Home Bangla Recent চার দশকে সবচেয়ে কম প্রবৃদ্ধি পোশাকশিল্পে

চার দশকে সবচেয়ে কম প্রবৃদ্ধি পোশাকশিল্পে

বাংলাদেশের পোশাকশিল্পের ইতিহাস কমবেশি প্রায় চার দশকের। ১৯৭৮ সালে মাত্র ১২ হাজার ডলারের পোশাক রপ্তানি শিল্প আজ ২৮ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে। তবে প্রতিবছরই বাড়ন্ত এই পোশাকশিল্পে এবার ভাটার টান পড়েছে। গত চার দশকের মধ্যে এবারই সবচেয়ে কম প্রবৃদ্ধি হতে যাচ্ছে দেশের প্রধান রপ্তানি খাতটিতে। গত মে মাস পর্যন্ত চলতি বছরের ১১ মাসে এ খাতে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি হয়েছে মাত্র ২.১৬ শতাংশ, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৬.৪৩ শতাংশ কম। চলতি অর্থবছরের আর বাকি এক মাস। মাত্র এক মাসে রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা ৩০ দশমিক ৩৭৯ বিলিয়ন ডলার লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের কোনো সম্ভাবনা দেখছেন না পোশাক খাতসংশ্লিষ্টরা। ফলে পোশাক খাতে এই হঠাৎ ছন্দপতনে ২০২১ সালের স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তিতে ৫০ বিলিয়ন ডলারের স্বপ্নপূরণেও কিছুটা ধাক্কা খেয়েছে বলে মনে করছেন তাঁরা।

তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির পর ইউরোপ ও আমেরিকার ক্রেতাদের সংগঠন অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্স বাংলাদেশের কারখানাগুলোতে যে সংস্কার কর্মসূচি হাতে নেয় সেটার সঙ্গে তাল মেলাতে না পেরে গত তিন বছরে প্রায় ১২৫০টি কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। এ ছাড়া কমপ্লাইয়েন্সের শর্ত অনুযায়ী অবকাঠামোগত উন্নয়নের কাজ করতে গিয়ে অনেক কারখানার স্বাভাবিক উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। সে কারণে স্বাভাবিকভাবেই উৎপাদন ক্ষমতা কিছুটা হলেও হ্রাস পেয়েছে। এ সব কিছুর প্রভাব পড়েছে এবারের তৈরি পোশাক রপ্তানিতে।

ইপিবি সূত্রে জানা যায়, মে পর্যন্ত চলতি অর্থবছরে ১১ মাসে তৈরি পোশাকশিল্পের জন্য লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ২৭ দশমিক ৩৮৪ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে রপ্তানি হয়েছে ২৫ দশমিক ৬২৪ বিলিয়ন ডলার। লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ঘাটতি এক দশমিক ৭৬ বিলিয়ন ডলার কম। গত বছর একই সময়ে রপ্তানি হয়েছিল ২৫ দশমিক ৮৩ বিলিয়ন ডলার। ফলে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২.১৬ শতাংশ। তৈরি পোশাকশিল্পে গত চার দশকে এটাই সবচেয়ে কম প্রবৃদ্ধির রেকর্ড। চলতি অর্থবছর নিয়ে সম্ভবত দ্বিতীয়বারের মতো রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ হচ্ছে তৈরি পোশাক খাত। এর আগে শুধু ২০১৪-১৫ অর্থবছরে রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৫.২২ শতাংশ কম হয়েছিল।

এর মধ্যে সবচেয়ে বড় ধাক্কা খেয়েছে ওভেন খাত। এ খাতে ১৩ দশমিক ১১৯ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি করে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১০.২১ শতাংশ কম প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এমনকি গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে দশমিক ৩৩ শতাংশ কম রপ্তানি হয়েছে এ খাতে।

এ প্রসঙ্গে প্যাসিফিক জিন্স গ্রুপের পরিচালক সৈয়দ মোহাম্মদ তানভীর কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বাংলাদেশের পোশাকশিল্পের এখন ক্রান্তিকাল চলছে। অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্সের পর্যবেক্ষণের কারণে অনেক কারখানা বন্ধ হয়েছে।

আবার অনেক কারখানা নিজেকে কমপ্লাইয়েন্স করতে গিয়ে স্বাভাবিক উৎপাদন অব্যাহত রাখতে পারেনি। এ সব কিছুর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে রপ্তানিতে। ’

তবে আগামী অর্থবছরেই পোশাক খাত আবার ঘুরে দাঁড়াবে দাবি করে বিজিএমইএর এই পরিচালক বলেন, ‘সময় ও অর্থ ব্যয় হলেও অনেক কারখানা নিজেদের গুছিয়ে নিয়েছে। আশা করছি আগামী অর্থবছরেই এর সুফল দেখা যাবে।’

রপ্তানি প্রবৃদ্ধি কম হওয়ার জন্য বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দাকেও কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন বিজিএমইএর সাবেক প্রথম সহসভাপতি এবং ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ফোরাম, চট্টগ্রামের সভাপতি আবু তৈয়ব। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন কারণেই বিশ্ব অর্থনীতি খুব একটা ভালো না। ক্রেতারাও পোশাক কম কিনছে। যারা আগে এক লাখ পিস পোশাক কিনতো তারা হয়তো এখন ৭০ হাজারের অর্ডার দিচ্ছে।’

রপ্তানি বাড়াতে নতুন বাজারের খোঁজ করার পরামর্শ দেন বিজিএমইএর আরেক সাবেক প্রথম সহসভাপতি এবং বাংলাদেশ-মিয়ানমার চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি এস এম নূরুল হক। এ প্রসঙ্গে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ইউরোপ এবং আমেরিকার বাজার নির্দিষ্ট। এখানে আর খুব বেশি বাজার বাড়ার সম্ভাবনা নেই। তা ছাড়া এসব বাজারে প্রতিযোগিতাও বেশি। বাংলাদেশকে এখন নতুন নতুন বাজার সৃষ্টি করতে হবে।’

তিনি বলেন, রাশিয়া অনেক বড় বাজার, কিন্তু সেখানে আমাদের রপ্তানি খুব বেশি নয়। আমাদের পরমাণু বিদ্যুেকন্দ্রের কাজ পেয়েছে রাশিয়া। আমরা সে সময় যদি সে দেশে পোশাক রপ্তানিতে ডিউটি ফ্রি সুবিধার শর্ত জুড়ে দিতে পারতাম। এ ছাড়া চীনও পোশাক আমদানির দিকে ঝুঁকছে। আমরা সেই বাজারের ব্যাপারেও এখন থেকেই উদ্যোগী হতে পারি।’

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here