Home Bangla Recent প্রণোদনার পরও নতুন বাজারে পোশাক রফতানিতে ধস

প্রণোদনার পরও নতুন বাজারে পোশাক রফতানিতে ধস

সরকার নতুন বাজারে তৈরি পোশাক রফতানিতে তিন শতাংশ হারে নগদ প্রণোদনা দিয়ে আসছে, যাতে রফতানি বৃদ্ধি পায়। কিন্তু প্রণোদনার পরও নতুন বাজারে পোশাক রফতানিতে ধস নেমেছে। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে নতুন বাজারের কোনোটিতে আয় কমেছে ১৭ শতাংশ, কোনো বাজারে ১৬ শতাংশ, কোনো বাজারে ১১ শতাংশ। সুতরাং ইউরোপ-আমেরিকার ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে নতুন বাজারের ওপর জোর দেওয়া হলেও সে উদ্দেশ্য হোঁচট খাচ্ছে। রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর সূত্রে জানা যায়, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে নতুন বাজারে তৈরি পোশাক রফতানি না বেড়ে উল্টো কমেছে এক দশমিক ৫৯ শতাংশ। আলোচ্য সময়ে এ সব বাজারে পোশাক রফতানি হয়েছিল ৪২৪ কোটি ৮৩ লাখ মার্কিন ডলারের। আর এর আগের অর্থবছরে রফতানি ছিল ৪৩১ কোটি ৭৫ লাখ ডলার। সব মিলিয়ে গত অর্থবছরে এসব বাজারে ৬ কোটি ৮৬ লাখ মার্কিন ডলার বা ৫৪৯ কোটি টাকার সমপরিমাণ পোশাক রফতানি কমেছে। তৈরি পোশাক খাতের উদ্যোক্তারা বলছেন, ইউরোপ-আমেরিকাসহ প্রচলিত সব বাজারেই বিদায়ী বছরে পোশাক রফতানি কমেছে। তার প্রভাব পড়েছে নতুন বাজারেও। এ বিষয়ে তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রফতানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সাবেক সভাপতি ও এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ইএবি) সভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদী সকালের খবরকে বলেন, একেক বাজারে একেক রকম কারণ রয়েছে পোশাক রফতানি কমার। ব্রাজিলসহ নতুন বাজারের কয়েকটি দেশে মুদ্রার দরপতন ও অর্থনৈতিক মন্দার কারণে দেশগুলোতে প্রবৃদ্ধি কমেছে। ব্রাজিলে অর্থনৈতিক মন্দা চলছে। এ কারণেও দেশটিতে পোশাক রফতানি কমেছে। তাছাড়া দেশটিতে পোশাক রফতানিতে ২৭ শতাংশ শুল্ক দিতে হয়। এটাও একটি কারণ। ভারতে পোশাক রফতানিতে খুব একটা সুবিধা করা যাচ্ছে না, কারণ দেশটি নানারকম ট্যারিফ-নন ট্যারিফ ব্যারিয়ার দিয়ে রেখেছে। ইএবির পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে নতুন বাজারের মধ্যে সবচেয়ে বেশি পোশাক রফতানি আয় কমেছে তুরস্কে, ১৭ দশমিক ১৫ শতাংশ। এছাড়া ব্রাজিলে কমেছে ১৬ দশমিক ৯৬ শতাংশ, ম্যাক্সিকোতে কমেছে ১৬ দশমিক ১১ শতাংশ, দক্ষিণ আফ্রিকায় ১৩ দশমিক ২৯ শতাংশ, দক্ষিণ কোরিয়ায় কমেছে ১১ দশমিক ৪৬ শতাংশ, অস্ট্রেলিয়ায় কমেছে ৮ দশমিক ৫৩ শতাংশ, ভারতে কমেছে ৪ দশমিক ৮৫ শতাংশ, জাপানে কমেছে ৩ দশমিক ৮৭ শতাংশ। অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিল, চিলি, চীন, ভারত, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, মেক্সিকো, রাশিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, তুরস্কসহ আরও কয়েকটি দেশ বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের নতুন বাজার। তৈরি পোশাকের প্রায় ১৫ শতাংশ যায় এসব বাজারে। পরিসংখ্যানে দেখা যায়, অস্ট্রেলিয়ায় পূর্বের বছর ৬৩ কোটি ৬৩ লাখ মার্কিন ডলারের পোশাক রফতানি হলেও গত অর্থবছর তা কমে দাঁড়িয়েছে ৫৮ কোটি ২০ লাখ ডলারে। একইভাবে জাপানে ৭৭ কোটি ৪৫ লাখ ডলার থেকে কমে ৪৪ কোটি ৪৫ লাখ ডলার, তুরস্কে ৪৬ কোটি থেকে ৩৮ কোটি, কোরিয়ায় ১৮ কোটি ৬২ লাখ থেকে ১৬ কোটি ৪৮ লাখ, ভারতে ১৩ কোটি ৬৪ লাখ থেকে কমে ১২ কোটি ৯৮ লাখে, ব্রাজিলে ১২ কোটি থেকে ৯ কোটি ৯৮ লাখ। আর এই সময়ে চীনে ৩৪ কোটি ডলার থেকে বেড়ে ৩৯ কোটি ডলার, চিলিতে ৪ কোটি ৫৮ লাখ ডলার থেকে বেড়ে ৫ কোটি ৮৯ লাখ ডলার ও রাশিয়ায় ২৪ কোটি ৯১ লাখ ডলার থেকে বেড়ে ৩৭ কোটি ৯৪ লাখ ডলারে দাঁড়িয়েছে। অর্থনীতিবিদ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক ড. খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম সকালের খবরকে বলেন, বিজিএমইএ ২০২১ সালের মধ্যে তৈরি পোশাক রফতানি থেকে ৫০ বিলিয়ন ডলার রফতানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে। এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে নতুন বাজার সন্ধানের বিকল্প নেই। রাশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য, এশিয়া ও ল্যাটিন আমেরিকাভুক্ত দেশগুলোতে রফতানি বাড়াতে হবে। এ বিষয়ে সরকার হয়তো সহযোগিতা দিচ্ছে, আরও সহযোগিতা দরকার। সেসঙ্গে পোশাকশিল্পের উদ্যোক্তাদের নুতন বাজারে পোশাক রফতানি বাড়াতে কাজ করতে হবে। ওইসব দেশগুলোতে মেলাসহ আরও পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। তবেই নতুন বাজারে পোশাক রফতানি বাড়ানো সম্ভব হবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here