায়ন করবে সে সম্পর্কে একটি পরিকল্পনা বা রোডম্যাপ গ্রহণ করা। আগামী মে মাসে ঢাকায় অনুষ্ঠেয় সাসটেইনেবিলিটি কমপ্যাক্টের বৈঠক ও জুনে সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় অনুষ্ঠেয় বিশ্ব শ্রম সংস্থার (আইএলও) সম্মেলনে এ সংক্রান্ত অগ্রগতি তুলে ধরার কথাও তাদের পক্ষ থেকে জাননো হয়েছে।