Home Bangla Recent পোশাক খাতে নতুন তাগিদ আসছে

পোশাক খাতে নতুন তাগিদ আসছে

বাংলাদেশে তৈরি পোশাক খাতে ‘সাসটেইনেবিলিটি কম্প্যাক্ট’ বাস্তবায়ন ইস্যুতে একটি প্রস্তাব উঠেছে ইউরোপীয় পার্লামেন্টে। আগামী ১৪ জুন এর ওপর ভোট হওয়ার কথা।

গত মাসে ইউরোপীয় পার্লামেন্টে বাংলাদেশে সাসটেইনেবিলিটি কম্প্যাক্ট নিয়ে বিতর্কের পর আন্তর্জাতিক বাণিজ্যবিষয়ক কমিটির পক্ষে প্রস্তাবটি উত্থাপন করেন যুক্তরাজ্যের সাজ্জাদ করিম ও জার্মানির লাঙা বার্নড।

২০১৩ সালের এপ্রিলে রানা প্লাজা ধসের পর শ্রম ইস্যুতে প্রবল আন্তর্জাতিক চাপে পড়ে বাংলাদেশ। ওই বছরের জুনে যুক্তরাষ্ট্র তার বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের অগ্রাধিকারমূলক সুবিধা (জিএসপি) স্থগিত করে। ইউরোপীয় ইউনিয়নেও (ইইউ) বাংলাদেশের জিএসপি সুবিধা নিয়ে শঙ্কা সৃষ্টি হলে পোশাক শিল্পে নিরাপত্তার মানোন্নয়নে ‘সাসটেইনেবিলিটি কম্প্যাক্ট’ সই করা হয়। গত মে মাসে ঢাকায় সাসটেইনেবিলিটি কম্প্যাক্ট বাস্তবায়নের অগ্রগতি পর্যালোচনায় তৃতীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

এরই আলোকে ইউরোপীয় পার্লামেন্ট যে ১৬ দফা প্রস্তাবের খসড়া তৈরি করেছে তাতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে দায়িত্বশীল ব্যবসার দায় মূলত অভ্যন্তরীণ। অর্থাৎ বাংলাদেশকেই মূল দায়িত্ব পালন করতে হবে। প্রস্তাবের প্রথম দফায় সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশের উন্নয়ন ও প্রবৃদ্ধির চমকপ্রদ ধারাবাহিকতার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, আরো টেকসই অর্থনৈতিক অগ্রগতির জন্য বাংলাদেশের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা প্রয়োজন। এগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য কাঠামোগত সংস্কার, পণ্যের বৈচিত্র্যকরণ, সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা, কর্মীদের অধিকার, পরিবেশগত সুরক্ষা ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই।

খসড়া প্রস্তাবের দ্বিতীয় দফায় বাংলাদেশ সরকারকে পোশাকশিল্পের কর্মীদের সুরক্ষা ও কাজের পরিবেশকে বিশেষ গুরুত্ব ও সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে ইউরোপীয় পার্লামেন্ট। একই সঙ্গে কারখানা ও ভবনের সুরক্ষা আইন বাস্তবায়ন জোরদার, শ্রম পরিদর্শনের জন্য সরকারি তহবিল বৃদ্ধি, কারখানা পরিদর্শনের জন্য আরো পরিদর্শক নিয়োগ ও প্রশিক্ষণ অব্যাহত রাখা ও বার্ষিক কর্মপরিকল্পনা তৈরির ব্যবস্থা জোরদারে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।

তৃতীয় দফায় ২০১৩ সালের শ্রম আইন সংশোধন করে সংগঠন করার স্বাধীনতা ও সম্মিলিতভাবে দর-কষাকষির সুযোগ দিতে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান রয়েছে। এ ছাড়া শ্রমিক সংগঠনগুলোকে দ্রুত নিবন্ধন প্রদান, সংগঠনবিরোধী তৎপরতা ও বৈষম্য দূর, রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ এলাকাগুলোতে (ইপিজেড) শ্রমিকদের সংগঠন করার সুযোগ দিতে বাংলাদেশ সরকারকে আহ্বান জানানো হয়েছে।

প্রস্তাবের চতুর্থ দফায় বাংলাদেশের রপ্তানিনির্ভর সব পোশাক কারখানা মালিক, পোশাক শিল্প সমিতি ও বাংলাদেশ সরকারকে কারখানার ত্রুটি দূর করার আহ্বান জানানো হয়েছে এবং এ ক্ষেত্রে পরিদর্শন ও দাতাদের অর্থ ব্যয়ের সঠিক আর্থিক বিবরণী রাখার তাগিদ দেওয়া হয়েছে।

পঞ্চম দফায় অনতিবিলম্বে পোশাক শিল্প শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি বোর্ড গঠন এবং স্বল্প সময়ের বিরতিতে মজুরি পর্যালোচনার আহ্বান জানানো হয়েছে।

