রফতানি আয়ে এবার উচ্চাভিলাষী লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে। ২০১৬-১৭ অর্থবছরের সম্ভাব্য রফতানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে ৩ হাজার ৭০০ কোটি মার্কিন ডলার। রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) এ আয়ের প্রাক্কলন চূড়ান্ত করেছে। এটি চলতি অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩৫০ কোটি ডলার বেশি। চলতি লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরে এটি নির্ধারণ করা হয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
২০১৫-১৬ অর্থবছরের রফতানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ৩ হাজার ৩৫০ কোটি ডলার। প্রস্তাবিত রফতানি লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে তৈরি পোশাক খাত থেকেই আয়ের প্রাক্কলন করা হয়েছে ৩ হাজার ৩৩ কোটি মার্কিন ডলার। যেখানে ওভেন গার্মেন্ট থেকে আসবে ১ হাজার ৬১৮ কোটি ডলার এবং যার প্রবৃদ্ধি ধরা হচ্ছে ১০.৮ শতাংশ। আর নিটওয়্যার খাত থেকে আয় আসবে এক হাজার ৪১৫ কোটি ডলার।
যার প্রবৃদ্ধি প্রাক্কলন করা হচ্ছে ৭ শতাংশ। তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান এ প্রসঙ্গে যুগান্তরকে বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে এ খাতে রফতানি আয়ের উপরও উৎসে করহার শূন্য দশমিক ৩০ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ১.৫০ শতাংশ করা হয়েছে। এতে একজন পোশাক রফতানিকারকের উৎসে কর বর্তমানের চেয়ে ৪ গুণ বৃদ্ধি করায় সার্বিক মুনাফায় নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এতে করে রফতানিতে আগ্রহ হারাবেন উদ্যোক্তারা।
এছাড়া পোশাক খাতের কারখানাগুলোয় প্রতিদিন ২০০ থেকে ২৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা থাকলেও সরবরাহ পাচ্ছে ৭০-৮০ মেগাওয়াট। এ ধরনের প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবেলা করে কাক্সিক্ষত লক্ষ্য অর্জন কঠিন বলেই দাবি করেন তিনি। রফতানিকারকরা এ বিষয়ে বলেছেন, বিশ্ব পরিস্থিতি ঘনঘন অস্থির হয়ে উঠছে। অঞ্চলভিত্তিক বিভিন্ন দেশে আর্থিক মন্দা দীর্ঘায়িত হচ্ছে। ডলার, রুবল, ইউরো ও পাউন্ডের মূল্যমান কমে যাচ্ছে। এতে করে বাংলাদেশের রফতানি বাজারগুলোর ক্রেতারা ব্যয় সংকোচন নীতি বেছে নিয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশে রফতানির বড় বাজার ইউরো জোনে বিভক্তি প্রকাশ্য হয়ে উঠছে। এসব কারণে শুধু বাংলাদেশই নয়, বিশ্ব অর্থনীতিকেও হুমকির মুখে ঠেলে দিয়েছে।
এ প্রসঙ্গে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন বলেন, এটি একটি প্রাক্কলন মাত্র। চূড়ান্ত লক্ষ্যমাত্রা এর বেশিও হতে পারে। আবার কমও হতে পারে। তবে আমরা মূল্যায়ন করে দেখেছি দেশের অর্থনীতির সব সূচকেই সুবাতাস বইছে। ইতিমধ্যে আমরা নিুমধ্যমআয় থেকে মধ্যমআয়ের মহাসড়কে পা রেখেছি। সে অনুযায়ী কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছাতে হলে দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড আরও বেগবান করতে হবে। তিনি বলেন, যেহেতু মোট দেশজ উৎপাদনের অন্যতম স্তম্ভ হচ্ছে রফতানি খাত। তাই স্বাভাবিকভাবেই বাড়বে এর লক্ষ্যমাত্রা।
জানা গেছে, ২০১০-১১ অর্থবছরে রফতানি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় এক হাজার ৮৫০ কোটি ডলার। রফতানি আয় হয়েছিল দুই হাজার ২৯২ কোটি ৪৩ লাখ ৮০ হাজার ডলার। ২০১১-১২ অর্থবছরে রফতানি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় দুই হাজার ৬৫০ কোটি ডলার। আয় হয়েছিল দুই হাজার ৪৩০ কোটি ১৯ লাখ ডলার। ২০১২-১৩ অর্থবছরে রফতানি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় দুই হাজার ৮০০ কোটি ডলার। আয় হয়েছিল দুই হাজার ৭০২ কোটি ৭৩ লাখ ৬০ হাজার ডলার। তবে ২০১৩-১৪ অর্থবছরে নানামুখী প্রতিবন্ধকতার কারণে রফতানি আয় আগের বছরের চেয়ে বাড়লেও লক্ষ্যমাত্রা থেকে ৩২ কোটি ৩২ লাখ ডলার পিছিয়ে ছিল।