আগামী ২০১৬-১৭ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে গতকাল বিকেলে বিজিএমইএ ভবনে আয়োজিত যৌথ সংবাদ সম্মেলনে বিজিএমইএ, বিকেএমইএসহ পোশাকশিল্প খাতের ছয় সংগঠনের নেতারা l ছবি: প্রথম আলোএবারের বাজেটে পণ্য রপ্তানিতে উৎসে কর দেড় শতাংশ করার প্রস্তাবে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন দেশের তৈরি পোশাক ও বস্ত্র খাতের ছয় সংগঠনের ব্যবসায়ী নেতারা। তাঁরা বলছেন, উৎসে কর কমানো না হলে বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত হবে। পোশাক ও বস্ত্রশিল্পের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা কোনোভাবেই ধরে রাখা সম্ভব হবে না। অধিকাংশ কারখানা টিকেও থাকতে পারবে না।
আগামী ২০১৬-১৭ অর্থবছরের ঘোষিত বাজেটে পণ্য রপ্তানিতে উৎসে কর দশমিক ৬ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি করে দেড় শতাংশ করা হয়েছে। বাজেট ঘোষণার পর তাৎক্ষণিকভাবে এই প্রস্তাবের সমালোচনা করেন পোশাক ও বস্ত্র খাতের সংগঠনগুলো। গতকাল শনিবার খাত দুটির ছয়টি ব্যবসায়িক সংগঠন এক জোট হয়ে সংবাদ সম্মেলন করে। এতে উৎসে কর বৃদ্ধি করার প্রস্তাবে ক্ষোভ প্রকাশ করেন সংগঠনগুলোর নেতারা। কেন এই কর হার কমানো প্রয়োজন, তার পক্ষে বিভিন্ন যুক্তিতর্ক তুলে ধরেন তাঁরা।
রাজধানীর কারওয়ান বাজারে তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর কার্যালয়ে গতকাল বিকেলে সংবাদ সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হয়। বিজিএমইএ ছাড়াও যৌথ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজক নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএ, বস্ত্রকল মালিকদের সংগঠন বিটিএমএ, বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যাকসেসরিজ অ্যান্ড প্যাকেজিং ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিজিএপিএমইএ), টেরি টাওয়েল অ্যান্ড লিনেন ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিটিটিএলএমইএ) ও বাংলাদেশ এক্সপোর্ট ওরিয়েন্টেড গার্মেন্টস ওয়াশিং ইন্ডাস্ট্রিজ ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিইওজিডব্লিউআইওএ)। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বিজিএমইএর সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান। ছয় সংগঠনের পক্ষে উৎসে কর বর্তমানের মতো দশমিক ৬০ শতাংশ, করপোরেট কর হ্রাস করে ১০ শতাংশ করা, মূল্য সংযোজন কর (মূসক) অব্যাহতিসহ কিছু দাবি করেন তিনি।
পোশাক রপ্তানির ফ্রেইড অন বোর্ড (এফওবি) বা মোট রপ্তানি মূল্যের ওপর উৎসে কর দিতে হয়। সিদ্দিকুর রহমান বলেন, একজন পোশাক রপ্তানিকারক কেন মোট রপ্তানি মূল্যের ওপর উৎসে কর দেবেন? তিনি যা উৎপাদন করেন না এবং যেখান থেকে কোনো আয় হয় না, সে অংশের ওপর উৎসে কর কর্তন কেন? শুধু পোশাক তৈরির (কাটিং মেকিং বা সিএম) মূল্যের ওপর উৎসে কর নির্ধারণ করা হোক। এটিই যৌক্তিক।’ বিজিএমইএর সভাপতি বলেন, ‘পোশাকশিল্পে উৎসে কর প্রতিবছরই বাড়ানো হচ্ছে। ২০০৯-১০ অর্থবছর উৎসে কর কর্তন হতো দশমিক ২৫ শতাংশ। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে উৎসে কর ছিল দশমিক ৩০ শতাংশ। আর চলতি অর্থবছর উৎসে কর দশমিক ৬০ শতাংশ। এর পেছনে কোনো যৌক্তিকতা থাকতে পারে না। মুনাফা বাড়লেই কর বাড়ানো যেতে পারে। আমাদের মুনাফা কি বাড়ছে যে উৎসে কর কর্তনের হার বছর বছর বাড়ানো হবে?’ তিনি তাঁর বক্তব্যের একপর্যায়ে বলেন, প্রতিবছর ৮-১০ শতাংশ হারে উৎপাদন খরচ বাড়ছে। রানা প্লাজা ধসের পর পোশাক ব্যবসায়ীদের দাবির মুখে ২০১৪ সালের এপ্রিলে উৎসে কর দশমিক ৮ শতাংশ থেকে কমিয়ে দশমিক ৩০ শতাংশ করেছিল জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এই সুবিধা গত বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত ১৫ মাস কার্যকর ছিল।
বিটিএমএর সহসভাপতি ফজলুল হক বলেন, ‘গত বছরের সেপ্টেম্বরে গ্যাসের দাম শতভাগ বাড়ানো হয়েছে। এবার বাজেটে আবার উৎসে কর দেড় শতাংশ বৃদ্ধি করা হলো। এই দেশে কি আপনারা শিল্প চান না?’ তিনি বলেন, একের পর এক করের বোঝা চাপানোর কারণে শিল্প বৃদ্ধি তো দূরে থাক, যেগুলো আছে সেগুলোই মুখ থুবড়ে পড়ে যাবে।
বিজিএপিএমইএর উপদেষ্টা রাফেজ আলম চৌধুরী বলেন, পোশাক খাতের সরবরাহ ব্যবস্থার বিভিন্ন পর্যায়ে যেমন সুতা তৈরি, বোতাম-পলিব্যাগ-হ্যাঙ্গারসহ সরঞ্জাম উৎপাদন, ওয়াশিং ইত্যাদি ক্ষেত্রে উৎসে কর দিতে হয়। সব মিলিয়ে উৎসে কর গড়ে ৪ শতাংশের মতো হয়ে যায়। এভাবে কর নেওয়া হলে ব্যবসায়ীরা টিকে থাকতে পারবেন না বলে মন্তব্য করেন তিনি।
বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি ও এফবিসিসিআইয়ের সহসভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বলেন, ‘করের আওতা বৃদ্ধি পাক, সেটি আমরা ব্যবসায়ীরাও চাই। তবে আমরা চাই না, এতে করে বিনিয়োগকারীরা শঙ্কিত হোক। এটি কোনোভাবেই কাম্য নয়।’
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিকেএমইএর সভাপতি সেলিম ওসমান ও সহসভাপতি আসলাম সানি, বিটিটিএলএমইএর সভাপতি হোসেন মেহমুদ ও পরিচালক শাহদাৎ হোসেন, বিটিএমএর পরিচালক মাসুদ রানা, বিজিএপিএমইএর সহসভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন, বিইওজিডব্লিউআইওএর সভাপতি হেলাল উদ্দিন আহমেদ, বিজিএমইএ সহসভাপতি ফারুক হাসান, এস এম মান্নান, মাহমুদ হাসান খান, মোহাম্মদ নাছির প্রমুখ।