Home Bangla Recent পোশাক খাতের ব্যবসা গুটিয়ে নিচ্ছে সানম্যান গ্রুপ?

পোশাক খাতের ব্যবসা গুটিয়ে নিচ্ছে সানম্যান গ্রুপ?

চট্টগ্রামের বায়েজিদ বোস্তামি রোডে সানম্যান গ্রুপের পোশাক কারখানা গোল্ডেন হরাইজন লিমিটেড। ক্রয়াদেশ সংকট দেখিয়ে ২ জুলাই কারখানাটির একটি ইউনিট এক মাসের জন্য লে-অফ ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। এতে হঠাত্ করে কর্মহীন হয়ে পড়েন ঈদের ছুটি শেষে কাজে যোগ দিতে আসা ২ হাজার ৯০০ শ্রমিক। তাদের ধারণা, কারখানাটি আর চালু নাও হতে পারে।

সানম্যান গ্রুপের চট্টগ্রামে স্থাপিত এ পোশাক কারখানাটি এখন পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করা না হলেও এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে গ্রুপের অন্য কারখানার ক্ষেত্রে। চলতি বছরের ২৯ মে থেকে বন্ধ রয়েছে এ গ্রুপের নোয়াখালী সদর উপজেলায় অবস্থিত ‘ইসহাকপুর সোয়েটার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড’ নামের কারখানাটি। নোয়াখালীতে ‘ইসহাকপুর সোয়েটার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড’ নামে সানম্যান গ্রুপের তিনটি ইউনিট আছে, যার সবগুলো গত এক বছরে পর্যায়ক্রমে বন্ধ হয়ে গেছে।

২০১৬ সালের অক্টোবর মাসে নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলায় অবস্থিত ‘ইসহাকপুর সোয়েটার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড’-এর দ্বিতীয় ইউনিট এবং চলতি বছরের ১৬ মার্চ লক্ষ্মীপুরের রামগতিতে অবস্থিত প্রথম ইউনিটটি বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এসব কারখানা বন্ধ হওয়ায় বেকার হয়ে পড়েছেন প্রায় ১ হাজার ২০০ শ্রমিক। ধারাবাহিকভাবে কারখানা বন্ধের এসব ঘটনায় সানম্যান গ্রুপের কর্ণধার মেজর (অব.) মান্নান পোশাক খাতের ব্যবসা গুটিয়ে নিচ্ছেন কিনা, এমন প্রশ্ন তুলছেন সংশ্লিষ্টরা।

জানা গেছে, কমপ্লায়েন্স ব্যবস্থাপনা, ধারাবাহিক শ্রম অস্থিরতা, ক্রয়াদেশ সংকটসহ নানাবিধ কারণে লোকসান গুনতে হচ্ছে সানম্যান গ্রুপের পোশাক কারখানাগুলোকে। এ প্রেক্ষাপটে একে একে পোশাক কারখানার ইউনিটগুলো বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিপুল পরিমাণ লোকসান হচ্ছে জেনেও পোশাক কারখানাগুলো সচল রাখা হচ্ছিল। আর এ লোকসান থেকে বেরিয়ে আসতে এক এক করে পোশাক কারখানা ইউনিট বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে সানম্যান গ্রুপের মুখপাত্র জিএম ফারুক খান বণিক বার্তাকে বলেন, নোয়াখালীতে যখন কারখানাগুলো স্থাপন করা হয়, তখন উদ্যোক্তারা জানতেন যে এ ইউনিটগুলোয় উৎপাদন খরচ অনেক বেশি হবে। চট্টগ্রাম থেকে কাঁচামাল এনে পণ্য তৈরি করে তা রফতানি করাসহ পুরো প্রক্রিয়াটি ছিল ব্যয়বহুল। এছাড়া অদক্ষ শ্রমিকের ঝুঁকিও বিবেচনায় নিয়ে কারখানাগুলো চালু করা হয়। কিন্তু পরবর্তীতে দেখা গেল লোকসানের যে অনুমান করা হয়েছিল, তার চেয়ে দুই-তিন গুণ বেশি লোকসান হয়েছে। কিন্তু এলাকার মানুষ উপকৃত হবেন— এমন ভাবনা থেকেই কারখানাগুলো স্থাপন করা হয়।

অনেক বেশি লোকসানের বোঝা বহন করা এখন কঠিন হয়ে পড়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এ কারণেই এখন অন্য ব্যবসায় সরে যাওয়ার বিষয়টি ভাবা হচ্ছে। বিশেষ করে গ্রামে পোশাক কারখানার স্থলে অন্য কারখানা স্থাপনের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে।

