Home Bangla Recent জুতার বড় ক্রেতারা আসছে

জুতার বড় ক্রেতারা আসছে

চামড়াজাত পণ্যের বৈশ্বিক বাজার প্রায় ২২ হাজার কোটি ডলারের। এ বাজারের সিংহভাগ চীনের দখলে। তবে চীনা কোম্পানিগুলো ধীরে ধীরে চামড়াজাত পণ্য উৎপাদন থেকে সরে যাচ্ছে। ফলে বাংলাদেশের সামনে চামড়াজাত পণ্যের রপ্তানি বাজারে হিস্যা বাড়ানোর বড় সুযোগ তৈরি হয়েছে। এ দেশের সম্ভাবনা দেখে বৈশ্বিক বড় ব্র্যান্ডগুলো পণ্য কেনার জন্য বাংলাদেশে আসছে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ লেদারগুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (এলএফএমইএবি) আয়োজিত চামড়াজাত পণ্যের প্রদর্শনীতে এসব কথা জানান এ খাতের দেশীয় উদ্যোক্তারা। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় (আইসিসিবি) তিন দিনের এ প্রদর্শনী শুরু হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এর উদ্বোধন করেন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ।

বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) খবর অনুযায়ী, উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সরকার চট্টগ্রাম ও রাজশাহীতে আরও দুটি চামড়া শিল্পনগর গড়ে তুলবে।

প্রদর্শনীতে দেশের চামড়াজাত পণ্য উৎপাদন ও রপ্তানিকারক শীর্ষ প্রতিষ্ঠানগুলো অংশ নিয়েছে। এতে চামড়াজাত পণ্য খাতের উদ্যোক্তারা চামড়াজাত পণ্যের বাজারে বাংলাদেশের সম্ভাবনার পেছনে মোটা দাগে পাঁচটি কারণের কথা জানান। এগুলো হলো চীন থেকে চামড়াজাত পণ্যের কারখানা সরছে, বাংলাদেশের জুতা ও ব্যাগ তৈরির সক্ষমতা বাড়ছে, এ খাতের মূল কাঁচামাল দেশেই হয়, বাংলাদেশ মানসম্পন্ন পণ্য উৎপাদন করছে এবং এ দেশের শুল্কমুক্ত বাজার-সুবিধা আছে।

বিপরীতে উদ্যোক্তারা রপ্তানি বাড়াতে বেশ কিছু সমস্যার কথাও বলেন। এগুলো হলো চামড়া প্রক্রিয়াকরণে পরিবেশদূষণ, রপ্তানিতে লিডটাইম বা পণ্য তৈরি করে জাহাজীকরণ করতে সময় বেশি লাগে, এ দেশে পণ্য বৈচিত্র্যের অভাব, শ্রমিকের দক্ষতায় ঘাটতি এবং কারিগরি জ্ঞানের অভাব।

প্রদর্শনীতে উপস্থিত ছিলেন দেশের শীর্ষস্থানীয় পাদুকা উৎপাদনকারী অ্যাপেক্স ফুটওয়্যারের চেয়ারম্যান সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী। জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বাজার ধরতে আমাদের প্রয়োজন কারিগরি জ্ঞান ও শ্রমিকের দক্ষতা বৃদ্ধি। এ ক্ষেত্রে সরকারের ভূমিকা প্রয়োজন।’ তিনি বলেন, ইউরোপে রপ্তানি বাড়াতে হলে পণ্যে বৈচিত্র্য আনতে হবে, সাধারণ জুতা তৈরি করে বাজার ধরা যাবে না। এ জন্য বাংলাদেশে পণ্য উন্নয়ন কেন্দ্র বা প্রোডাক্ট ডেভেলপমেন্ট সেন্টার দরকার।

প্রদর্শনীতে প্রথম আলোর সঙ্গে আলাপকালে উদ্যোক্তারা বৈশ্বিক ব্র্যান্ড নাইকি, অ্যাডিডাস, টিম্বারল্যান্ড, আলদো, সিয়ার্স, জেনেসকো, স্টিভ ম্যাডেন, হুগো বস, মেসি’জ, স্যান্ডারগারড, ডায়েচম্যান, এবিসি মার্ট, এইচঅ্যান্ডএম ইত্যাদি ব্র্যান্ডের নাম উল্লেখ করেন, যেগুলো বাংলাদেশ থেকে জুতা কেনা শুরু করেছে।

ইসিএম ফুটওয়্যারের পরিচালক লাবিক কামাল প্রথম আলোকে বলেন, বৈশ্বিক চামড়াজাত পণ্যের রপ্তানি বাজারের ৬০ শতাংশ চীনের দখলে। তবে ২০১৩ সাল থেকে চীনের হিস্যা ৭-৮ শতাংশ করে কমছে। এর একটা অংশ বাংলাদেশে আনার সুযোগ আছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশে অনেক বড় বড় ক্রেতা প্রতিষ্ঠান আসছে। তবে তারা সার্বিক মান বা কমপ্লায়েন্সের ক্ষেত্রে খুবই সচেতন। যে গরুর চামড়া দিয়ে জুতা হচ্ছে, সেই গরুটি কোন ঘাস খেয়েছে, এটাও তারা জানতে চায়।

পশ ফুটওয়্যারের উৎপাদন ব্যবস্থাপক মো. শাকিল আহমেদ বলেন, এইচঅ্যান্ডএম বাংলাদেশ থেকে সিনথেটিক পাদুকা কেনে। চামড়ার জুতা কেনে না। এর কারণ পরিবেশদূষণ। ট্যানারিগুলো সাভারে নেওয়া হয়েছে। এখন পরিবেশদূষণ বন্ধ হলে তারা এ দেশ থেকে চামড়ার পণ্য নেবে।

২০১৬-১৭ অর্থবছরে বাংলাদেশ চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য মিলিয়ে ১২৩ কোটি ডলার রপ্তানি আয় করেছে, যা আগের বছরের চেয়ে প্রায় ৬ শতাংশ বেশি। চামড়াজাত পণ্যের রপ্তানি আয় ১০০ কোটি ডলার, যা আগের বছরের চেয়ে সাড়ে ১৩ শতাংশ বেশি।

এলএফএমইএবির সভাপতি সায়ফুল ইসলাম বলেন, দেশের মোট চামড়ার ২০-২৫ শতাংশ ব্যবহার করে চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি আয় ১০০ কোটি ডলার হয়েছে। দেশের চামড়ার আরও ৩০ শতাংশ ব্যবহার করে চামড়াজাত পণ্য উৎপাদন করতে পারলে ২০২১ সালে এ খাতে রপ্তানি আয় ৫০০ কোটি ডলার করা সম্ভব। তিনি বলেন, দেশে চামড়াজাত পণ্য উৎপাদনে বিনিয়োগ বাড়ছে। পাশাপাশি বিগত বছরগুলোতে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ক্রেতাদের আস্থা বাড়িয়েছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here