Home Bangla Recent টাকা না পেয়ে ক্ষুদ্র পাট ব্যবসায়ীরা বিপাকে

টাকা না পেয়ে ক্ষুদ্র পাট ব্যবসায়ীরা বিপাকে

সরকারি কারখানায় পাট বিক্রির টাকা পাচ্ছেন না ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। পাট বিক্রি বাবদ ৫২৭ কোটি টাকার বেশি আটকে আছে। পাট মন্ত্রণালয় বলছে, সুদানে রফতানি করা পাটপণ্যের ২৮৬ কোটি টাকা পেতে দেরি হচ্ছে। এ টাকা হাতে পেলে ব্যবসায়ীরা পাওনা পাবেন।

ক্ষুদ্র পাট ব্যবসায়ী সমিতি সূত্রে জানা গেছে, সাধারণত প্রতিবছর ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের বকেয়া পরিশোধ করে থাকে বিজেএমসি। তবে গত অর্থবছরে সমুদয় অর্থ পরিশোধ করা সম্ভব হয়নি। ৮০০ কোটির মধ্যে ১১৭ কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে। চলতি অর্থবছরে ৪৮৫ কোটি টাকার পাট কেনা হয়েছে। গত ১৫ ডিসেম্বর এই অর্থ পরিশোধ করার কথা ছিল। তবে নির্ধারিত সময়ে মাত্র ৮৫ কোটি টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। এ ছাড়া ২০০২ সালে আদমজী জুট মিল বন্ধ হওয়ার আগে মিলটির কাছে পাওনা ছিল ১০ কোটি টাকা। এ নিয়ে সরকারের কাছে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের মোট পাওনা দাঁড়িয়েছে ৫২৭ কোটি টাকা।

বকেয়া আদায়ে বিজেএমসি ও মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠক করেছেন ব্যবসায়ীরা। সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, সুদানে বিক্রি করা পাটপণ্যের অর্থ পাওয়া গেলে ব্যবসায়ীদের বকেয়া পরিশোধ করা হবে। তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সুদান থেকে অর্থ ফেরত পাওয়া নিয়ে শঙ্কায় আছেন খোদ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারাই। কারণ, গোল্ডেন ফাইবার ট্রেড সেন্টার লিমিটেড (জিএফটিসিএল) নামে একটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে পাটপণ্য রফতানি করা হয় গত বছর। সুদানে রফতানি হলেও বিজেএমসি চুক্তি করে জিএফটিসিএলের সঙ্গে। তাগাদা দিয়ে পাঁচবার চিঠি দেওয়ার পর গত ১৪ জানুয়ারি আবারও চিঠি দিয়েছে বিজেএমসি। জিএফটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছে পাঠনো চিঠিতে বলা হয়, সুদানে রফতানির অর্থ হাতে না আসায় শ্রমিকদের মজুরি পরিশোধ করা যাচ্ছে না। কোন তারিখে অর্থ দেওয়া হবে, তা সুনির্দিষ্ট করে জানানোর জন্য আবারও অনুরোধ করা হয় চিঠিতে।

ক্ষুদ্র পাট ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক হারুন অর রশিদ সমকালকে বলেন, ছোট পুঁজি নিয়ে চাষিদের কাছ থেকে নগদে পাট কিনেছেন তারা। টাকা হাতে না আসায় পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন সারাদেশের ক্ষুদ্র পাট ব্যবসায়ীরা। অনেক পরিবারের ছেলেমেয়ের পড়ালেখা বন্ধ। কারও কারও চিকিৎসা চলছে না। তিনি বলেন, সম্প্রতি পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজমের সঙ্গে দেখা করেছেন সমিতির নেতারা। পরে বিজেএমসি চেয়ারম্যানের সঙ্গেও বৈঠক করেছেন তারা। কিন্তু আশ্বাস মিললেও অর্থ মেলেনি। তার মতে, এতে সার্বিক পাট খাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। কারণ, ব্যবসায়ীরা আগামী মৌসুমে পাট না কিনলে ন্যায্য দর পাবেন না কৃষক। এতে চাষে আগ্রহ হারাবেন তারা।

পাট সচিব ফায়জুর রহমান চৌধুরী। সমকালকে বলেন, ব্যবসায়ীদের কাছে বকেয়ার পরিমাণ এত বেশি হওয়ার কথা নয়। তবে যে পরিমাণই হোক না কেন, ব্যবসায়ীরা তাদের পাটের মূল্য পাবেন। সুদানে পাটপণ্য রফতানির টাকাটা পাওয়ার অপেক্ষায় আছেন তারা। সেই টাকা হাতে আসামাত্রই ব্যবসায়ীদের টাকা পরিশোধ করা হবে।

জানতে চাইলে বিজেএমসির চেয়ারম্যান ড. মাহমুদুল হাসান সমকালকে বলেন, সময়মতো টাকা না পেয়ে ক্ষুদ্র পাট ব্যবসায়ীরা আসলেই সংকটেই পড়েছেন। কারণ, তারা ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে কৃষকের কাছ থেকে পাট কিনে সরকারি পাটকলে সরবরাহ করে থাকেন। দীর্ঘদিন ধরে এত টাকা অনাদায়ী থাকলে সংকট না হওয়ার কোনো কারণ নেই। তবে দ্রুত ব্যবসায়ীদের পাওনা পরিশোধে বিজেএমসি চেষ্টা করছে। আসলে সংস্থার অর্থ সংকটেই সময়মতো দেনা পরিশোধ করা যাচ্ছে না। সুদানে রফতানি করা পাটপণ্যের টাকা হাতে আসামাত্রই ব্যবসায়ীরা তাদের পাওনা বুঝে পাবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here