গত বছর দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২২৩ কোটি ডলারের সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগ (এফডিআই) এসেছে বাংলাদেশে। দেশের ইতিহাসে এটিই সর্বোচ্চ এফডিআই। দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সর্বোচ্চ ৪ হাজার ৪২০ কোটি ৮০ লাখ ডলার এফডিআই এসেছে ভারতে। ২০১৪ সালে বাংলাদেশে ১৫৫ কোটি ১০ লাখ ডলারের এফডিআই এসেছিল। গত বছর সেটি ৪৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ২২৩ কোটি ৫০ লাখ ডলার হয়। ভারতের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২৭ শতাংশ। তার মানে, প্রবৃদ্ধির বিচারে দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দেশের পাশাপাশি ভারতকেও পেছনে ফেলেছে বাংলাদেশ।
ইউনাইটেড নেশনস কনফারেন্স অন ট্রেড অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আঙ্কটাড) ওয়ার্ল্ড ইনভেস্টমেন্ট রিপোর্ট (ডব্লিউআইআর) বা বৈশ্বিক বিনিয়োগ প্রতিবেদন ২০১৬-তে এসব তথ্য উঠে এসেছে। রাজধানীর দিলকুশায় নিজেদের মিলনায়তনে গতকাল বুধবার প্রতিবেদনটি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করে বিনিয়োগ বোর্ড (বিওআই)। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজবিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী। প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিনিয়োগ বোর্ডের নির্বাহী চেয়ারম্যান এস এ সামাদ। প্রতিবেদনের সারসংক্ষেপ তুলে ধরেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এম ইসমাইল হোসেন।
আঙ্কটাডের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত বছর বাংলাদেশের গ্যাস, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে সর্বোচ্চ ৫৭ কোটি ডলারের এফডিআই এসেছে। ২০১৪ সালে এ খাতে এসেছিল ৫ কোটি ডলারের এফডিআই। এ ছাড়া গত বছর বস্ত্র ও পোশাক খাতে ৪৪ কোটি, ব্যাংকিংয়ে ৩১ কোটি, টেলিযোগাযোগে ২৫ কোটি, খাদ্যপণ্যে সাড়ে ১২ কোটি এবং কৃষি ও মৎস্য খাতে আড়াই কোটি ডলার এফডিআই এসেছে।
এদিকে, ২০১৫ সালে সারা বিশ্বে ১ দশমিক ৭৬ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার (এক লাখ কোটি ডলারে এক ট্রিলিয়ন ডলার) এফডিআই এসেছে। এটি ২০০৮-০৯ অর্থবছরের বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার পর সর্বোচ্চ এবং ২০১৪ সালের অর্জিত এফডিআইয়ের চেয়ে ৩৮ শতাংশ বেশি। গত বছর বৈশ্বিক এফডিআইয়ের সবচেয়ে বেশি ৭২ হাজার ১০০ কোটি ডলার এসেছে দুই বা তার বেশি প্রতিষ্ঠানের একীভূত ও অধিগ্রহণের কারণে।
এম ইসমাইল হোসেন বলেন, বাংলাদেশে কোম্পানির একীভূত ও অধিগ্রহণ এখনো হয়নি। তবে দু-একটির ব্যাপারে আলোচনা হচ্ছে। একীভূত ও অধিগ্রহণ হলে এফডিআই ৭০০ থেকে ৮০০ কোটি ডলারে চলে যাবে বলে মন্তব্য করেন তিনি। আঙ্কটাডের প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী, গত বছর একক দেশ হিসেবে সবচেয়ে বেশি ৩৮ হাজার ডলারের এফডিআই পেয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। দ্বিতীয় ও তৃতীয় অবস্থানে আছে যথাক্রমে হংকং ও চীন। এদিকে গত বছর কৃষির মতো প্রাথমিক খাতে বৈশ্বিক এফডিআই কমেছে। তবে উৎপাদন খাতে এফডিআই ৩৮ হাজার ৮০০ কোটি ডলার বৃদ্ধি পেয়েছে।
প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের এফডিআই ২ বিলিয়ন ডলার হওয়ায় বিনিয়োগ বোর্ডকে অভিনন্দন জানান তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘ভালো নেতৃত্ব ও দেশে শান্তি থাকলে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হবেই। গণতন্ত্রের ঘাটতি বড় কোনো সমস্যা নয়। পৃথিবীর যেসব দেশ বড় হয়েছে, তাদের মধ্যে কোরিয়া ও সিঙ্গাপুর এ ক্ষেত্রে উৎকৃষ্ট উদাহরণ। সব জিনিস একসঙ্গে হয় না। মিডিয়ার (গণমাধ্যম) কাছে অনুরোধ, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও সরকারকে সমর্থন দিন।’
প্রধানমন্ত্রীর এই উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা স্বর্ণযুগে না হলেও একটা ভালো যুগে পদার্পণ করেছি। আমরা সবাই মিলে যদি কিছুটা সহনশীল হতাম এবং আরও শক্তি জোগাড় করে তরুণ সমাজের হাতে তুলে দিতে পারি, তাহলে বাকিটা তারা দেখবে।’এস এ সামাদ বলেন, ‘এফডিআই বাড়াতে দেশের বিনিয়োগ পরিবেশের পরিবর্তন দরকার। এ ছাড়া ঝুঁকি কমানোর পাশাপাশি বিনিয়োগকৃত অর্থ উঠিয়ে আনার নিশ্চয়তাও প্রয়োজন। তবে বাংলাদেশে বিনিয়োগ করা অর্থ উঠিয়ে আনার হার অনেক বেশি, সে জন্যই যারা আছে তারা যেতে চায় না। একই সঙ্গে আমি মনে করি, বাংলাদেশে ঝুঁকিও কম।’
বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাধারণ সম্পাদক জামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, বিনিয়োগ বাড়াতে হলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক, বিনিয়োগ বোর্ড, এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনসহ সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থাগুলোর পুনর্গঠন করতে হবে। সরকারের সব নিয়ন্ত্রক সংস্থার কর্মকর্তাদের চাকরির শুরুতেই প্রশিক্ষণ দিতে হবে, কীভাবে বিনিয়োগ আনতে হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ বিরূপাক্ষ পাল, বিনিয়োগ বোর্ডের নির্বাহী সদস্য নাভাস চন্দ্র মণ্ডল প্রমুখ।