Home Bangla Recent তৈরি পোশাক রপ্তানির বড় বাজারে বড় ধস

তৈরি পোশাক রপ্তানির বড় বাজারে বড় ধস

rmg

একক দেশ হিসেবে বাংলাদেশি তৈরি পোশাকের সর্ববৃহৎ বাজার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। মাত্র কয়েক বছর আগেও মোট পোশাক রপ্তানি আয়ের এক-চতুর্থাংশ আসত এ দেশ থেকে। কিন্তু দেশে গণতন্ত্রের সুষ্ঠু বিকাশ এবং সুশাসন প্রশ্নে মার্কিন সরকারের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতির পরিপ্রেক্ষিতে ক্রমেই দেশটিতে বাজার হারাচ্ছে বাংলাদেশ। অগ্রাধিকারমূলক বাজার সুবিধা (জিএসপি) বন্ধ হয়ে যাওয়ায় নামতে থাকে ধারাবাহিক ধস।

ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব কমার্সের আওতাধীন অফিস অব টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেল (অটেক্সা) কর্তৃক প্রকাশিত তথ্যানুযায়ী, ২০১৫ সালে বাংলাদেশ থেকে আমেরিকায় রপ্তানি হয়েছিল ৫৪০ ডলারের তৈরি পোশাক। গত বছর অর্থাৎ ২০১৬ সালে রপ্তানি কমে দাঁড়ায় ৫৩০ কোটি ৫৬ লাখ ডলারে। সেই হিসাবে গত বছর রপ্তানি কমেছিল ১ দশমিক ৭৭ শতাংশ। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত ৭ মাসে যুক্তরাষ্ট্রে ৩০৪ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ। গত বছর একই সময়ে রপ্তানি হয়েছিল ৩২৩ কোটি ডলারের পোশাক। সেই হিসাবে এবার রপ্তানি কমেছে ৫ দশমিক ৮৮ শতাংশ।

অটেক্সার তথ্যানুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে গত বছর আমদানি হওয়া তৈরি পোশাকের ৬ দশমিক ৫৭ শতাংশ জোগান দিয়েছিল বাংলাদেশ। চলতি বছরের প্রথম ৭ মাসে সেটি কমে ৬ দশমিক ৪১ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। অন্যদিকে এ সময়ে আমাদের প্রতিযোগী ভিয়েতনাম ও ভারতের বাজার হিস্যা বেড়েছে। যদিও যুক্তরাষ্ট্রের সামগ্রিক পোশাক আমদানি গত বছরের চেয়ে কিছুটা কমেছে। গত জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যর্ন্ত ৭ মাসে বিভিন্ন দেশ থেকে চার হাজার ৪৯৭ কোটি ডলারের পোশাক আমদানি করে যুক্তরাষ্ট্র। এটি আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ১ দশমিক ৯০ শতাংশ কম।

অটেক্সার তথ্যানুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে শীর্ষ পোশাক রপ্তানিকারক দেশ চীন। গত জানুয়ারি-জুলাই সময়কালে দেশটিতে এক হাজার ৪৩১ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে চীন। গত বছরের একই সময়ের চেয়ে এই রপ্তানি ৪ দশমিক ২৭ শতাংশ কম। এই বাজারে দ্বিতীয় শীর্ষ রপ্তানিকারক ভিয়েতনাম ৬৫২ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে। তাদের প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ৬ দশমিক ১৬ শতাংশ। গত বছর যুক্তরাষ্ট্রের মোট পোশাক আমদানির ১৩ দশমিক ৩৯ শতাংশ ভিয়েতনাম থেকে গিয়েছিল। গেল ৭ মাসে সেটি বেড়ে ১৪ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। গত বছর ভারতের বাজার হিস্যা ছিল ৪ দশমিক ৫১ শতাংশ। গত ৭ মাসে সেটি বেড়ে হয়েছে ৪ দশমিক ৫৭ শতাংশ।

যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে রপ্তানি কমে যাওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করে বিজিএমইএর সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, সমপ্রতি বিভিন্ন কারণে সক্ষমতা হারিয়ে প্রায় এক হাজার ২০০ কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। বিশেষ করে অ্যাকোর্ড ও অ্যালায়েন্সের পরিদর্শনের পর কিছু কারখানা আংশিক, সাময়িক ও পূর্ণাঙ্গভাবে বন্ধ হয়ে গেছে। ব্যাংক ঋণ ও বাড়িভাড়াসহ অন্যান্য ব্যয় মিটিয়ে অনেকের পক্ষে টিকে থাকা সম্ভব হচ্ছে না। এ ছাড়া চট্টগ্রাম বন্দর নিয়ে পোশাকশিল্প কঠিন সঙ্কটের মুখে। এমতাবস্থায় সামনের দিনগুলো নিয়ে আমরা দুশ্চিন্তায় আছি। পোশাক তৈরির উপকরণ বোঝাই জাহাজকে পণ্য খালাসের জন্য দিনের পর দিন অপেক্ষা করতে হচ্ছে, পণ্য খালাস করতে না পারায় কনটেইনার ভাড়া বাবদ বন্দর ও জাহাজ কোম্পানিকে অতিরিক্ত জরিমানা দিতে হচ্ছে। তিনি বলেন, টানা আড়াই মাসের বেশি সময় বন্দরে জাহাজজট চলমান থাকার পরিস্থিতির সঙ্গে এখন যুক্ত হয়েছে জাহাজীকরণ জটিলতা। রপ্তানি পণ্যের কনটেইনার না নিয়েই জাহাজের বন্দর ছেড়ে যাওয়ার ঘটনাও আমাদের দেখতে হচ্ছে, যা ইতিহাসে কখনোই ঘটেনি। এ পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে ধীরে ধীরে সব বাজারই হারাতে হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুসারে, গত অর্থবছরে তৈরি পোশাক খাতে তিন হাজার ৩৮ কোটি ডলার লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে রপ্তানি আয় হয়েছে দুই হাজার ৮১৫ কোটি ডলার, যা আগের অর্থবছরের তুলনায় মাত্র শূন্য দশমিক দুই শূন্য শতাংশ বেশি। তবে নতুন অর্থবছরে দেখা গেছে লক্ষণীয় অগ্রগতি। চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে (জুলাই-আগস্ট) ২৬৫ কোটি ৫৪ লাখ ডলারের ওভেন পোশাক ও ২৮৬ কোটি ৮৮ লাখ ডলারের নিট পোশাক রপ্তানি হয়েছে। আগের অর্থবছরের তুলনায় নিট পোশাকে ১৬ দশমিক ২ শতাংশ ও ওভেন পোশাকে ১১ দশমিক ৯৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। পাশাপাশি নিট ও ওভেন পোশাক রপ্তানিতে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় প্রবৃদ্ধি এসেছে ১৬ দশমিক ৪ ও ৭ দশমিক ৬৯ শতাংশ।

তাজরীন ফ্যাশনসে অগি্নকা- ও রানা প্লাজা ধসে সহস্রাধিক শ্রমিকের মৃত্যুর প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী সংগঠন ‘আমেরিকান অর্গানাইজেশন অব লেবার-কংগ্রেস ফর ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশনের (এএফএল-সিআইও) আবেদনে ২০১৩ সালের ২৭ জুন যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের জিএসপি সুবিধা স্থগিত করা হয়। ২০১৫ সালের ১০ আগস্ট জিএসপিপ্রাপ্ত দেশগুলোর নতুন তালিকা প্রকাশ করে যুক্তরাষ্ট্র। তাতে নাম ওঠে না বাংলাদেশের। তার আগে জেনারেলাইজড সিস্টেম অব প্রেফারেন্সেসের (জিএসপি) আওতায় বাংলাদেশ পাঁচ হাজার ধরনের পণ্য যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে শুল্কমুক্ত সুবিধায় রপ্তানি করতে পারত। একক দেশ হিসেবে বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি পণ্য রপ্তানি করে যুক্তরাষ্ট্রে। বাংলাদেশের আড়াই হাজার কোটি ডলারের রপ্তানির ২১ শতাংশই যুক্তরাষ্ট্রে যায়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here