জানা গেছে, পোশাক খাতে ১০টিরও বেশি কারখানা ইউনিট আছে সানম্যান গ্রুপের। প্রতিষ্ঠান-সংশ্লিষ্টদের দাবি, দেশে পোশাক শিল্পের বিকাশের শুরুর দিকে যারা ব্যবসা শুরু করেছে, তাদের মধ্যে অন্যতম ব্যবসায়িক গ্রুপ হলো সানম্যান। এ গ্রুপের পোশাক কারখানাগুলোয় ২০০-এর বেশি অ্যাসেম্বলি লাইন আছে। নিট ও ওভেন পণ্য উৎপাদনে সানম্যান গ্রুপের সামর্থ্য প্রতি মাসে ৪০ লাখ পিসের বেশি। সানম্যান গ্রুপের উল্লেখযোগ্য পোশাক কারখানাগুলো হচ্ছে— আলফা টেক্সটাইল লিমিটেড, ডেল্টা ফ্যাশনস লিমিটেড, ড্রেসকো লিমিটেড, গোল্ডেন হাইটস লিমিটেড, গোল্ডেন হরাইজন লিমিটেড, ইসহাকপুর সোয়েটার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, পেনিনস্যুলা গার্মেন্টস লিমিটেড, ইউনাইটেড ড্রেসেস ও পাইওনিয়ার ড্রেসেস লিমিটেড।

সানম্যান গ্রুপের কর্ণধার মেজর (অব.) আবদুল মান্নানের জন্ম নোয়াখালী সদর উপজেলার নোয়াখালী ইউনিয়নে। নিজ জেলার বাসিন্দাদের বেকারত্ব দূর করতে তথা দারিদ্র্য বিমোচনের কথা মাথায় রেখে ২০০৩ সালে নিজ এলাকায় ‘ইসহাকপুর সোয়েটার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড’ স্থাপন করেন তিনি। তখন এ কারখানায় প্রায় সাড়ে ৫০০ শ্রমিক-কর্মকর্তা চাকরি করতেন। পরে ২০০৭ সালে লক্ষ্মীপুর জেলার রামগতিতে ‘ইসহাকপুর সোয়েটার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড’-এর ‘ইউনিট-১ নাম দিয়ে আরো একটি সোয়েটার ফ্যাক্টরি স্থাপন করেন তিনি। সেখানে কর্মরত ছিলেন প্রায় সাড়ে ৩০০ শ্রমিক-কর্মকর্তা। এর পর ২০০৯ সালের দিকে নোয়াখালী জেলার সুবর্ণচর উপজেলার হারিছ চৌধুরীর বাজারসংলগ্ন এলাকায় ইসহাকপুর সোয়েটার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড ইউনিট-২ নাম দিয়ে তৃতীয় ফ্যাক্টরি স্থাপন করে সানম্যান গ্রুপ। সেখানে কর্মরত ছিলেন প্রায় ২৫০ শ্রমিক-কর্মকর্তা।

কোম্পানি সূত্র জানায়, তিনটি কারখানা স্থাপনের পর এগুলোর পেছনে প্রায় শতকোটি টাকা লোকসান দিয়েছেন মেজর (অব.) মান্নান। কিন্তু তার পরও নিজ জেলার মানুষের কথা চিন্তা করে দীর্ঘদিন লোকসান গুনেও প্রতিষ্ঠানগুলো চালু রেখেছিলেন তিনি। কিন্তু ক্রয়াদেশ সংকট, শ্রম অসন্তোষ, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতাসহ বিভিন্ন কারণে এখন লোকসানের মাত্রা অনেক বেড়ে গেছে কারখানাগুলোর। তাই বাধ্য হয়ে কোম্পানি এ অঞ্চলের তিনটি কারখানাই বন্ধ করে দিয়েছে। তবে সোয়েটার ফ্যাক্টরি বন্ধ হলেও এসব স্থানে ভবিষ্যতে শ্রমিক কম খাটিয়ে প্রযুক্তিনির্ভর বিভিন্ন ধরনের ব্যাটারি উৎপাদনের কারখানা চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে তাদের।

একের পর এক কারখানা বন্ধের মধ্য দিয়ে সানম্যান গ্রুপ পোশাক খাতের ব্যবসা থেকে সরে আসছে কিনা জানতে চাইলে  গ্রুপের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) জামিল আহমেদ খান বলেন, আমরা পোশাক খাত থেকে সরে আসছি না। তবে সামগ্রিকভাবে পোশাক খাতের ওপর নির্ভরতা কিছুটা কমিয়ে আনছি। ইসহাকপুরে সোয়েটার কারখানা আর থাকছে না। এর পরিবর্তে সেখানে অন্যান্য পণ্য উৎপাদনের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। পণ্য বহুমুখীকরণের বিষয়টিতে গুরুত্ব দিচ্ছে সানম্যান গ্রুপ।

নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুরে সানম্যান গ্রুপের কারখানা বন্ধের বিষয়ে কল-কারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের কুমিল্লা জেলার উপমহাপরিদর্শক মো. ইকবাল হোসেন আহাম্মেদ বলেন, ইসহাকপুর সোয়েটার ইন্ডাস্ট্রিজের বন্ধ হওয়ার কারণ সম্পর্কে প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে আর্থিক অবস্থা খারাপের তথ্য জানানো হয়েছে। এছাড়া বলা হয়েছে, তাদের ক্রয়াদেশ কমে গেছে। আবার কারখানা কমপ্লায়েন্ট করা যাচ্ছে না— এমন তথ্যও জানানো হয়েছে। এক্ষেত্রে শ্রমিকের পাওনাও পরিশোধ করা হয়েছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here