শুল্ক পরিশোধের ঝামেলা না থাকায় ভারতীয় শাড়ি, তৈরি পোশাক, জুতা, স্যান্ডেল, কসমেটিক্সসহ বিভিন্ন পণ্যের দাম অনেক কম। ব্যবসায়ীরা বেশি লাভের আশায় দেশীয় তৈরি পণ্যের চেয়ে ভারতীয় অবৈধ পথে আসা পণ্য বিক্রিতেই আগ্রহী বেশি। এসব কারণে সরকার শত শত কোটি টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। অপরদিকে চাহিদার সুযোগে ইচ্ছামতো দামে ক্রেতাদের পকেট কাটছেন বিক্রেতারা
বিভিন্ন দেশের পণ্যের দখলে রাজধানীর ঈদ বাজার। এর অধিকাংশই ভারতের। ফলে মার খাচ্ছে দেশীয় পোশাক শিল্প। ঈদে পোশাক পণ্যের চাহিদা সর্বোচ্চ। কিন্তু দেখা গেছে, দেশীয় তৈরি পোশাকের স্থলে একচেটিয়া আধিপত্য ভারতীয় পোশাকের। ডিজাইনের বৈচিত্র্য, মনকাড়া ফ্যাশন আর মানের কারণে এগিয়ে আছে এসব পণ্য। তবে দাম অনেক বেশি। শাড়ি, লেহেঙ্গা, আর ভারতীয় নায়ক-নায়িকাদের নামের বা ডিজাইনের থ্রি-পিসের দাম আকাশচুম্বী। বিশেষ করে নারী, শিশু ও কিশোরদের পোশাকের একক দখলে এখন ভারতীয় পণ্য। লাভ ও চাহিদা বেশি হওয়ায় একশ্রেণীর বিক্রেতা ভারতীয় পোশাক মজুদ ও বিক্রিতে উৎসাহিত হচ্ছেন বেশি। জানা গেছে, আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার যোগসাজশে এ বছর বৈধ পথের চেয়ে অবৈধ পথেই ভারতীয় পণ্য এসেছে বেশি। শুল্ক পরিশোধের ঝামেলা না থাকায় ভারতীয় শাড়ি, তৈরি পোশাক, জুতা, স্যান্ডেল, কসমেটিক্সসহ সব পণ্যের দাম অনেক কম। ব্যবসায়ীরা বেশি লাভের আশায় দেশীয় তৈরি পণ্যের চেয়ে ভারতীয় অবৈধ পথে আসা পণ্য বিক্রিতেই আগ্রহী বেশি। এসব কারণে সরকার শত শত কোটি টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। অপরদিকে চাহিদার সুযোগে ইচ্ছামতো দামে ক্রেতাদের পকেট কাটছেন বিক্রেতারা। তবে চটকদার নাম ও বাহারি ডিজাইনের অধিকাংশ ভারতীয় পোশাক ও পণ্য নিুমানের বলে ক্রেতারা অভিযোগ করেছেন। কিন্তু তারপরও কেতাদের কাছে চাহিদা অনেক বেশি। অনেক ক্ষেত্রে শুল্ক ফাঁকি দিয়ে অবৈধ পথে এসব পণ্য দেশে আসায় দামে সস্তা এবং রঙের বাহারে আকৃষ্ট হচ্ছেন ক্রেতারাও। মানহীন এসব পণ্য কিনে প্রতারিত হলেও লাভবান হচ্ছেন অসাধু ব্যবসায়ীরা। শপিংমল, মাঝারি মার্কেট এবং ছোট ছোট মার্কেটগুলোতে ভারতীয় পণ্যে সয়লাব। কিছু কিছু পোশাকের বাহারি নাম দিয়েও উঠতি বয়সী ক্রেতাদের মনোযোগ আকর্ষণের প্রাণান্ত চেষ্টা করছেন ব্যবসায়ীরা। ঢাকার ঈদ বাজার ঘুরে দেখা গেছে এ চিত্র।
মার্কেট ও শো-রুমগুলোতে শাড়ি, থ্রি-পিস, শার্ট, পাঞ্জাবি, জুতা, স্যান্ডেলসহ ঈদকেন্দ্রিক প্রায় সব পণ্যই পাওয়া যাচ্ছে ভারতীয়। ঈদে চমক সৃষ্টির জন্য জনপ্রিয় হিন্দি ছবি বাজিরাও মাস্তানি নামের পোশাক নিয়ে এসেছেন ব্যবসায়ীরা। মিডিয়াম সাইজের বাজিরাও মাস্তানি থ্রি-পিস বিক্রি হচ্ছে ৪ হাজার টাকার মধ্যে। ভারতীয় ফ্লোর টার্চ লং গাউন বিক্রি হচ্ছে সাড়ে ৪ হাজার টাকার মধ্যে। ভারতীয় লেহেঙ্গা ৩ থেকে ৫ হাজার টাকার মধ্যে। ইন্ডিয়ান পার্টি ড্রেস এবং মতিজ থ্রি-পিস। এগুলো বিক্রি হচ্ছে ১২৫০ টাকা থেকে ১২ হাজার টাকার মধ্যে। ইন্ডিয়ান পাঞ্জাবি ১৭৮০ থেকে ৪ হাজার টাকা মধ্যে। শিশুদের ইন্ডিয়ান পার্টি ড্রেস বিক্রি হচ্ছে ১২৫০ থেকে ৮ হাজার টাকার মধ্যে। ইন্ডিয়ান জর্জেট, গাউন এবং আনস্টিচ থ্রি-পিস ৫ হাজার ৭০০ থেকে ২২ হাজার টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে। মার্কেটগুলোতে রয়েছে ভারতীয় শাড়ির বিপুল কালেকশন। শাড়িগুলোর রয়েছে বাহারি নামও। ভারতীয় কাঞ্জিবরন কাতান, ফ্রেঞ্জ শিপন, সিল্ক কোটা, জর্জেট, সামুজ শার্টেন সিল্ক, পিওর সিল্ক, খাড্ডি কাতান, গাদোয়াল কাতান এবং ভলিয়ম কাতান। এগুলো পাওয়া যাচ্ছে ২ থেকে ৪১ হাজার টাকার মধ্যে। চেন্নাই কাতান, দুলহান সিল্ক, রাজগুরু সিল্ক, অপেরা কাতান, কেপফ্রি কাতান, নাইসোর সিল্ক, পাট্টিপাল্লি কাতান, গঙ্গা-যমুনা কাতান শাড়ি। এগুলো বিক্রি হচ্ছে ২৩০০ থেকে ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত।
এ প্রসঙ্গে নাম ও দোকানের নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক কাপড় ব্যবসায়ী জানান, ভারতীয় পোশাক আধুনিক, চকমকে, কালারফুল এবং দেখতে আকর্ষণীয় হওয়ায় ক্রেতাদের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এই চাহিদার কথা মাথায় রেখেই আমরা ভারতীয় পোশাক কালেকশন করি। তবে সব ব্যবসায়ীই যে অবৈধ পথে এসব পণ্য বাংলাদেশে নিয়ে আসে তা নয়। শুল্ক দিয়েই নিয়ম মেনেই বেশিরভাগ ব্যবসায়ী এসব নিয়ে আসে। তবে অবৈধ ব্যবসায়ী যে নেই তা বলা যাবে না। অপর এক ব্যবসায়ী বলেন, এসব লিখলে আবার কাস্টমস কর্মকর্তারা হানা দিতে পারেন। তখন আমাদের পেটে লাথি মারা হবে। ভারতীয় পোশাক ও শাড়ির বিপরীতে মার্কেটগুলোতে রয়েছে দেশীয় কালেকশনও। তবে সেগুলোর বিক্রি আশানুরূপ হচ্ছে না বলে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন। দেশী শাড়ির মধ্যে রয়েছে জয়পুরী সিল্ক, অপেরা কাতান, মিরপুরের বেনারসি, ঢাকাইয়া জামদানি, মসলিন জামদানি, টাঙ্গাইলের সুতি এবং সুতি কোটা শাড়ি। এগুলো ২ থেকে ১৫ হাজার টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে। মানসম্মত হলেও ভারতীয় কাপড়ের কাছে মার খাচ্ছে এসব শাড়ি। দেশীয় কাপড়ের শো-রুমের দুই কর্তকর্তা জাকির হোসেন ও আবদুল মমিন জানান, ঈদের জন্য তাদের প্রস্তুতি ও কালেকশনের অভাব নেই। কিন্তু চোখের সামনে ভারত থেকে নিয়ে আসা নিুমানে শাড়ি ও পোশাক ব্যাপক বিক্রি হলেও ক্রেতারা দেশীয় মানসম্মত পণ্য কিনতে চাচ্ছেন না। আগের মতো রুচিশীল ক্রেতার সংখ্যাও দিন দিন কমে যাচ্ছে। তারা বলেন, অবৈধ পথে যেসব কাপড় আনা হয় সেগুলোর দাম কম পড়ে ফলে ক্রেতারা সেদিকেই আকৃষ্ট হচ্ছে। বরাবরের মতোই এবারের ঈদ মার্কেটেও ফ্যাশনের বাড়তি আবহ সৃষ্টি করেছে দেশীয় ফ্যাশন হাউসগুলোর নিজস্ব সৃষ্টিকর্মের বাইরে প্রতিযোগিতায় টিকতে ভারত, পাকিস্তান, থাইল্যান্ড, চীন, কোরিয়া, জাপান এমনকি ইতালিসহ ইউরোপ ও আমেরিকার আমদানিকৃত দ্রব্যাদি। তবে প্রায় সর্বত্রই ভারতীয় ডিজাইনের কাপড় ও শাড়ির কালেকশনই বেশি।