Home Bangla Recent চামড়ার ব্যবসা ভালো যায়নি এ মৌসুমে

চামড়ার ব্যবসা ভালো যায়নি এ মৌসুমে

দেশের সবচেয়ে বড় চামড়ার বাজার নাটোরের চকবৈদ্যনাথে এবার ঈদুল আজহাকে ঘিরে বেচাকেনা ভালো হয়নি। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বলছেন, ঢাকার ট্যানারি মালিকেরা রীতি অনুযায়ী এ বছর ঈদের আগে টাকা পরিশোধ করেননি। তাই পুঁজির অভাবে তাঁরা কোরবানির চামড়া কিনতে পারেননি। অনেকে ধারকর্জ করে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও ফড়িয়াদের কাছ থেকে যে অল্পসংখ্যক চামড়া কিনেছেন, তা-ই বাজারে কেনাবেচা হয়েছে।

ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, এ বছর ট্যানারি মালিকেরা এ বাজার থেকে চামড়া কেনা শুরু করতেও কমপক্ষে দুই সপ্তাহ দেরি করেছেন। এবার কাঁচা চামড়ার দাম অন্যাবারের চেয়ে তুলনামূলক কম ছিল।

নাটোর চামড়া ব্যবসায়ী গ্রুপের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, চকবৈদ্যনাথে প্রায় আড়াই শ ব্যবসায়ী রয়েছেন। দেশের উত্তর ও দক্ষিণ অঞ্চলের ১৬টি জেলার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা চকবৈদ্যনাথ চামড়া বাজারে কাঁচা চামড়া বিক্রি করেন। ঈদুল আজহা ঘিরে এ বাজারে চামড়া বেচাকেনা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়ে যায়। ট্যানারি মালিকেরা গিয়ে সেখানকার আড়তদারদের মাধ্যমে এসব চামড়া কিনে ঢাকায় আনেন। ঈদের পর এক মাস পর্যন্ত এ বাজার জমজমাট থাকে।

সাধারণত প্রথম সপ্তাহে কাঁচা চামড়া কেনেন আড়তদারেরা। পরের তিন সপ্তাহ ধরে ট্রাকে করে চামড়া ঢাকায় পাঠানো হয়। দেরি করলেও গত মাসের শেষ দিক থেকে ট্যানারি মালিকেরা চামড়া কিনতে শুরু করেছেন। এতে ব্যবসায়ীদের মধ্যে কিছুটা হলেও স্বস্তি ফিরেছে। কিন্তু চামড়ার বেচাকেনা আগের মতো জমেনি।

ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেন বলেন, গত কোরবানির মৌসুমে চামড়া বিক্রি বাবদ তিনি ঢাকার কয়েকজন ট্যানারি মালিকের কাছ থেকে দুই কোটি টাকারও বেশি পাবেন। ব্যবসায়িক রীতি অনুযায়ী এই বকেয়া টাকা কোরবানির ঈদের আগের সপ্তাহে পরিশোধ করার কথা। কিন্তু তাঁরা টাকা পরিশোধ করেননি। ফলে গতবারের তুলনায় তিনি এবার অর্ধেক পরিমাণ চামড়া কিনতে পেরেছেন।

বাজারের ফড়িয়া ব্যবসায়ী রমজান আলী বলেন, তিনি স্থানীয় একজন আড়তদারের কাছে ২০ লাখ টাকা পাবেন। ওই আড়তদার জানিয়েছেন, ট্যানারি মালিক বকেয়া পরিশোধ করেননি, তাই আড়তদারও তাঁর টাকা পরিশোধ করতে পারবেন না।

বকেয়া আদায় না হওয়ায় এবং ব্যবসায় মন্দা দেখা দেওয়ায় চামড়া ব্যবসায়ীদের অনেকেই অন্য পেশায় চলে যাচ্ছেন। নাটোর চামড়া ব্যবসায়ী গ্রুপের সদস্য বাবু ইসলাম বলেন, ‘আমি একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। দুই বছর ধরে আমার ২০ লাখ টাকা বকেয়া পড়ে আছে। রাগ করে এবার চামড়া কেনাবেচা করিনি। যা পুঁজি ছিল, তা দিয়ে একটা পুরোনো প্রাইভেট কার কিনে নিজেই ভাড়ায় চালাচ্ছি। কোনো রকমে সংসার চলে যাচ্ছে।’

সংগঠনটির সহসভাপতি লুৎফর রহমান বলেন, সারা দেশে যে পরিমাণ চামড়া বাজারে আসে, তার ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ বেচাকেনা হয় চকবৈদ্যনাথে। অথচ এখানকার ব্যবসায়ীদের প্রতি কেউ নজর দেন না। তিনি বলেন, ‘সরকার কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে কাঁচা চামড়া কেনার জন্য বিভিন্ন ব্যাংকের মাধ্যমে ঢাকার ট্যানারি মালিকদের ঋণ দেয়। সেই টাকা দিয়ে নগদে আমাদের কাছ থেকে চামড়া কেনার কথা। কিন্তু তাঁরা চামড়ার দাম বাকি রাখেন বছরের পর বছর। এ সমস্যা সমাধানের জন্য সরকারের মাঠ পর্যায়ের ব্যবসায়ীদের সরাসরি ঋণ দেওয়া উচিত।’

সংগঠনের সভাপতি শরিফুল ইসলামও একই দাবি জানান। তিনি বলেন, ‘আমাদের দাবি মানা না হলে চামড়া ব্যবসা টিকবে না। আমরা চামড়ার ব্যবসা ছেড়ে অন্য ব্যবসায় চলে যেতে বাধ্য হব।’

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here