Home Bangla Recent জার্মানিতেই টিকে থাকল পোশাকের রপ্তানি প্রবৃদ্ধি

জার্মানিতেই টিকে থাকল পোশাকের রপ্তানি প্রবৃদ্ধি

যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে নেতিবাচক ধারা

জার্মানিতে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছিল ৪ দশমিক ৬৫ বিলিয়ন ডলার। কিন্তু সমাপ্ত অর্থবছরে এই খাতে জার্মানিতে পণ্য রপ্তানি হয়েছে ৫ দশমিক ১৩ বিলিয়ন ডলার, যা আগের অর্থবছরের চেয়ে ১০ দশমিক ৩৬ শতাংশ বেশি। রপ্তানিতে জার্মানির এই প্রবৃদ্ধি দিয়েই তৈরি পোশাক খাত ২০১৬-১৭ অর্থবছরে কোনোমতে আগের অর্থবছরের রপ্তানিকে টপকে যেতে পেরেছে। বাংলাদেশের পোশাকশিল্পের সবচেয়ে বড় বাজার যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি চিত্র হতাশ করলেও জার্মানির বাজার তাই আশান্বিত করছে গার্মেন্টসংশ্লিষ্টদের।

মূলত বিশ্ববাজারে পোশাকের চাহিদা কমে যাওয়া, কমপ্লাইয়েন্স ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কিছু বড় ক্রেতা বাংলাদেশ ছেড়ে যাওয়ায় দেশটিতে তৈরি পোশাক রপ্তানি প্রবৃদ্ধি নেতিবাচক হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র ক্রেতাদের ভিয়েতনাম ও কম্বোডিয়ামুখী হওয়া এবং জিএসপি সুবিধা না থাকায় সে দেশে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতের নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি হয়েছে বলে মনে করছেন তাঁরা।

বাংলাদেশ রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) ও বিজিএমইএ সূত্র জানায়, তৈরি পোশাকশিল্পে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে রপ্তানি হয়েছিল ২৮ দশমিক ০৯ বিলিয়ন ডলার। কিন্তু সমাপ্ত অর্থবছরে এই খাতে রপ্তানি বেড়েছে মাত্র ৫৫ দশমিক ৬৮ মিলিয়ন ডলার, যা আগের অর্থবছরের চেয়ে মাত্র দশমিক ২ শতাংশ বেশি। যদিও লক্ষ্যমাত্রা ৩০ দশমিক ৩৭৯ বিলিয়ন ডলারের চেয়ে ৭ দশমিক ৩৪ শতাংশ কম।

তৈরি পোশাক খাতে রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়ার পেছনে বড় কারণ যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি। যুক্তরাষ্ট্রে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে ৫ দশমিক ৬২ বিলিয়ন ডলার মূল্যের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে। অথচ গত অর্থবছরে এই রপ্তানি কমে দাঁড়িয়েছে ৫ দশমিক ২০ বিলিয়ন ডলারে, যা আগের অর্থবছরের চেয়ে ৭ দশমিক ৪৮ শতাংশ কম। এর মধ্যে ওভেন খাতে ৩ দশমিক ৯০ বিলিয়ন ডলার এবং নিটিং পণ্য রপ্তানি হয়েছে ১ দশমিক ৩০ বিলিয়ন ডলার।

তবে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন না হলেও আগের অর্থবছরের চেয়ে কোনোমতে প্রবৃদ্ধি যে বেড়েছে তার পেছনে সবচেয়ে বড় অবদান জার্মানির। এ দেশে সমাপ্ত অর্থবছরে ওভেন পণ্য রপ্তানি হয়েছে ২ দশমিক ৩২ বিলিয়ন ডলার। আর জার্মানিতে নিট পণ্য গেছে ২ দশমিক ৮১ বিলিয়ন ডলারের।

নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি হলেও এখনো বাংলাদেশের গার্মেন্টশিল্পের সবচেয়ে বড় বাজার যুক্তরাষ্ট্র। গত অর্থবছরে তৈরি পোশাকশিল্পের মোট রপ্তানির ১৮ দশমিক ৪৮ শতাংশ এসেছে যুক্তরাষ্ট্রের বাজার থেকে। যদিও আগের অর্থবছরে মোট রপ্তানিতে যুক্তরাষ্ট্রের অংশগ্রহণ ছিল ২০ শতাংশ। এ সময় দ্বিতীয় স্থানে থাকা জার্মানির চেয়ে যুক্তরাষ্ট্রে ৯৭১ মিলিয়ন ডলার বেশি রপ্তানি হয়েছে। তবে এ বছর জার্মানি যুক্তরাষ্ট্রকে প্রায় ধরে ফেলেছে। ৯৭১ মিলিয়ন ডলার থেকে ব্যবধান মাত্র ৬৯ মিলিয়ন ডলারে নামিয়ে এনেছে জার্মানি।

মূলত এ খাতের নিট পোশাকের চাহিদাই জার্মানিতে রপ্তানি বাড়িয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশ থেকে মূলত ওভেন পোশাক (প্যান্ট, শার্ট, ট্রাউজার) আমদানি করে। ইউরোপের দেশগুলো করে নিট পোশাক (গেঞ্জি, সোয়েটার)। কয়েক বছর ধরেই বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতে নিটের চাহিদা বেড়েছে।

বিজিএমইএর সাবেক প্রথম সহসভাপতি আবু তৈয়ব কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ইউএস বায়াররা এখন ভিয়েতনাম ও কম্বোডিয়ার দিকে ঝুঁকছে। দিন দিন সেখানে প্রতিযোগিতা বাড়ছে। এ ছাড়া বেশ কিছু কারণে বাংলাদেশ আগের মতো প্রাইস কমপিটেটিভ না। আমাদের এখানে গভীর সমুদ্রবন্দর নেই। পোশাকের কাঁচামাল আমদানি ও তৈরি পোশাক রপ্তানিতে ভিয়েতনাম ও কম্বোডিয়া আমাদের চেয়ে ২০ থেকে ২৫ দিন এগিয়ে থাকে। সামনে ভারতও বাংলাদেশের জন্য বিরাট প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে আবির্ভূত হবে। ’ জার্মানিতে রপ্তানি এগিয়ে থাকার জন্য কটনশিল্পে ও ডেনিমে সেখানে ভালো করাটাকেই এগিয়ে রাখলেন তিনি।

বিজিএমইএ পরিচালক এবং প্যাসিফিক জিন্স লিমিটেডের পরিচালক সৈয়দ মোহাম্মদ তানভীর কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ইউরোপের মার্কেটে জিএসপি সুবিধা আছে। এ ছাড়া জার্মান তথা ইউরোপের কাস্টমারদের চাহিদা আমরা ভালো বুঝি। এখানকার মালিকদের একটি বড় অংশ ইউরোপ মার্কেটকে টার্গেট করে কারখানা সেটআপ করছে। এ কারণে আমাদের ফোকাসটাও এখন সেদিকে। এ সব কিছু জার্মান মার্কেটে ভালো করার অন্যতম কারণ। ’

পক্ষান্তরে যুক্তরাষ্ট্র মার্কেটে জিএসপি সুবিধা না থাকার পাশাপাশি অতিরিক্ত ডিউটির কারণে পোশাকের দাম অনেক ক্ষেত্রেই প্রাইস কমপিটেটিভ হচ্ছে না বলে তিনি মনে করেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here