Home Bangla Recent সাড়ে ছয় কোটি ইউরো ক্ষতিপূরণ চাইবে লিবার্টি

সাড়ে ছয় কোটি ইউরো ক্ষতিপূরণ চাইবে লিবার্টি

সাভারের লিবার্টি ফ্যাশন নামের পোশাক কারখানা ভবন ধসে পড়ার মতো ঝুঁকিপূর্ণ নয়। গত মার্চে ইউরোপীয় ক্রেতাদের জোট অ্যাকর্ডের পরিদর্শনের পর বিষয়টি প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে। সে জন্য চার বছর আগে ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ আখ্যা দিয়ে কারখানাটি বন্ধ করার দায়ে টেসকো, প্রাইমার্ক, ডেভেনহামস ও লি অ্যান্ড ফাংয়ের কাছে ৬ কোটি ৫০ লাখ ইউরো (এক ইউরো= ৯০ টাকা) ক্ষতিপূরণ চাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে লিবার্টি ফ্যাশন ওয়্যার লিমিটেড।

জানা যায়, ক্ষতিপূরণ আদায়ে প্রথমে অ্যাকর্ড এবং ওই চার ব্র্যান্ড ও ক্রেতাপ্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে সালিশি ব্যবস্থায় যাবে লিবার্টি ফ্যাশন কর্তৃপক্ষ। দু-এক দিনের মধ্যে বিষয়টি সম্পন্ন হবে। শেষ পর্যন্ত এই ব্যবস্থায় কাজ না হলে নেদারল্যান্ডসের আমস্টারডামের আদালতে মামলা করবে তারা। এই শহরেই অ্যাকর্ডের আন্তর্জাতিক কার্যালয়। এই জোটের সদস্য হচ্ছে টেসকো, প্রাইমার্ক, ডেভেনহামস এবং লি অ্যান্ড ফাং।

বিষয়টি নিশ্চিত করে লিবার্টির চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোজাম্মেল হক গতকাল রোববার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের কারখানা ভবনে বড় কোনো সমস্যা ছিল না। তারপরও ৬০ ঘণ্টার মধ্যে ভেঙে পড়বে এমন অজুহাতে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। এ জন্য ৪ হাজার শ্রমিক বেকার হয়েছেন। আমাদের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৫৫৯ কোটি টাকা।’ তিনি বলেন, ‘টেসকোর খামখেয়ালির কারণে লিবার্টির আজকের এই করুণ অবস্থা। সে জন্যই ক্ষতিপূরণ চাওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আইনি ব্যবস্থা নিতে আমাদের আইনজীবী ইতিমধ্যে আমস্টারডামে পৌঁছে গেছেন।’

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১৩ সালে রানা প্লাজা ধসের পরের মাসে যুক্তরাজ্যভিত্তিক খুচরা বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান টেসকোর প্রকৌশলী সংস্থা মিডওয়ে কন্সালটেন্সি সার্ভিসকে (এমসিএস) দিয়ে লিবার্টির কারখানা ভবন নিরীক্ষা করায়। কারখানা পরিদর্শন করে এমসিএস প্রতিবেদন দিয়ে বলেছিল, ‘কারখানার ২ নম্বর ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ। ৬০ ঘণ্টার মধ্যেই ধসে পড়বে।’

এমসিএসের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে টেসকো লিবার্টি থেকে পোশাক না কেনার ঘোষণা দেয়। একই সঙ্গে অন্য ১১ ক্রেতাকে বিষয়টি ই-মেইলের মাধ্যমে জানিয়ে দেয় টেসকো। তখন সেই অন্য বিদেশি ক্রেতারাও লিবার্টির ক্রয়াদেশ বাতিল করে। তবে লিবার্টি কর্তৃপক্ষ বরাবরই বলে আসছে, তাদের কারখানা নিরাপদ।

রানা প্লাজা ধসের পর বাংলাদেশের পোশাক কারখানার কর্মপরিবেশ উন্নয়নে অ্যাকর্ড গঠিত হয়। টেসকো অ্যাকর্ডের সদস্য হওয়ায় লিবার্টি কর্তৃপক্ষ কারখানাটি পরিদর্শন করতে অনুরোধ জানায়। তবে এমসিএসের নিরীক্ষা প্রতিবেদন গ্রহণযোগ্য ধরে নিয়ে অ্যাকর্ড লিবার্টির আবেদন আমলে নেয়নি। পরে লিবার্টি কর্তৃপক্ষ আইনি লড়াইয়ে নামলে তাদের পক্ষেই রায় দেন উচ্চ

আদালত। শেষ পর্যন্ত আদালতের নির্দেশে গত ২২ ও ২৩ মার্চ কারখানা ভবনের কাঠামোগত, বৈদ্যুতিক ও অগ্নি-সংক্রান্ত পরিদর্শন করে অ্যাকর্ড।

লিবার্টির কারখানায় তিন ধরনের পরিদর্শনে বিভিন্ন ধরনের ত্রুটি খুঁজে পায় অ্যাকর্ড। ২ নম্বর ভবনের কাঠামোগত পরিদর্শনের প্রতিবেদনে বলা হয়, ভবনের বিস্তারিত প্রকৌশলগত সমীক্ষা (ডিইএ) করাতে হবে। যোগ্যতাসম্পন্ন প্রকৌশলী দিয়ে কলাম, বিম ও স্ল্যাবে লোড পরীক্ষা করাতে হবে। অবিলম্বে ভবনের বিভিন্ন তলার ভার কমাতে হবে। পলেস্তারার ফাটল সংস্কার করতে হবে।

অ্যকর্ডের পরিদর্শন বিষয়ে মোজাম্মেল হক বলেন, ‘অ্যাকর্ডের পরিদর্শন প্রতিবেদন দেখলেই বোঝা যায়—এমসিএস যে বলেছিল ৬০ ঘণ্টার মধ্যে ভবন ধসে পড়বে, সেটি সত্য নয়।’ তিনি আরও বলেন, ‘কারখানা পরিদর্শনে যেসব ত্রুটি চিহ্নিত করেছে, সেগুলো সংস্কার করতে আমাদের বেশি সময় লাগবে না।’

জানতে চাইলে তৈরি পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘লিবার্টির সঙ্গে যে ব্যবহার করা হয়েছে, সেটি যুক্তিযুক্ত হয়নি। ক্রেতা ও সরবরাহকারী উভয় পক্ষেরই কিছু ভুল-বোঝাবুঝি ছিল।’ তবে তিনি বলেন, ‘সংক্ষুব্ধ যে কেউ আইনি ব্যবস্থায় যেতে পারেন। তার সেই অধিকার আছে। তবে লিবার্টির বিষয়টি আলাপ-আলোচনার মাধ্যমেই মীমাংসা করা উচিত।’

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here