ব্যাংক ঋণের উচ্চ সুদ এবং আর্থিক জ্ঞানের অভাব বাংলাদেশের তৈরি পোশাক কারখানাগুলো সংস্কারে প্রধান বাধা। এছাড়া ব্যাংক ঋণ পেতে অথবা অন্য বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে অর্থায়ন সহায়তা পেতে কারখানা মালিকদের অডিটেড ব্যালেন্স শিট, লাভ-ক্ষতির বিবরণী উপস্থাপন সম্পর্কে ধারণা দেয়ার প্রয়োজন রয়েছে। আর বিদ্যমান কারখানাগুলোকে সংস্কারে ৬৩৫ মিলিয়ন ডলার প্রয়োজন।
ইন্টারন্যাশনাল ফিন্যান্স কর্পোরেশন (আইএফসি) ও আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) যৌথভাবে প্রকাশিত ‘বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতের সংস্কারে অর্থায়ন’ শীর্ষক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এসব তথ্য। সোমবার রাজধানীর একটি হোটেলে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়েছে।
এই প্রতিবেদন তৈরিতে গত এক বছরে ১০০টি পোশাক কারখানার ওপর জরিপ চালানো হয়। এসব কারখানার বেশিরভাগই ইউরোপ এবং মার্কিন ক্রেতাজোট অ্যাকর্ড এবং অ্যালায়েন্সভুক্ত কারখানা। প্রতিবেদনে কারখানার অবকাঠামো, বৈদ্যুতিক এবং অগ্নি নিরাপত্তা কাজের ব্যয়ের ধারণা দেয়া হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের তৈরি পোশাক কারখানাগুলো সংস্কারে ৬৩৫ মিলিয়ন ডলার প্রয়োজন। এরই মধ্যে সংস্কার কাজের অর্থায়নে আইএফসি, জাইকা, ইউএসএআইডি ও এফডি’র মতো আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থা ১৮৭ মিলিয়ন ডলার দিয়েছে। বিভিন্ন দাতাগোষ্ঠীর আর্থিক ঋণের প্রতিশ্র“তির পরও অর্থায়নে আরও সংকট রয়েছে ৪৪৮ মিলিয়ন ডলার। মোট সংস্কারে চাহিদা ছিল ৯২৯ মিলিয়ন ডলার। তবে বড় বড় কারখানাগুলো তাদের নিজস্ব অর্থায়নে তাদের কারখানা করেছে।
এটা প্রায় প্রায় দু’শ কোটি ডলারের সমপরিমাণের। জরিপ কাজ চালানো ১০০টি কারখানার মধ্যে ইউরোপের ক্রেতাজোটের সংগঠন অ্যাকর্ডের কারখানা ৪৪টি, অ্যালায়েন্সের ২৫টি এবং জাতীয় উদ্যোগে পরিচালিত সংস্কার কাজ হচ্ছে (ন্যাশনাল ইনিশিয়েটিভ) ৩১টি। এসব কারখনায় ৫৯টি বিভিন্ন সমস্যা চিহ্নিত হয়। এর মধ্যে ৫১ শতাংশ বৈদ্যুতিক সমস্যা, ৩০ শতাংশ অগ্নি এবং ১৯ শতাংশ ভবনের অবকাঠামোগত সমস্যা চিহ্নিত করা হয়।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, পুনরায় অবকাঠামো তৈরি করতে না হলে অধিকাংশ কারখানার সংস্কারে ব্যয় ২০ হাজার থেকে ৯ লাখ ডলার প্রয়োজন। এর মধ্যে ৮০ শতাংশ কারখানার প্রয়োজন ১ লাখ থেকে আড়াই লাখ ডলার। ৭৫ শতাংশ কারখানার বৃহৎ আকারে অবকাঠামোর উন্নয়ন প্রয়োজন নেই। তবে সংস্কারে অর্থায়নের জন্য মালিকদের দীর্ঘ ও জটিল আবেদন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। শুধু উচ্চ সুদে মেয়াদি ঋণ পান তারা।
এক্ষেত্রে ছোট উদ্যোক্তাদের ১১ থেকে ১৮ শতাংশ এবং বড় উদ্যোক্তাদের ৯ থেকে ১৬ শতাংশ সুদ দিতে হয়। আইএফসি বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর উইন্ডি ওয়ার্নার বলেন, কারখানাগুলোকে নিরাপত্তার কাজে ব্যয় করা অর্থকে বিনিয়োগ হিসেবে দেখতে হবে। যখন কমপ্লায়েন্স লেভেল সন্তোষজনক পর্যায়ে পৌঁছবে তখন ক্রেতারা আরও বেশি আত্মবিশ্বাস পাবে অর্ডার দিতে। এর ফলে শিল্পের আকারও বাড়বে।
অনুষ্ঠানে আলোচক শ্রমিক নেতা শুক্কুর মাহমুদ, এইচ অ্যান্ড এম বাংলাদেশের প্রধান প্রতিনিধি রজার হোভার্ট, আন্তর্জাতিক দাতা প্রতিষ্ঠান ডিএফআইডি বাংলাদেশ প্রধান পল হুইটিংহ্যাম, আইএল প্রোগ্রাম ম্যানেজার টমো পটিয়ানেন প্রমুখ। বিজিএমইএ’র জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, নানা জটিলতার কারণে গত ৩ বছরে ১টি কারখানা জাইকার তহবিল থেকে অর্থ সহায়তা পেয়েছে। এছাড়া ব্যাংক ঋণের উচ্চ সুদও কারখানা সংস্কার বিলম্বের জন্য দায়ী।