Home Bangla Recent পুনরুজ্জীবিত হচ্ছে চট্টগ্রামের চামড়া শিল্প

পুনরুজ্জীবিত হচ্ছে চট্টগ্রামের চামড়া শিল্প

বর্জ্য শোধনাগার (ইটিপি) ও প্রতিযোগিতামূলক বাজারে টিকে থাকার সক্ষমতা— এ দুইয়ের অভাবে সাম্প্রতিক বছরগুলোয় চট্টগ্রামে একের পর এক ট্যানারি কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে চামড়া সংগ্রহ করে গত কয়েক বছর মোটা অংকের লোকসান গুনতে হয়েছে চট্টগ্রামের চামড়া ব্যবসায়ীদের। তবে আশার কথা হলো, কারখানা আধুনিকায়ন ও ইটিপি সংযোজনের মাধ্যমে একটি ট্যানারি কারখানা ফের চালু হচ্ছে। আরেকটি কারখানা ইটিপি সংযোজনের মাধ্যমে উত্পাদনে ফেরার পরিকল্পনা করছে। এর মাধ্যমে পুনরুজ্জীবনের পথে ফিরছে দীর্ঘদিন স্থবির হয়ে থাকা চট্টগ্রামের চামড়া শিল্প।

জানা গেছে, ইটিপি বাস্তবায়নসহ নতুন আঙ্গিকে শিগগিরই কারখানা চালু করতে যাচ্ছে টি.কে. গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান রিফ লেদার লিমিটেড। মার্চের শেষ দিকে পরীক্ষামূলকভাবে চালু হলেও পরিবেশ অধিদপ্তরের সার্টিফিকেট নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে এটি কার্যক্রম শুরুর অপেক্ষায় রয়েছে। কারখানাটিতে উত্পাদন কার্যক্রম পুরোদমে শুরু হলে প্রতি মাসে ১০ লাখ বর্গফুট চামড়া প্রক্রিয়াজাত হবে। আর অত্যাধুনিক এ কারখানায় প্রত্যক্ষ কর্মসংস্থান হবে অন্তত ৩০০ মানুষের।

কারখানা-সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, সম্পূর্ণ পরিবেশবান্ধব ও আধুনিক প্রযুক্তির রিফ লেদার কারখানার নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০১৫ সালের মাঝামাঝি সময়ে। ১০০ কোটি টাকা বাজেটের এ প্রকল্পে ইটিপি বাস্তবায়নসহ বিভিন্ন কাজে এখন পর্যন্ত প্রায় ২৫ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। বাকি টাকা দিয়ে একটি জুতার কারখানাসহ ১০ তলা ভবনের পরিপূর্ণ প্রকল্পটি শেষ করা হবে।

সংশ্লিষ্টদের দাবি, নিজস্ব উদ্যোগে চামড়া কারখানায় ইটিপি সংযোজনের প্রথম ঘটনা এটি। এমনকি সরকারিভাবে গড়ে ওঠা সাভারের ট্যানারিপল্লীর কারখানাগুলোয়ও ইটিপি প্রকল্প শতভাগ বাস্তবায়িত হয়নি। তারা মনে করছেন, রিফ লেদার কারখানাটি চালু হলে চট্টগ্রামের চামড়া ব্যবসায়ীদের আর ঢাকার ওপর নির্ভরশীল হয়ে থাকতে হবে না।

রিফ লেদারের পরিচালক (অপারেশন অ্যান্ড সেলস) মো. মোখলেসুর রহমান বণিক বার্তাকে বলেন, কারখানাটি পরিবেশের জন্য শতভাগ উপযোগী করে নির্মাণ করা হয়েছে। এরই মধ্যে চীন ও জাপানসহ বিভিন্ন দেশের ক্রেতারা কারখানা পরিদর্শন করে আমাদের সঙ্গে ব্যবসা করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। এছাড়া ভালো দেশী ব্র্যান্ডের কাছে রিফ লেদারের চামড়ার কদর রয়েছে আগে থেকেই। পুরোদমে কারখানার কাজ শুরু হলে চট্টগ্রামের স্থানীয় ব্যবসায়ী ও আড়তদারদের কাছ থেকে চামড়া সংগ্রহ শুরু হবে। এতে কয়েক বছর ধরে চামড়া শিল্পে যে অচলাবস্থা ছিল, তা আর থাকবে না।

