Home Bangla Recent ঝুঁকিপূর্ণ ৯০০ পোশাক কারখানা বন্ধের চিন্তা

ঝুঁকিপূর্ণ ৯০০ পোশাক কারখানা বন্ধের চিন্তা

ঝুঁকিপূর্ণ ৯০০ পোশাক কারখানা বন্ধের চিন্তা-ভাবনা করছে সরকার। এই কারখানাগুলোতে মূলত ‘সাবকন্ট্রাক্টের’ কাজ হয়ে থাকে। পোশাক খাতের সার্বিক উন্নয়ন ও সংস্কারের নানান প্রচেষ্টা সত্ত্বেও এখনও প্রাথমিক পরিদর্শনের বাইরে রয়েছে এ কারখানাগুলো। ভবনের কাঠামো, অগি্ন ও বৈদ্যুতিক নিরাপত্তা মান যাচাই কার্যক্রম এখনও শুরু হয়নি মূলধারার বাইরে থাকা এসব কারখানায়।

কারখানাগুলোকে পরিদর্শনের মাধ্যমে কমপ্লায়েন্সের আওতায় আনতে অর্থ সহায়তা চাওয়া হয়েছে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) কাছে। তবে সরকারের এই অনুরোধের ইতিবাচক সাড়া মেলেনি। অর্থ দিতে রাজি হয়নি আইএলও। ফলে ‘সাবকন্ট্রাক্ট কারখানা’ হিসেবে পরিচিত এসব গার্মেন্টে নিরাপত্তা মান যাচাইয়ের কাজটি শিগগিরই হচ্ছে না।

গত চার বছর ধরে পোশাক খাতের ব্যাপক সংস্কার অগ্রগতি সত্ত্বেও এতগুলো কারখানা নজরদারির বাইরে থাকায় গোটা খাতের নিরাপত্তাই ঝুঁকিতে থাকছে। এ বিবেচনা থেকে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর (ডিআইএফই) আর কিছু দিন সময় দিয়ে কারখানাগুলো আইনগতভাবে বন্ধ করে দেওয়ার চিন্তা-ভাবনা করছে। আকারে ছোট এবং উৎপাদনে অনিয়মিত এসব কারখানাপ্রতি গড়ে ২৫০ জন শ্রমিক কাজ করে। কম-বেশি আড়াই লাখ শ্রমিকের কর্মসংস্থান

রয়েছে এসব কারখানায়। মোট রফতানি আয়ে অবদান রয়েছে ৫ থেকে ৭ শতাংশের মতো। অবকাঠামো দুর্বলতা ছাড়াও বেতন-ভাতা নিয়ে প্রায়ই অসন্তোষ হয় এ কারখানাগুলোতে। গত ঈদে বেতন-ভাতা দিতে না পারার ঝুঁকিতে থাকা এগারশ’ কারখানার একটি তালিকা বিজিএমইএ এবং সরকারের কাছে জমা দিয়েছে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা। মূলত সাবকন্ট্রাক্টের কারখানাগুলোই ছিল এ তালিকায়।

পোশাক খাতের দুই সংগঠনে বিজিএমইএর সর্বশেষ সদস্য সংখ্যা চার হাজার ৩৬৩টি, অপর সংগঠন বিকেএমইএর সদস্য দুই হাজার ৩০। এই ছয় সহস্রাধিক কারখানার মধ্যে দুই সংগঠনের সদস্য এরকম কারখানাও আছে। তবে সব কারখানা এখন আর নিয়মিত উৎপাদনে নেই।

চার বছর আগে সাভারে ধসেপড়া রানা প্লাজার সহস্রাধিক শ্রমিকের মর্মান্তিক মৃত্যুর পর দেশে-বিদেশে ব্যাপক সমালোচনার পর পোশাক খাতের সংস্কারবিষয়ক ইউরোপের ক্রেতাদের জোট অ্যাকর্ড অন ফায়ার অ্যান্ড বিল্ডিং সেফটি ইন বাংলাদেশ (অ্যাকর্ড) এবং উত্তর আমেরিকার ক্রেতাদের জোট অ্যালায়েন্স ফর বাংলাদেশ ওয়ার্কার সেফটির (অ্যালায়েন্স) ক্রেতারা বাংলাদেশের যে সব কারখানা থেকে পোশাক নিয়ে থাকে সেসব কারখানা পরিদর্শনে নিরাপত্তা মান যাচাই করেছে নিজস্ব অর্থে। পরিদর্শনে চিহ্নিত এসব কারখানার ত্রুটি সংশোধন কাজ এখন শেষ পর্যায়ে। এই দুই জোটের বাইরে অন্যান্য দেশের ক্রেতা এ দেশের যেসব কারখানা থেকে পোশাক আমদানি করে, সে সব কারখানার নিরাপত্তা মান যাচাইয়ের উদ্দেশ্যে জাতীয় ত্রিপক্ষীয় পরিকল্পনা (এনপিএ) নেয় সরকার। আইএলওর আর্থিক ও কারিগরি সহযোগিতায় বুয়েটের মাধ্যমে এসব কারখানা পরিদর্শন করা হয়। এ প্রক্রিয়ায় এক হাজার ৫৪৯টি কারখানার নিরাপত্তা মান পরিদর্শন করা হয়। তবে বার বার নোটিশ দেওয়া সত্ত্বেও উলি্লখিত ৯০০ পোশাক কারখানা পরিদর্শন প্রক্রিয়ায় যুক্ত হয়নি। গত বছরের জুন পর্যন্ত আইএলওর অর্থে পরিদর্শনের সর্বশেষ সুযোগ নেওয়ার জন্য নোটিশ করা হলেও এই কারখানাগুলো কোনো রকম সাড়া দেয়নি।

