Home Bangla Recent উৎসব ভাতা দেয়নি অর্ধেক গার্মেন্টস

উৎসব ভাতা দেয়নি অর্ধেক গার্মেন্টস

পর্যায়ক্রমে ছুটির নির্দেশ:

মহাসড়কে যানজট এড়াতে তৈরি পোশাক খাতের শ্রমিকদের ২২ থেকে ২৫ জুন পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে ছুটি দিতে মালিকদের নির্দেশ দিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। গতকাল সচিবালয়ে বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে তিনি এ নির্দেশ দেন।

দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত এ বৈঠক চলে। বৈঠক শেষে মন্ত্রী জানান, ঈদুল ফিতর উপলক্ষে দেশের সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি। কলকারখানার শ্রমিক এবং গার্মেন্টস শ্রমিক যারা রাজধানী থেকে গ্রামে যাবে তাদের বাড়ি ফেরা নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি।

এদিকে পূর্ব প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ২০ রোজার মধ্যে উত্সব ভাতা দেননি গার্মেন্টস মালিকরা। পোশাক শিল্প শ্রমিকরা ২০ রোজার (১৬ জুন) মধ্যে উত্সব ভাতা পাবে-এমন সিদ্ধান্ত হয়েছিল গার্মেন্টস শিল্প-বিষয়ক ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট কোর কমিটির সভায়। এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন পোশাক শিল্প মালিকরাও। কিন্তু বরাবরের মতো এবারও নিজেদের প্রতিশ্রুতি রাখতে পারেননি শিল্প মালিকরা। ঘোষিত সময় পেরিয়ে গেলেও উত্সব ভাতা পেয়েছে অর্ধেকেরও কম কারখানার শ্রমিক।

গতকালের বৈঠক শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ঢাকা জেলায় প্রবেশ ও বের হওয়ার পথগুলোয় হাইওয়ে পুলিশ ও জেলা পুলিশের সমন্বয়ের মাধ্যমে রাস্তা যানজটমুক্ত করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া নৌপথে সদরঘাট, পাটুরিয়া, দৌলতদিয়া, মাওয়াঘাট ও কাওড়াকান্দি ঘাটে যানজট নিরসনে নৌ-পুলিশ ও লঞ্চ মালিকদের সমন্বয়ের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তিনি বলেন, ছুটির আগেই পোশাক শ্রমিকদের বেতন-ভাতাসহ যাবতীয় পাওনা পরিশোধ করারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মন্ত্রী বলেন, গার্মেন্টস কর্মীদের ২২ জুন থেকে ২৫ জুন পর্যন্ত ধাপে ধাপে ছুটির ব্যবস্থা থাকবে। এসব সিদ্ধান্তের বিষয়ে মালিকপক্ষ একমত পোষণ করেছে। ঈদে ব্যবসায়ীরা যেন নিরাপদে ব্যবসা কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারেন সেই ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হবে বলে জানান মন্ত্রী। তিনি জানান, জাতীয় ঈদগাহসহ দেশের প্রতিটি ঈদের জামায়াতে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হবে। জাতীয় ঈদগাহে সিসি ক্যামেরা থাকবে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ঈদের ছুটিতে শহরের প্রতিটি এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হবে। বিশেষ করে ডিপ্লোমেটিক জোন ও গুরুত্বপূর্ণ আবাসিক এলাকায় নিরাপত্তা বাহিনী তত্পর থাকবে। বৈঠকে বিকেএমইএর সভাপতি সেলিম ওসমান, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিরাপত্তা বিভাগের সচিব, পুলিশের আইজি, কোস্টগার্ড প্রধান, আনসার প্রধান, র্যাব প্রধান, শিল্প পুলিশ প্রধান, বিজিবি প্রধান, ফায়ার সার্ভিস প্রধান এবং বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

এখনও মেলেনি উত্সব ভাতা:

এদিকে প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী এখনও ঈদ বোনাস বা উত্সব ভাতা প্রদান করেননি সব গার্মেন্টস কারখানার মালিক।  পোশাক শিল্প শ্রমিকরা ২০ রোজার মধ্যে উত্সব ভাতা পাবেন-এমন সিদ্ধান্ত হয়েছিল গার্মেন্টস শিল্প বিষয়ক ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট কোর কমিটির সভায়। এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন পোশাক শিল্প মালিকরাও। কিন্তু প্রতিশ্রুতি রাখেননি তারা।

