Home Bangla Recent ১৪ বছরেও শেষ হয়নি চামড়া শিল্পনগরী স্থাপন ব্যয় বেড়েছে ৯০৩ কোটি টাকা

১৪ বছরেও শেষ হয়নি চামড়া শিল্পনগরী স্থাপন ব্যয় বেড়েছে ৯০৩ কোটি টাকা

দীর্ঘ ১৪ বছর ধরে চলছে সাভারে চামড়া শিল্পনগরী স্থাপনের প্রকল্প। ২০০৩ সালে নেয়া এ প্রকল্পটি তিন বছরে সমাপ্ত করার কথা ছিল। দীর্ঘ সময় ধরে প্রকল্প বাস্তবায়ন করার কারণে এখন এটির ব্যয় ৯০২ কোটি ৯৬ লাখ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে, যেখানে মূল প্রকল্প ব্যয় ছিল ১৭৫ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। ১৪ বছরে কাজের অগ্রগতি ৮৭ শতাংশ। প্রকল্প সাহায্য না পাওয়ায় সরকারি অর্থায়নেই বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রকল্পের মেয়াদ ও সময় বাড়ানো হয় বলে বাস্তবায়নকারী সংস্থা সূত্রে জানা গেছে। আবারো দুই বছর মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব আজ মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে তোলা হচ্ছে।

বিসিকের পাঠানো প্রস্তাবনা অনুযায়ী, দূষণমুক্ত চামড়া শিল্পনগরী গড়তে শিল্প মন্ত্রণালয় সাভারের হেমায়েতপুরে প্রকল্প নেয় ২০০৩ সালে। এটি ঢাকার ঘনবসতিপূর্ণ হাজারীবাগ এলাকায় ছিল। ওই এলাকায় শিল্পগুলোর বর্জ্য বিজ্ঞানসম্মতভাবে ব্যবস্থাপনার কোনো ব্যবস্থা ছিল না। ফলে জনজীবন মারাত্মকভাবে বিপর্যন্ত হচ্ছিল। তাই ১৭৫ কোটি সাত লাখ টাকা ব্যয়ে ২০০৫ সালের ডিসেম্বরে শিল্পনগরীটি সমাপ্ত করে কারখানাগুলো স্থানান্তরের জন্য একনেক থেকে প্রকল্পটি অনুমোদন দেয়া হয়। বিসিক ১৩ বছর ধরে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। হাজারীবাগের ১৫৪টি কারখানা এ নগরীতে জমি বরাদ্দ পেয়েছে। উচ্চ আদালত থেকে নির্দেশনা দেয়ার পরও শিল্পনগরীটি এখনো প্রস্তুত হয়নি। প্রায় ২০০ একর জমির ওপর করা ২০৫ প্লটের মাধ্যমে বরাদ্দকৃত শিল্প ইউনিটের সংখ্যা ১৫৫।

অনুমোদনের এক বছরের মাথায় ব্যয় অপরিবর্তিত রেখেই প্রকল্পের মেয়াদ এক বছর বাড়িয়ে ২০০৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত করা হয়। পরে আবার ছয় মাস বাড়ানো হয়। প্রকল্প চলাকালে বৈদেশিক কোনো সহায়তা না পাওয়ায় ব্যয় ৫৪৫ কোটি ৩৬ লাখ টাকা করে মেয়াদ সাড়ে তিন বছর বাড়িয়ে ২০১০ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়। এরপরই প্রকল্পে যুক্ত করা হয় নতুন নতুন অঙ্গ। প্রকল্পের সিইটিপি, ডাম্পিং ইয়ার্ড, পানি উত্তোরণ, পরিশোধন ও সরবরাহ ব্যবস্থার কাজ জুন ২০১০ সালের মধ্যে সমাপ্ত করা সম্ভব হয়নি। ফলে পরিকল্পনা কমিশনের কাছে দেয়া প্রস্তাবনা অনুযায়ী মেয়াদ আবারো দুই বছর বাড়ানো হয়। ১০ বছর পরে এসে প্রকল্পের ব্যয় বাড়িয়ে এক হাজার ৭৮ কোটি ৭১ লাখ টাকায় নিয়ে যাওয়া হয়। এর পরেও এক বছর করে দুইবার মেয়াদ বাড়ানো হয়, যা চলতি বছরের জুনে শেষ হয়ে যায়। কিন্তু প্রকল্পের কাজ হয়েছে জুন পর্যন্ত ৮৭ শতাংশ। ফলে আবার দুই বছর সময় বাড়ানোর জন্য প্রস্তাবনা যাচ্ছে একনেকে।

