Home Bangla Recent পোশাক কারখানা সংস্কারে অভূতপূর্ব উন্নতি হয়েছে

পোশাক কারখানা সংস্কারে অভূতপূর্ব উন্নতি হয়েছে

আইএলওর বিদায়ী কান্ট্রি ডিরেক্টর শ্রীনিবাস বি রেড্ডি

নানা সংকটের মধ্যেও শ্রমিকের জন্য নিরাপদ কর্মপরিবেশ (কমপ্লায়েন্স) নিশ্চিত করতে বাংলাদেশে অভূতপূর্ব উন্নতি হয়েছে মন্তব্য করেছেন আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) বিদায়ী কান্ট্রি ডিরেক্টর শ্রীনিবাস বি রেড্ডি। তিনি বলেন, উত্তর আমেরিকার ক্রেতাজোট অ্যালায়েন্স এবং ইউরোপের ক্রেতা জোট অ্যাকর্ডের তদারকি এবং দেশি-বিদেশি বিনিয়োগের মধ্যামে সংস্কার খাতে যথেষ্ট অগ্রগতি হয়েছে।

এখন এই অগ্রগতি ধরে রাখতে একটি দক্ষ, স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ এবং ওয়ান স্টপ নজরদারিব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে বলে তিনি মনে করেন।

বাংলাদেশে তাঁর চাকরির মেয়াদ শেষে গতকাল বুধবার কয়েকটি পত্রিকার সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এসব কথা বলেন। দীর্ঘ সাড়ে ৬ বছর তিনি আইএলও কান্ট্রি ডিরেক্টর হিসেবে বাংলাদেশে দায়িত্ব পালন করেন। আজ বৃহস্পতিবার তার নতুন কর্মস্থল আইএলওর প্রধান কার্যালয় সুইজারল্যান্ডের জেনেভার উদ্দেশে ঢাকা ছাড়ছেন।

রেড্ডি বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতের ক্রান্তিকালে বেশ দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন। এর ফলে এ খাতে অংশীজনদের কাছে তিনি বেশ পরিচিত এবং মালিক-শ্রমিকবান্ধব একই সঙ্গে সরকারের ঊর্ধ্বতন মহলে বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন। এ ছাড়া সারা বিশ্বে আইএলওর মাঠপর্যায়ের শাখা অফিসগুলোর মধ্যে বাংলাদেশকে সবচেয়ে বড় এবং জনপ্রিয় করে তুলেছেন তিনি।

পণ্য উৎপাদনে স্বয়ংক্রিয় নিয়ন্ত্রণ (অটোমেশন) ব্যবস্থার ফলে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতের কর্মসংস্থান কমেছে উল্লেখ করে রেড্ডি বলেন, গত চার বছর আগেও তৈরি পোশাক খাতে ৪৫ লাখ শ্রমিক কাজ করত বলে উল্লেখ করা হলেও এ খাতে শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএর বর্তমান পরিসংখ্যান হলো ৩৫ লাখ। পোশাক খাতের কর্মসংস্থানের জন্য এটা বড় উদ্বেগের বিষয় বলে তিনি মনে করেন।

কর্মসংস্থান কমে যাওয়ার প্রধান কারণ অটোমেশনের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আগে একটি মেশিনে কাজ করতেন একজন অপারেটর। বর্তমানে ওই একজন অপারেটর তিনটি মেশিনে কাজ করেন। এর ফলে সরাসরি কর্মসংস্থানে এমন প্রভাব ফেলছে। তিনি আরো বলেন, ২৪ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি আয় থেকে বেড়ে বর্তমানে ২৮ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে। ফলে দেখা যাচ্ছে, রপ্তানি বাড়লেও কর্মসংস্থানের দিক থেকে কমছে। এ জন্য তাঁর পরামর্শ অটোমেশন বন্ধ করা যাবে না। তবে শ্রমিকদের দক্ষতা উন্নয়নে কাজ করতে হবে। একই সঙ্গে পোশাক রপ্তানিতে উচ্চমূল্যে সংযোজনী পণ্যের রপ্তানি বাড়াতে হবে। পোশাক উৎপাদনের প্রবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে কর্মসংস্থানের প্রবৃদ্ধিও নিশ্চিত করতে হবে। তবে এটা খুব জটিল হলেও গুরুত্বপূর্ণ। কারণ প্রতিযোগিতার সক্ষমতা বাড়াতে হলে উৎপাদনও বাড়াতে হবে।

