তৈরি পোশাক রপ্তানি বাড়াতে ভারতের কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা বিশেষ প্যাকেজ অনুমোদন করেছে। এতে করে দেশটির উদ্যোক্তারা পোশাক কারখানার যন্ত্রপাতি স্থাপনে ২৫ শতাংশ ভর্তুকি পাবে। এ ছাড়া বিভিন্ন রাজ্য সরকার যে কর আদায় করে, পোশাক কারখানার মালিকদের তা ফেরত দেবে সরকার। বিশেষ এই প্যাকেজ গত বুধবার অনুমোদিত হয়েছে। বিবিসি বাংলা অনলাইনে গতকাল বৃহস্পতিবার এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। ‘গার্মেন্ট শিল্পে বাংলাদেশকে হারাতে চায় ভারত’ শিরোনামের প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, তিন বছরের মধ্যে বস্ত্র ও পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশকে পেছনে ফেলতে চায় ভারত।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশেষ প্যাকেজের আওতায় যন্ত্রপাতিতে ভর্তুকি ও কর ফেরত দেওয়ার কারণে ভারতের রাষ্ট্রীয় কোষাগারে সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকার বোঝা চাপবে। তারপরও ভারতীয় পোশাকশিল্পকে বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতায় সাহায্য করতে এই বাড়তি খরচ করতে পিছপা হবে না সরকার। বিশেষ প্যাকেজে আয়কর ছাড় ও নারীদের পোশাকশিল্পে আরও বেশি করে নিয়োগের ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও বলা হয়েছে। ইউএন কমট্রেডের পরিসংখ্যান দিয়ে ভারত সরকার বলছে, ১৯৯৫ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ আর ভিয়েতনাম থেকে পোশাক রপ্তানিতে ভারত এগিয়ে ছিল। তারপর থেকে ভারতের রপ্তানি কমতে থাকে। ২০০৩ সালে বাংলাদেশ এবং ২০১১ সালে ভিয়েতনামের চেয়ে পোশাক রপ্তানিতে পিছিয়ে পড়ে বাংলাদেশ।
বর্তমানে সারা বিশ্বে পোশাক রপ্তানিতে শীর্ষে চীন। তারপরই বাংলাদেশের অবস্থান। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে ২ হাজার ৫৪৯ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়। ২০১৪ সালে ভারত ১ হাজার ৭০০ কোটি ডলারের বস্ত্র ও পোশাক রপ্তানি করেছিল। বিবিসির প্রতিবেদনে শেষ দিকে বলা হয়েছে, ভারতের প্যাকেজ ঠিকমতো কাজে লাগানো গেলে ২০১৮ সালে দেশটি ৪ হাজার ৩০০ কোটি ডলারের বস্ত্র ও পোশাক রপ্তানি করতে পারবে বলে মনে হয়। আর তখন বাংলাদেশ ৪ হাজার কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করবে।
জানতে চাইলে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সহসভাপতি ফারুক হাসান গত রাতে প্রথম আলোকে বলেন, চীন পোশাকের ব্যবসা থেকে বিভিন্ন কারণে সরে আসছে। অন্যদিকে বৈশ্বিক চাহিদা বছরে গড়ে ৩ শতাংশ করে বাড়ছে। ফলে নতুন ব্যবসা ধরার যে সুযোগ ছিল সেটি ভারতের বিশেষ প্যাকেজের কারণে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে। ২০২১ সালের মধ্যে পোশাক রপ্তানি ৫ হাজার কোটি ডলারে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যমাত্রা হুমকির মধ্যে পড়বে বলে মন্তব্য করেন তিনি। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডির অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ভারত সরকারের বিশেষ প্যাকেজের জন্য সে দেশের উদ্যোক্তারা পোশাক খাতে বিনিয়োগে উৎসাহিত হবেন। তবে ভারত এর আগেও উদ্যোক্তাদের কিছু সুযোগ-সুবিধা দিয়েছে। তখন তাদের পোশাক রপ্তানি বাড়লেও বাংলাদেশকে চাপে ফেলতে পারেনি।