তৈরি পোশাক খাতের উৎসে কর কমানো, ব্যক্তি বিনিয়োগে রেয়াতি সুবিধা বৃদ্ধি ও মেডিটেশন সেবায় মূল্য সংযোজন কর (মূসক) প্রত্যাহারসহ বেশ কিছু সংশোধনী এনে প্রস্তাবিত বাজেট চূড়ান্ত করা হচ্ছে। তৈরি পোশাক শিল্পের ব্যবসায়ীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এ খাতের উৎসে কর শূন্য দশমিক ৮০ পয়সা নির্ধারণ করা হতে পারে। এ ছাড়া রফতানিমুখী অন্যান্য খাতের জন্য উৎসে কর এক টাকা করা হতে পারে। ব্যক্তি বিনিয়োগে রেয়াতি সুবিধা কিছুটা বাড়িয়ে ২৫ ভাগে উন্নীত হতে পারে।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সংশোধনী প্রস্তাবগুলো অর্থবিলের মাধ্যমে জাতীয় সংসদে পাস হবে ২৯ জুন। পরদিন পাস হবে ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেট। ১ জুলাই থেকে কার্যকর হবে নতুন বাজেট। গত ২ জুন ২০১৬-১৭ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। ঘোষিত বাজেটে কর প্রস্তাবের বিষয়ে ব্যবসায়ীসহ সংশ্লিষ্টরা প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। তাদের মতামত ও বাস্তব অবস্থা বিচার-বিশ্লেষণ করে আমদানি, মূল্য সংযোজন কর ও আয়করে কিছু ক্ষেত্রে পরিবর্তন আনা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে এনবিআরের বৈঠক হয়। সেখানে প্রস্তাবিত বাজেটের সংশোধনীগুলো চূড়ান্ত হয়। এনবিআরের মাধ্যমে এবার রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে দুই লাখ তিন হাজার কোটি টাকা।
বাজেট ঘোষণায় তৈরি পোশাকসহ রফতানি খাতে উৎসে কর শূন্য দশমিক ৬০ শতাংশ থেকে আড়াই গুণ বাড়িয়ে দেড় টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়। এ প্রস্তাবে তৈরি পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ এবং বিকেএমইএ তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে। পোশাক খাতের উৎসে কর আগের মতো বহাল এবং করপোরেট কর হার প্রস্তাবিত ২০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ ভাগে নির্ধারণের দাবি জানান তারা। সূত্র জানায়, এ দাবির পরিপ্রেক্ষিতে তৈরি পোশাক খাতের কর হার দেড় টাকার পরিবর্তে শূন্য দশমিক ৮০ পয়সা নির্ধারণ করা হতে পারে। তবে করপোরেট কর একই রাখা হচ্ছে। রফতানি আয়ের বৃহৎ খাত তৈরি পোশাক শিল্প থেকে বর্তমানে উৎসে কর বাবদ আদায় দেড় হাজার কোটি টাকা। শূন্য দশমিক ৮০ পয়সা কর হার কার্যকর হলে বর্তমানের চেয়ে ৫০০ কোটি টাকা বেশি আয়কর আদায় হবে। সূত্র জানায়, পোশাক খাতের বাইরে রফতানিমুখী অন্যান্য খাতের জন্য উৎসে কর ১ টাকা নির্ধারণ করা হতে পারে।
দেশে মেডিটেশন সেবার প্রসার ঘটার প্রেক্ষাপটে প্রস্তাবিত বাজেটে এ খাতকে ভ্যাটের আওতায় আনা হয়। তবে সমালোচনার মুখে এখন এ সেবাকে ভ্যাটমুক্ত করা হচ্ছে। বাজেট ঘোষণায় প্লাস্টিক ও হাওয়াই চপ্পলের ওপর ভ্যাট আরোপের প্রস্তাব করা হয়। এসব পণ্য বেশির ভাগ ব্যবহার করেন নিম্ন আয়ের মানুষ। এ বিবেচনায় এসব পণ্যের ওপর থেকে ভ্যাট প্রত্যাহার করা হতে পারে।
বাজেট ঘোষণায় ভ্যাটের মামলা নিষ্পত্তির জন্য অ্যাপিলেট আদালতের ফি বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছিল। আগে ফি ছিল মোট অঙ্কের ১০ ভাগ। প্রস্তাবিত বাজেটে তা বাড়িয়ে ৫০ ভাগ নির্ধারণ করা হয়। আদায় বাড়াতে ভ্যাটের মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য এই ফি এখন ২০ ভাগে চূড়ান্ত হতে পারে। নতুন বাজেটে দেশীয় মোটরসাইকেলের উৎপাদন পর্যায়ে ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপের প্রস্তাব করা হয়। এটি সংশোধন করে ভ্যাট প্রত্যাহার হতে পারে।
বাজেট ঘোষণায় ব্যক্তি বিনিয়োগে কর ছাড়ের সুযোগ কিছুটা সীমিত করার কথা বলা হয়। আগে বিনিয়োগে সর্বোচ্চ ৩০ ভাগ পর্যন্ত রেয়াতি সুবিধা দেওয়া হতো। প্রস্তাবিত বাজেটে এ সুবিধা ৩০ ভাগ থেকে কমিয়ে ২০ ভাগে নির্ধারণ করা হয়। ব্যক্তি বিনিয়োগে রেয়াতি সুবিধা সংকোচন করার ফলে করদাতার ওপর চাপ বাড়বে। বাজেটে এই প্রস্তাবে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। এসব বিষয় বিবেচনা করে রেয়াতি সুবিধা কিছুটা বাড়িয়ে ২০ থেকে ২৫ ভাগে উন্নীত করা হতে পারে।