ইইউ থেকে যুক্তরাজ্যের বেরিয়ে আসার প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়ার আশংকা বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতেই। ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে যুক্তরাজ্যের বেরিয়া আসার সিদ্ধান্তে সতর্ক বাংলাদেশ। এ ঘটনা আমদানি-রফতানির ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলবে বলে আশংকা করা হচ্ছে।
তবে ঠিক কতটা প্রভাবিত করবে তা চিহ্নিত করতে প্রাথমিকভাবে ট্যারিফ কমিশনের কাছ থেকে পর্যালোচনা প্রতিবেদন চেয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে কমিশনকে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। যুক্তরাজ্যের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য পরিস্থিতির ভবিষ্যৎ লাভ-ক্ষতি হিসেব-নিকেশ করা হবে কমিশনের এই প্রতিবেদনের আলোকে। এরপরই পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে সরকার। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। তবে দায়িত্বশীলরা জানিয়েছেন, এটি সরকারের প্রাথমিক একটি উদ্যোগ। প্রতিবেদন পাওয়ার পর পণ্য ও খাতভিত্তিক ক্ষতি বিবেচনা করে পৃথক ‘এক্সিট কমিটি’ গঠন করা হবে। এই কমিটিতে বিভিন্ন খাতের বেসরকারি উদ্যোক্তাদের পাশাপাশি এফবিসিসিআই প্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন যুগান্তরকে বলেন, যুক্তরাজ্যের সঙ্গে এককভাবে বাংলাদেশের বাণিজ্য চুক্তি রয়েছে। ডব্লিউটিওর সদস্য দেশ হিসেবে উন্নত দেশের কাছ থেকে প্রদেয় সুবিধা বাংলাদেশেরও পাওয়ার অধিকার রয়েছে। সেটি আমরা এতদিন পেয়েও আসছি। ভবিষ্যতেও এর হেরফের হওয়ার কথা নয়। তবে সরকার বিশ্ব পরিস্থিতি নিয়ে সদা সতর্ক রয়েছে। কারণ বাংলাদেশ গ্লোবালাইজেশনের বাইরে নেই। বৈশ্বিক অর্থনীতির উত্থান-পতন কিংবা নীতির পরিবর্তন বাংলাদেশকেও প্রভাবিত করতে পারে। এই আশংকা থেকেই আগাম উদ্যোগ নিয়ে ভবিষ্যৎ বাণিজ্য ছক কষতে চায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
সূত্র জানিয়েছে, ট্যারিফ কমিশনের পর্যালোচনায় বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) টার্মস অব রেফারেন্সের (টিওআর) আওতায় সদস্যভুক্ত হিসেবে উন্নত দেশগুলোর কাছ থেকে কী কী সুযোগ-সুবিধা রয়েছে এবং এক্ষেত্রে যুক্তরাজ্যের সঙ্গে বাংলাদেশের সার্বিক বাণিজ্য শর্ত কী আছে তা বিবেচনা করা হবে।এছাড়া আরও কিছু সহায়ক শর্ত বিবেচনা করে প্রতিবেদন তৈরির কাজ করবে ট্যারিফ কমিশন। আন্তর্জাতিক বাণিজ্য প্রতিবিধান অনুযায়ী যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের কতটি রফতানি পণ্য প্রবেশ করে, কোন পণ্যের কেমন বাজার মূল্য পাওয়া যাচ্ছে, দেশটির বন্দরে মাল খালাসের পরিস্থিতি এবং কাস্টমসে শুল্কায়ন নমুনা পর্যবেক্ষণ করা হবে। এর বাইরে সে দেশে কোন পণ্যের চাহিদা কেমন, ভবিষ্যৎ বাজার সম্ভাবনা এবং ঝুঁকি বিশ্লেষণ করা হবে।
এদিকে গত রোববার সচিবালয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বার্ষিক কর্মপন্থা নির্ধারণ বৈঠকে জানিয়েছেন, যুক্তরাজ্যের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক সম্পর্কের ভবিষ্যৎ নিয়ে আবার আলোচনা করতে হতে পারে। এমন আশংকা ব্যক্ত করার পরই ট্যারিফ কমিশনকে এ ব্যাপারে ত্বরিত পর্যালোচনা প্রতিবেদন তৈরির দায়িত্ব দেয়া হয়। বাণিজ্যমন্ত্রী জানান, বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতির কারণেই আমাদের রফতানির ব্যাপারে নতুন করে ভাবতে হবে। যুক্তরাজ্য তাদের একটি।
এ ব্যাপারে আমাদের অনেক করণীয় আছে। তাছাড়া প্রতিযোগী দেশ হিসেবে ভারতও বাংলাদেশের জন্য উদ্বেগের কারণ। তিনি জানান, সম্প্রতি ভারত তাদের তৈরি পোশাক খাতকে সহায়তা দিতে ৬ হাজার কোটি টাকা নগদ সহায়তা দেয়ার প্যাকেজ ঘোষণা করেছে। এর প্রভাবও বাংলাদেশকে মোকাবেলা করতে হতে পারে। এ পরিস্থিতিতে আমরা কী করে রফতানিকারকদের সুবিধা দিতে পারি সে ব্যাপারে বাস্তব পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বাজার হচ্ছে ইইউ অঞ্চল। মোট রফতানি আয়ের ৬১ শতাংশই আসে এ অঞ্চল থেকে। এর মধ্যে ইইউর সবচেয়ে বড় দুই ক্রেতা দেশের একটি হচ্ছে যুক্তরাজ্য। মোট রফতানির ২২ শতাংশই আয় হয় এ দেশ থেকে।
চলতি অর্থবছরে ধার্যকৃত মোট রফতানি লক্ষ্যমাত্রার প্রায় ৮শ’ কোটি ডলারই আসবে যুক্তরাজ্য থেকে। এ প্রসঙ্গে পলিসি রিসার্চ ইন্সটিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর যুগান্তরকে বলেন, যুক্তরাজ্য ইইউ জোট থেকে বেরিয়ে যাওয়ার নেতিবাচক একটা প্রভাব বাংলাদেশে পড়বে। তবে এই প্রভাব কতটা ক্ষয়িষ্ণু হবে সেটি নির্ভর করবে সরকারের আগাম অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক তৎপরতার ওপর।