Home বাংলা নিউজ বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বাড়ানোই মূল চ্যালেঞ্জ: বাজেট সংলাপ

বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বাড়ানোই মূল চ্যালেঞ্জ: বাজেট সংলাপ

বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বাড়ানোই মূল চ্যালেঞ্জ: বাজেট সংলাপ

জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৬ শতাংশের বৃত্ত ভেঙে ৭ শতাংশে উন্নীত হলেও বেসরকারি বিনিয়োগে স্থবিরতা রয়েছে। গত তিন বছরে নতুন কর্মসংস্থানেও চলছে ভাটা। এ অবস্থায় উচ্চ প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে বেসরকারি বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বাড়ানোই মূল চ্যালেঞ্জ। গতকাল রোববার বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) আয়োজিত বাজেট সংলাপে বক্তারা এমন মতামত দেন। সংলাপে বাংলাদেশের উন্নয়নের ধরন নিয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এবং সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী আমির খসরু মাহামুদ চৌধুরীর মধ্যে বিতর্ক হয়েছে।

রাজধানীর গুলশানে হোটেল লেকশোরে ২০১৬-১৭ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর এ সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। সাবেক অর্থমন্ত্রী এম সাইদুজ্জামানের সঞ্চালনায় সংলাপে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। সংলাপে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান।

পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, মালয়েশিয়া, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড ও ফিলিপাইনের চেয়ে জিডিপি-বিনিয়োগ অনুপাত বাংলাদেশের বেশি। ওই সব দেশ যদি নিম্ন বিনিয়োগ করে উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জন বা উন্নতি করতে পারে, বাংলাদেশও পারবে। তিনি বলেন, ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ উন্নত দেশে পরিণত হবে।

পরিকল্পনামন্ত্রী এ বক্তব্যে দ্বিমত পোষণ করে এম সাইদুজ্জামান বলেন, নিম্ন মধ্যম আয়ের থেকে ৩০ বছরের মধ্যে উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশ হয়েছে একমাত্র দক্ষিণ কোরিয়া। উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশ হতে দেশটি তখন শিল্প খাতে বিপুল বিনিয়োগ করেছিল। শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতেও যথেষ্ট বিনিয়োগ হয়েছে।

আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, পরিকল্পনামন্ত্রীর কথা শুনে মনে হচ্ছে, ২০৪১ সালের আগে কোনো নির্বাচন হচ্ছে না। ইদানীং অনেকে বলার চেষ্টা করেন, আগে উন্নয়ন, পরে গণতন্ত্র। তাহলে কি আমরা গণতন্ত্র চাই না_ প্রশ্ন রাখেন তিনি । তিনি বলেন, তিন বিলিয়ন ডলারের পদ্মা সেতু নয় বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে, এটা নিশ্চিত। যখন তিন বিলিয়ন ডলারের প্রকল্প নয় বিলিয়ন ডলারে হয়, তাহলে কীভাবে বেসরকারি বিনিয়োগ আসবে। অথচ গণতন্ত্র বাদ দিয়ে উন্নয়নের কথা বলা হচ্ছে। বিনিয়োগ পরিবেশ না থাকায় অনেক টাকা পাচার হয়ে যাচ্ছে। ব্যবসায়ীদের মধ্যে স্বস্তি না থাকলে বিনিয়োগ হবে না। যতক্ষণ গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা না হবে ততক্ষণ বেসরকারি বিনিয়োগ হবে না।

অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, পুরনো ১০০ বিধিবিধান বাজেট বাস্তবায়নে বাধা সৃষ্টি করেছে। আবার প্রকল্প পরিচালকরা এডিপি বাস্তবায়নে গতি বাড়ানোর বদলে স্থবিরতা করছে। ৮০ শতাংশ কাজ হয়ে গেলেই বাস্তবায়ন বাদ দিয়ে সময় বাড়িয়ে সংশোধনের জন্য পাঁয়তারা করে মূলত প্রকল্প থেকে সুযোগ-সুবিধা নেওয়ার জন্য।

মূল প্রবন্ধে মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, নতুন বাজেটে কয়েকটি প্রশ্ন সামনে চলে এসেছে। গত চার বছরের রাজস্ব ঘাটতি ভেঙে লক্ষ্য পূরণ করতে পারবে কি-না রাজস্ব বোর্ড। এডিপি পুরনো বৃত্ত ভাঙা সম্ভব হবে কি-না। নতুন ভ্যাট আইন পরিকল্পনা অনুযায়ী বাস্তবায়ন সম্ভব কি-না। বাজেট ব্যয় গুণগত মান ধরে রাখার বড় চ্যালেঞ্জও রয়েছে সরকারের।

অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি ড. আবদুর রাজ্জাক বলেন, গত কয়েক বছরে সরকারের সাফল্যের পাল্লা ভারী হলেও এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ না করার মতো ব্যর্থতা রয়েছে। জাপান, কোরিয়ায় গ্যাস না থাকলেও তারা আমদানি করে চাহিদা মেটাচ্ছে। তিনি বলেন, কৃষক ধানের দাম পাচ্ছেন না। আবার সবজি উৎপাদন করলেও মুনাফা করছেন অন্যরা। সরকারের বেঁধে দেওয়া ধানের মূল্য পাচ্ছেন মিল মালিকরা।

এবিবির সাবেক চেয়ারম্যান এবং মেঘনা ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নুরুল আমিন বলেন, দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় থাকলেও একটা অনিশ্চয়তা এখনও রয়ে গেছে। উদ্যোক্তারা নতুন বিনিয়োগ কম করছেন। বিজিএমইএর প্রথম সহসভাপতি ফারুক হাসান বলেন, রাজস্ব নীতি না থাকায় উদ্যোক্তারা ঝুঁকির মুখে পড়ছেন। আগামী বাজেটে হঠাৎ করে রফতানিতে উৎসে কর দশমিক ৬০ শতাংশ থেকে ১ দশমিক ৫০ শতাংশ করা হয়েছে। এতে দেশের সবচেয়ে বড় রফতানি খাত ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মজিদ, বিল্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফেরদৌস আরা ও সাবেক সাংসদ ফজলুল আজিম।