ব্যয় বিশ্লেষণে দেখা যায়, কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য ডাম্পিং ইয়ার্ড নির্মাণব্যয় চার কোটি টাকা থেকে তিন গুণ হয়ে ১২ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। পানি সরবরাহ ব্যবস্থা নির্মাণ খাতের ব্যয় ২৫ কোটি টাকা থেকে ২৭ কোটি ৩৯ লাখ টাকা করা হয়েছে। আধুনিক ফায়ার সার্ভিস স্টেশন নির্মাণের জন্য ভবন নির্মাণ, অগ্নিনির্বাপক যানবাহন ও সরঞ্জামাদি ক্রয় খাতে ব্যয় ১৭ লাখ টাকা থেকে ১০ কোটি ৩২ লাখ টাকায় উন্নীত করা হয়েছে। মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ খাতে ব্যয় ৭৫ লাখ টাকা থেকে বৃদ্ধি করে ২৫ কোটি ৬৯ লাখ টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে। মেইন গেট একটি করার কথা ছিল। তা এখন দুইটি করা হচ্ছে। একটি গেটের জন্য ব্যয় ১৫ লাখ ১৫ হাজার টাকা ধরা হয়। এখন দুইটি গেটের জন্য ব্যয় এক কোটি টাকা করা হয়েছে। আর ক্ষতিপূরণ খাতে রাখা হয়েছে ১০ কোটি তিন লাখ টাকা।

শিল্প মন্ত্রণালয় বলছে, প্রকল্পের ২০০ একর ভূমি অধিগ্রহণ, পরিবেশগত প্রভাব নিরীণ, প্রকল্পের সয়েলটেস্ট, ট্রপোগ্রাফিক্যাল সার্ভে, হাইড্রোলজিক্যাল স্টাডি, ভূমি উন্নয়ন, প্রশাসনিক ভবন (প্রথম পর্ব), প্রকল্প সাইটের পরীা, পুলিশ ফাঁড়ি, ফায়ার ব্রিগেড শেড, পাম্প ড্রাইভারর্স কোয়ার্টার, ড্রেন ও কালভার্ট, পানি সরবরাহ লাইন, প্রবেশ সড়ক, রাস্তা নির্মাণ ও সীমানা প্রাচীরের নির্মাণকাজ পুরোপুরি শেষ করা হয়েছে।

মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ১৫৫টি কারখানার মধ্যে ১৫৩টি তাদের লে-আউট প্ল্যান জমা দিয়েছে। সবগুলোরই লে-আউট অনুমোদন দেয়া হয়েছে। অনুমোদিত লে-আউট প্ল্যান অনুযায়ী ইতোমধ্যে ১৪৩টি শিল্পপ্রতিষ্ঠান তাদের কারখানা নির্মাণকাজ শুরু করেছে। বাকি ১২টি প্লটের নির্মাণকাজ মামলা ও উচ্চ আদালতের পর্যবেক্ষণের কারণে স্থগিত রয়েছে। অন্য দিকে ৫৩টি ট্যানারি শিল্প ট্যানিং ড্রাম স্থাপন করেছে। শিল্পনগরীতে ওয়েটব্লু ট্যানারি প্রক্রিয়াজাতকরণ শুরু করেছে। ১৩০টি ট্যানারি শিল্প স্থায়ী বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য আবেদন করেছে। শিল্প কারখানা প্রতিষ্ঠান ১২০টি গ্যাস সংযোগের জন্য আবেদন জমা দিয়েছে। শুধু দুইটি প্রতিষ্ঠানে গ্যাস সংযোগ প্রক্রিয়া হচ্ছে। ৪৫টি প্রতিষ্ঠান পানির সংযোগের আবেদন দিয়েছে। ৪২টি শিল্পকে পানির মিটার দেয়া হয়েছে।

ট্যানারি-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চামড়া প্রক্রিয়াকরণের পর বর্জ্য মিশ্রিত পানি শোধনের জন্য সিইটিপি এখনো প্রস্তুত হয়নি। এ ছাড়া এখনো অনেকে বিদ্যুৎ সংযোগ পাননি। এ অবস্থায় সাভারে গেলে উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here