এদিকে রিফ লেদারের পাশাপাশি মদিনা ট্যানারি ইটিপি নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে বলে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির মালিক আবু মোহাম্মদ। তিনি বলেন, আমরা ইটিপি করার পরিকল্পনা নিয়েছি। শিগগিরই ইটিপি বাস্তবায়নের মাধ্যমে কারখানা চালুর উদ্যোগ নেয়া হবে।

চট্টগ্রাম কাঁচা চামড়া আড়তদার ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সাবেক সভাপতি মুসলিম উদ্দিন বলেন, চট্টগ্রামে একের পর এক ট্যানারি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় গত কয়েক বছর এ শিল্পে স্থবিরতা ছিল। ওই সময় বাধ্য হয়ে ঢাকার ট্যানারিগুলোর কাছে কম দামে ও বাকিতে চামড়া বিক্রি করতে হতো। গত বছরের চামড়া বিক্রি বাবদ উল্লেখযোগ্য পরিমাণ টাকা আমরা এখনো পাইনি। আগের চেয়ে আরো বড় আঙ্গিকে রিফ লেদার চালুর মাধ্যমে চট্টগ্রামের চামড়া শিল্পে নতুন প্রাণসঞ্চার হবে বলে আশা করছি।

উল্লেখ্য, ইটিপি না থাকায় দুই বছর আগে চট্টগ্রামের সর্বশেষ দুটি ট্যানারি কারখানা রিফ লেদার ও মদিনা ট্যানারি বন্ধ করে দেয় পরিবেশ অধিদপ্তর। ফলে কাঁচা চামড়া বিক্রিতে বিপাকে পড়েন চট্টগ্রামের চামড়া ব্যবসায়ীরা। জানা গেছে, ২০০০ সাল পর্যন্ত চট্টগ্রামে ২২টির বেশি ট্যানারি ছিল। কিন্তু প্রতিযোগিতামূলক বাজারে টিকতে না পেরে গত দেড় দশকে একের পর এক ট্যানারি বন্ধ হয়ে যায়। উপরন্তু ঢাকায় কাঁচা চামড়া বিক্রির বিপুল পরিমাণ টাকা বকেয়া থাকায় চামড়া ব্যবসার সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িতদের বিপাকে পড়তে হয়।

৩০ বছর ধরে চামড়া ব্যবসার মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করা মো. নুরুদ্দিন বলেন, রিফ লেদার আবার চালু হচ্ছে; এটি চট্টগ্রামের চামড়া ব্যবসায়ীদের জন্য সুসংবাদ। কারণ কোনো চামড়া কারখানা না থাকায় গত কয়েক বছর এ খাতের ব্যবসায়ীদের বড় লোকসান হয়েছে। এ সময়ের মধ্যে চামড়া শিল্পের সঙ্গে জড়িত ব্যবসায়ী-আড়তদার-ফড়িয়া ও শ্রমিকসহ প্রায় ২৫ হাজার পরিবারকে জীবন-জীবিকা নিয়ে বিপাকে পড়তে হয়েছে।

পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম মহানগরের পরিচালক আজাদুর রহমান মল্লিক বলেন, বিষাক্ত বর্জ্যে পরিবেশ দূষণের দায়ে আমরা ট্যানারি দুটি বন্ধ করে দিয়েছিলাম। এখন রিফ লেদার অত্যাধুনিক একটি ইটিপি করেছে। প্রতিষ্ঠানটি পরিশোধিত বর্জ্যের টেস্ট রিপোর্ট পেতে আবেদন করেছে। শিগগিরই পরীক্ষা করে প্রতিবেদন দেয়া হবে।