হাজারীবাগ থেকে না সরানো পর্যন্ত ১৫৪ ট্যানারিকে প্রতিদিন ৫০ হাজার টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেয়ার বিষয়ে হাইকোর্টের আদেশ ১৭ জুলাই পর্যন্ত স্থগিত করেছেন চেম্বার আদালত। বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশন ও বাংলাদেশ ফিনিশড লেদার, লেদার গুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের এক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে অবকাশকালীন চেম্বার বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী গতকাল এ আদেশ দেন। আগামী ১৭ জুলাই আবেদনটি আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির তালিকায় আসবে বলেও আদেশ দেন তিনি।
উচ্চ আদালতের নির্দেশনার পরও যেসব ট্যানারি সাভারের চামড়া শিল্পনগরীতে স্থানান্তর হয়নি, সেগুলোর একটি ১৬ জুন বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ দস্তগীর হোসেন ও বিচারপতি এ কে এম সাহিদুল হকের হাইকোর্ট বেঞ্চে উপস্থাপন করেন শিল্প সচিব। এর পরিপ্রেক্ষিতে হাজারীবাগ থেকে না সরানো পর্যন্ত ১৫৪ ট্যানারিকে প্রতিদিন ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানার আদেশ দেন আদালত।
হাইকোর্টের এ আদেশ স্থগিত চেয়ে গত সোমবার আপিল বিভাগে আবেদন করেন ট্যানারি মালিকরা। এর পরিপ্রেক্ষিতে এ আদেশ দিলেন চেম্বার আদালত। গতকাল আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস। রিটকারী সংগঠনের পক্ষে শুনানিতে অংশ নেন অ্যাডভোকেট মনজিল মোরশেদ।
এক রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০০১ সালে ট্যানারি শিল্প হাজারীবাগ থেকে সরিয়ে নেয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। দীর্ঘদিন ধরে ওই আদেশ বাস্তবায়ন না হওয়ায় অন্য এক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১০ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারির মধ্যে হাজারীবাগের ট্যানারি শিল্প অন্যত্র সরিয়ে নিতে ২০০৯ সালের ২৩ জুন হাইকোর্ট আবারো আদেশ দেন। রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনে পরে ওই সময়সীমা কয়েক দফা বাড়িয়ে ২০১১ সালের ৩০ এপ্রিল করা হয়। কিন্তু এ সময়ের মধ্যেও স্থানান্তর না হওয়ায় আদালত অবমাননার মামলা করে পরিবেশবাদী সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ (এইচআরপিবি)। এ মামলার পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৪ সালের ১৫ এপ্রিল আদালত অবমাননার রুল জারি করেন হাইকোর্ট। গত বছরের ২১ এপ্রিল আদালতের তলবে হাইকোর্টে হাজির হয়ে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দেন শিল্প সচিব। পরে হাজারীবাগ থেকে ট্যানারি স্থানান্তরের পদক্ষেপ না নেয়ায় তাদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগে আরো একটি আবেদন করেন মনজিল মোরশেদ। এ আবেদনের শুনানি নিয়ে গত বছরের ১১ আগস্ট হাইকোর্ট ১০ কারখানা মালিকের বিরুদ্ধে রুল জারি করেন। এ রুলের পর ১০ ট্যানারি মালিককে তলব করে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দেয়ার নির্দেশনা চেয়ে ২১ মার্চ আবেদন করেন মনজিল মোরশেদ। ২৩ মার্চ এ আবেদনের শুনানি শেষে ব্যাখ্যা দিতে আদালত ১০ ট্যানারি মালিককে তলব করে আদেশ দেন। এর পরও আদালতের আদেশ বাস্তবায়ন না হওয়ায় রিটকারী আদালতে সম্পূরক আবেদন করেন। পরে ১৬ জুন আদালত ১৫৪ ট্যানারি সাভারে না সরানো পর্যন্ত পরিবেশদূষণের ক্ষতিপূরণ হিসেবে প্রত্যেক ট্যানারি মালিককে প্রতিদিন ৫০ হাজার টাকা করে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দেয়ার আদেশ দেন।