ডিআইএফইর পরিসংখ্যান অনুযায়ী সারাদেশে এরকম ৯০০ কারখানার মধ্যে পোশাক খাতের দুই সংগঠন বিজিএমইএ এবং বিকেএমইএর সদস্যও রয়েছে প্রায় ৩০০। বাদবাকি ৬০০ কারখানা কোনো সংগঠনেরই সদস্য নয়। এই কারখানাগুলোর বেশিরভাগই ঢাকা জেলায়। নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর ও চট্টগ্রামেও কিছু কারখানা রয়েছে। সম্প্রতি এসব কারখানা ভবনের কাঠামো, অগি্ন ও বৈদ্যুতিক নিরাপত্তা মান পরিদর্শনের উদ্দেশ্যে প্রাথমিক তালিকা করা হয়। অ্যাকর্ড, অ্যালায়েন্স ও এনপিএর আওতায় তিন হাজার ৭৬৮টি কারখানার মতো এই ৯০০ কারখানাও পরিদর্শনের মাধ্যমে নিরাপত্তা মান যাচাই করার জন্য আবারও পরিকল্পনা নেওয়া হয়। এরপর অর্থ সহায়তা চাওয়া হয় আইএলওর কাছে। সম্প্রতি ঢাকা সফরে আসা আইএলওর একটি প্রতিনিধি দল পোশাক খাতে নতুন করে আপাতত আর কোনো অর্থ সহায়তা দিতে রাজি হয়নি। ফলে শিগগির এসব কারখানা নিরাপত্তা পরিদর্শনের আওতায় আসার কোনো সম্ভাবনা নেই।

জানতে চাইলে ডিআইএফই মহাপরিদর্শক সামছুজ্জামান ভুইয়া সমকালকে বলেন, ‘মূল ধারার বাইরে থাকা এসব কারখানা তাদের মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এরকম ৯০০ কারখানা ভবনের কাঠামো, অগি্ন ও বৈদ্যুতিক নিরাপত্তা মান যাচাইয়ে আইএলওর সহায়তা চেয়েও পাওয়া যায়নি। আসলে এ মুহূর্তে চলমান কর্মসূচিগুলোর অতিরিক্ত কোনো কর্মসূচিতে অর্থ দিতে পারছে না আইএলও।’ তিনি আরও বলেন, ‘এ ছাড়া এ কারখানাগুলোকে বিনা ব্যয়ে পরিদর্শন করে নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। সে সুযোগ তারা কাজে লাগায়নি। আবারও শেষ দফা এ কারখানাগুলোর মালিকদের সঙ্গে বসবে ডিআইএফই। এতে সন্তোষজনক অগ্রগতি না হলে নিরাপত্তার স্বার্থে কারখানাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হবে।’

সাধারণত চতুর কোনো কোনো রফতানিকারক নিজের কমপ্লায়েন্ট কারখানায় কিছু কাজ রেখে বাকি কাজ নাম-পরিচয়বিহীন ছোট ছোট এসব ঝুঁকিপূর্ণ কারখানা থেকে উৎপাদন করিয়ে নেয়। এরকম চাহিদার সুযোগেই গড়ে উঠেছে সাবকন্ট্রাক্টের কারখানাগুলো। বড় কারখানার মেয়াদউত্তীর্ণ মেশিন সস্তা দামে কিনে কোনো রকমে চলছে এ কারখানাগুলো। স্থানীয় উদ্যোক্তাদের রফতানি আদেশ পেলে রাত-দিন কাজ চলে, রফতানি আদেশ না থাকলে বছরের বাকি সময় বন্ধ থাকে।

নাম-পরিচয় গোপন রাখার শর্তে রাজধানীতে মেরাদিয়ার এরকম এক উদ্যোক্তা সমকালকে বলেন, মাস্টার্স পাস করে নিজে বছর তিনেক একটি বায়িং হাউসে কাজ করেন তিনি। পরে কয়েকজন নিকটাত্মীয়ের আর্থিক সহায়তায় কারখানা গড়ে তুলেছেন। প্রথমে ১০টি মেশিন দিয়ে কাজ শুরু করে এখন ৩০টির মতো মেশিন আছে। তার মতে, এই কারখানায় অন্তত ৫০ জন বেকারের চাকরির ব্যবস্থা হয়েছে। কেন কারখানা পরিদর্শন করা হচ্ছে না_ এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘অনেক ঝামেলা আছে। এই কাগজ সেই কাগজ। এভাবেই ভালো আছি।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিজিএমইএর সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান গতকাল সমকালকে বলেন, সংস্কারের বাইরে থাকা কোনো পোশাক কারখানার বিরুদ্ধে সরকার আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিলে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। পোশাক খাতের নিরাপত্তার স্বার্থে সব কারখানাই নিরাপত্তার আওতায় আসতে হবে বলে তিনি মনে করেন। তিনি স্বীকার করেন, সংস্কারের বাইরে থাকা অর্থাৎ ঝুঁকিপূর্ণ কোনো কোনো কারখানার মালিকও বিজিএমইএর সদস্য। তবে এর প্রকৃত সংখ্যা কত সেটা তিনি জানেন না।

জানতে চাইলে বিজিএমইএর পরিচালক আশিকুর রহমান তুহিন সমকালকে বলেন, সংস্কারবিহীন এসব কারখানায় নেপাল, ভুটান, কিংবা অন্যান্য দেশের ছোট ক্রেতাদের রফতানি আদেশের কাজ করা হয়ে থাকে। এছাড়া স্থানীয় বাজারের জন্য পোশাক বানায় এরকম কারখানাও রয়েছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here