ছোট ও মাঝারি কারখানাগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ার ফলেও কর্মসংস্থানে প্রভাব ফেলেছে উল্লেখ করে রেড্ডি আরো বলেন, গত তিন বছরে প্রচুর ছোট-মাঝারি কারখানা বন্ধ হয়েছে। তবে একই সঙ্গে কমপ্লায়েন্স ও পরিবেশবান্ধব কারখানার সংখ্যাও বেড়েছে। তাই ঠিকা (সাবকন্টাক্টিং) কারখানাগুলো কিভাবে টিকিয়ে রাখা যায় এ নিয়ে এখনই ভাববার সময় হয়েছে। কেননা কোনো ক্রেতা সাবকন্টাক্ট কারখানা বন্ধ হয়ে যাক, এমনটি বলেন না। তবে এসব কারখানাকে কমপ্লায়েন্স নিশ্চিত করতে হবে।

বাংলাদেশের পোশাক খাত ক্রেতাবান্ধব উল্লেখ করে রেড্ডি বলেন, পোশাক খাতের ক্রেতারা এবং ব্র্যান্ড পোশাক খাতের উন্নয়নে অনেক কাজ করছে। কারখানা সংস্কারে বিনিয়োগ করেছে। একই সঙ্গে অনেক বড় দুর্ঘটনার পর ক্ষতি-পূরণে অংশীদার হয়েছে। এমনকি কোনো অশুভ পরিস্থিতিতেও তারা বাংলাদেশ থেকে পোশাক নেওয়া বন্ধ করেনি। তাই বাংলাদেশের পোশাক খাতকে এগিয়ে নিতে হলে উচ্চমূল্যে সংযোজনী পণ্যে রপ্তানির দিকে এগিয়ে যেতে হবে। নকশায় বৈচিত্র্য আনতে হবে। কম মূল্যের পোশাক রপ্তানি থেকে বের হয়ে উচ্চমূল্যে সংযোজনী পণ্যের দিকে যেতে হবে।

বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাত বেশ কিছু ক্ষেত্রে অনন্য দৃষ্টান্ত তৈরি করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, পণ্যমান এবং নির্দিষ্ট সময়ে পণ্য সরবরাহ নিশ্চিত করে পোশাক খাতে বিশ্ববাজারে ক্রেতা এবং ব্র্যান্ডের প্রত্যাশার জায়গাটি পূরণ করছে। শ্রমিক অধিকারের ক্ষেত্রেও অনেক উন্নতি হয়েছে। বিশেষ করে মালিক-শ্রমিক এবং সরকারের সংলাপ শুরু হয়েছে। ট্রেড ইউনিয়ন হয়েছে। রপ্তানি প্রক্রিয়া অঞ্চলগুলোতে ট্রেড ইউনিয়ন গঠন প্রক্রিয়া চলছে। শ্রম আইন সংশোধনেও সরকার অনেক দূর এগিয়েছে। এ জন্য সরকার অংশীজনদের সঙ্গে কথা বলেছে। গত বছর ডিসেম্বরে আশুলিয়া শ্রমিক অসন্তোষের পর সরকার ত্রিপক্ষীয় পরামর্শক পরিষদ গঠন করেছে (টিসিসি)। এটা খুব ভালো একটি উদ্যোগ। তবে তিনি মনে করেন, সংলাপ শুধু সংকট হলেই নয়। এ সংলাপ দরকার নিয়মিত। তবে সব সংলাপ শুধু পোশাক খাতই নয়, চামড়া, চা, হালকা প্রকৌশল, শিপব্রেকিংয়ের মতো অন্য খাতেরও সংলাপ দরকার।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here