প্রতিশ্রুত সময়ে উত্সব ভাতা প্রদানে সবচেয়ে পিছিয়ে আছে চট্টগ্রামের কারখানাগুলো। বন্দরনগরীতে তৈরি পোশাক ও অন্যান্য খাত মিলিয়ে শিল্প প্রতিষ্ঠান আছে ১ হাজার ২০টি। এর মধ্যে পোশাক কারখানার সংখ্যা ৬৩৮। শিল্প-পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, এসব কারখানার কোনোটিই শুক্রবার পর্যন্ত উত্সব ভাতা পরিশোধ করেনি। তবে গতকাল থেকে কিছু কিছু কারখানায় উত্সব ভাতা প্রদান শুরু হয়েছে। ১৯-২১ জুনের মধ্যে পরিশোধের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন শিল্প মালিকরা।

জানা গেছে, চট্টগ্রামের অনেক পোশাক কারখানা শ্রমিকদের মে মাসের বেতন এখনও পরিশোধ করেনি। উত্সব ভাতা প্রদানের শেষ দিন গত শুক্রবার পর্যন্ত মে মাসের বেতন পরিশোধ করেছে চট্টগ্রামের ৫০৯টি পোশাক কারখানা। এ অবস্থায় চট্টগ্রামে ৭০টির মতো পোশাক কারখানা শ্রম অসন্তোষের ঝুঁকিতে রয়েছে।

শ্রমিক প্রতিনিধিরা বলছেন, অধিকাংশ কারখানায় শ্রমিকদের উত্সব ভাতা পরিশোধ হয়নি। বাংলাদেশ জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম রনি বলেন, ক্ষুদ্র-মাঝারি অনেক কারখানায় বেতন-বোনাস পাওয়া নিয়ে এখনও সংশয় রয়েছে। আমাদের হিসাবে ঝুঁকিপূর্ণ কারখানার সংখ্যা প্রায় ৫০০।

নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ ও নরসিংদীতে পোশাক এবং অন্যান্য খাত মিলিয়ে মোট শিল্প-কারখানা রয়েছে ২ হাজার ৪৪২টি। এর মধ্যে পোশাক কারখানার সংখ্যা ৯২৫টি। ওই এলাকার শিল্প পুলিশ জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত ২৫২টি কারখানায় উত্সব ভাতা দেওয়া হয়েছে। মে মাসের বেতন পরিশোধ নিয়েও সংশয় রয়েছে অনেক কারখানায়। বেতন-বোনাস নিয়ে সমস্যা তৈরি হতে পারে এমন কারখানার সংখ্যা শিল্পাঞ্চলটিতে ৩৬৬।

ঢাকার আশুলিয়া, সাভার ও ধামরাই এলাকায় কারখানা আছে মোট ১ হাজার ৭৩টি। শিল্প পুলিশ বলছে, এ অঞ্চলের ২৭ শতাংশ বা ২৯৭টি কারখানা উত্সব ভাতা পরিশোধ করেছে। বড় কোনো সমস্যা না হলেও কিছু কারখানার পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন শিল্প পুলিশ। উদ্বেগের কারণ রয়েছে এমন কারখানা আছে এ অঞ্চলে ২৫টি।

গাজীপুর শিল্পাঞ্চলে কারখানা রয়েছে মোট ১ হাজার ৮৮৪টি। এর মধ্যে পোশাক কারখানার সংখ্যা ১ হাজার ৩০০টি। এ অঞ্চলের শিল্প পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, কারখানায় উত্সব ভাতা পরিশোধ কেবল শুরু হয়েছে। শ্রম অসন্তোষের ঝুঁকিতে আছে ১৮২টি কারখানা। গতকাল এ এলাকার পাঁচটি কারখানায় কাজ বন্ধ করে দেওয়ার ঘটনা ঘটে। বেশিরভাগ কারখানা কর্তৃপক্ষই শ্রমিকের সঙ্গে সমঝোতার ভিত্তিতে উত্সব ভাতা পরিশোধ করছে।

বিজিএমইএর সহ-সভাপতি মোহাম্মদ নাসির জানান, পোশাক কারখানার বেতন-বোনাস পরিশোধ শুরু হয়েছে। সংগঠনের পর্যবেক্ষণের আওতায় ৪০০-৫০০ কারখানা আছে, যেগুলোয় অর্থ সঙ্কট চলছে। এর মধ্যে বেশি সমস্যাগ্রস্ত কারখানা রয়েছে ১০-১২টি। এসব কারখানায় ঈদের আগে বেতন-বোনাস না হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here