ষষ্ঠ দফায় আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড, খুচরা বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান ও বাংলাদেশের বেসরকারি খাতকে পোশাক শিল্পের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার, করপোরেট সামাজিক দায়িত্ব পালন এবং দায়িত্বশীল ব্যবসা চর্চার ধারণা উন্নয়নের আহ্বান জানিয়েছে ইইউ। সপ্তম দফায় বাংলাদেশে আগামী বছরের ১২ মে শেষ হতে যাওয়া অ্যাকর্ডের মেয়াদ আরো পাঁচ বছর বাড়াতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। অষ্টম দফায় বাংলাদেশ সরকার ও বেসরকারি খাতকে ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসনের উদ্যোগ অব্যাহত রাখার আহ্বান জানানো হয়েছে।

প্রস্তাবের নবম থেকে ত্রয়োদশ দফায় ইইউ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দায়িত্বের কথা স্বীকার করা হয়েছে। সেখানে ইউরোপীয় পার্লামেন্ট ব্যবসা ও মানবাধিকার বিষয়ে একটি চুক্তি সম্পাদনের লক্ষ্যে আলোচনার জন্য জাতিসংঘের ওয়ার্কিং গ্রুপের প্রচেষ্টাকে সমর্থন দিয়েছে এবং এ বিষয়ে ইউরোপীয় কমিশন ও সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে সক্রিয় ভূমিকা পালনের আহ্বান জানিয়েছে।

ত্রয়োদশ দফায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন জোর দিয়ে বলেছে, বাংলাদেশে নিরাপত্তা পরিস্থিতির উন্নয়ন এবং উগ্রবাদীদের ঝুঁকি ধারাবাহিকভাবে মোকাবেলায় ব্যর্থ হলে এ দেশে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সরাসরি তার প্রভাব পড়বে এবং দীর্ঘমেয়াদে বাংলাদেশের উন্নয়ন ও সাধারণ মানুষের জীবনকে বাধাগ্রস্ত করবে।

প্রস্তাবের চতুর্দশ দফায় ইউরোপীয় পার্লামেন্ট বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নতির জন্য পোশাক শিল্প খাতের উন্নতমানের ওপর জোর দিয়েছে। পার্লামেন্ট সতর্ক করে বলেছে, বাংলাদেশ এ খাত নিয়ে নিজেকে ইইউ থেকে দূরে সরিয়ে রাখার নীতি গ্রহণ করলে তা এ দেশের ভাবমূর্তির জন্য কেবল ক্ষতিকরই হবে না, বরং ভবিষ্যৎ উন্নতির সম্ভাবনাকেও নষ্ট করবে।

পঞ্চদশ অনুচ্ছেদে বাংলাদেশে পোশাক শিল্পে দায়িত্বশীল আচরণ ও সার্বিক লক্ষ্য অর্জনে বাংলাদেশ সরকার, স্থানীয় বেসরকারি খাত, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও ব্যবসায়িক অংশীদারদের দায়িত্বের ওপর জোর দিয়েছে ইউরোপীয় পার্লামেন্ট।

ষষ্ঠদশ অনুচ্ছেদে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের এ প্রস্তাবের অনুলিপি বাংলাদেশ সরকার ও জাতীয় সংসদ ইউরোপীয় কাউন্সিল, ইউরোপীয় এক্সটার্নাল অ্যাকশন সার্ভিস, ইউরোপীয় কমিশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট/ইউনিয়নের নিরাপত্তা নীতি ও পররাষ্ট্রবিষয়ক হাইরিপ্রেজেন্টেটিভ, ইউরোপীয় ইউনিয়নের মানবাধিকারবিষয়ক বিশেষ প্রতিনিধি, সদস্য রাষ্ট্রগুলোর সরকার ও সংসদ, জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিল এবং আইএলও মহাপরিচালকের কাছে পাঠাতে বলা হয়েছে।

আগামী সপ্তাহে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সদস্যদের ভোটে প্রস্তাবটি গৃহীত হবে বলেই সংশ্লিষ্টরা ধারণা করছেন। এর আগে গত মে মাসে ইউরোপীয় পার্লামেন্টে বিতর্কে অংশ নেওয়া সদস্যরা তৈরি পোশাক শিল্পে নিরাপত্তার মানোন্নয়নে বাংলাদেশের অগ্রগতির প্রশংসা করলেও আরো অনেক কাজ বাকি রয়েছে বলে উল্লেখ করেন। কয়েকজন সদস্য শ্রমমান উন্নয়নে বাংলাদেশের ধীরগতির সমালোচনা করে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান। এর পরিপ্রেক্ষিতে ইউরোপীয় কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, বাংলাদেশের দিকে তারা নজর রাখছে। প্রয়োজনে বাণিজ্য সুবিধা কাটছাঁটসহ সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়ারই সুযোগ আছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here