প্রতারণামূলক মিসইনভয়েসিংয়ের কারণে উন্নয়নশীল দেশগুলো হাজার কোটি ডলার কর রাজস্ব হারাচ্ছে। জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়ন-বিষয়ক কনফারেন্সের (আঙ্কটাড) অনুসন্ধানে দেখা গেছে, মিসইনভয়েসিংয়ের কারণে কোনো কোনো দেশ ৬৭ শতাংশ পর্যন্ত রফতানি আয় থেকে বঞ্চিত হয়। খবর সিনহুয়া। মিসইনভয়েসিং ঠেকাতে আমদানিকারকদের সক্রিয় হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে আঙ্কটাড। সংস্থার সেক্রেটারি জেনারেল মুকিশা কিতুয়ি বলেছেন, আমদানিকারক দেশ ও কোম্পানিগুলোকে নিজেদের সুনাম রক্ষার স্বার্থে আরো স্বচ্ছ হতে হবে এবং এসব বিষয়ে অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে আমাদের সহযোগিতা করতে হবে।
কেনিয়ার রাজধানী নাইরোবিতে শনিবার আঙ্কটাডের প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, বাণিজ্যিক লেনদেনে ওভার ও আন্ডার-ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে কিছু উন্নয়নশীল দেশ থেকে শত শত কোটি ডলার অবৈধ অর্থ পাচার হয়। একইভাবে কিছু দেশে বিপুল পরিমাণ অবৈধ অর্থের অনুপ্রবেশ ঘটে। নতুন প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০০০ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে স্বর্ণ রফতানির ক্ষেত্রে আন্ডার-ইনভয়েসিংয়ের মোট পরিমাণ ছিল ৭ হাজার ৮২০ কোটি ডলার, যা মোট স্বর্ণ রফতানির ৬৭ শতাংশ।
অনুসন্ধানে জানা যায়, উন্নয়নশীল দেশগুলো থেকে অবৈধ অর্থপ্রবাহের অন্যতম উপায় ভাবা হয় ট্রেড মিসইনভয়েসিংকে। আঙ্কটাড বলেছে, উন্নয়নশীল দেশগুলো মিসইনভয়েসিংয়ের কারণে মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা আয় ও কর রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়, যা সংশ্লিষ্ট দেশের উন্নয়নকাজে ব্যবহার হতে পারত। আঙ্কটাডের ১৪তম সম্মেলনের অংশ হিসেবে ১৫ ও ১৬ জুলাই নাইরোবিতে অনুষ্ঠিত হয়েছে গ্লোবাল কমোডিটিজ ফোরামের সপ্তম আসর। এ উপলক্ষে প্রতিবেদনটি প্রকাশ হয়। আঙ্কটাডের প্রতিবেদনটি প্রণয়ন করতে গবেষকরা চিলি, আইভরিকোস্ট, নাইজেরিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা ও জাম্বিয়া থেকে তামা, কোকো, তেল ও স্বর্ণ রফতানি-সংক্রান্ত দুই দশকের তথ্য খতিয়ে দেখেন।
আঙ্কটাড সেক্রেটারি জেনারেল কিতুয়ি বলেন, এ গবেষণায় মিসইনভয়েসিং সমস্যার ব্যাপকতায় নতুনভাবে আলোকপাত করা হয়েছে। সমস্যাটি আরো প্রকট যে কারণে তা হলো, কয়েকটি দেশ অতিগুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্য ও শিক্ষা বাজেটের জন্য কমোডিটি রফতানি আয়ের ওপর নির্ভরশীল। কমোডিটি রফতানি থেকে কোনো কোনো উন্নয়নশীল দেশের মোট রফতানি আয়ের ৯০ শতাংশ আসে বলে মুকিশা কিতুয়ি উল্লেখ করেন। আঙ্কটাড সেক্রেটারি জেনারেলের মতে, মিসইনভয়েসিংয়ে আলোকপাতের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশের মধ্যে অবৈধ অর্থপ্রবাহের চালচিত্র বুঝতে নতুন পথের দিশা মিলবে।
আঙ্কটাডের বিশ্লেষণে পূর্বোল্লিখিত পাঁচটি দেশ থেকে চীন, জার্মানি, হংকং (চীন), ভারত, ইতালি, জাপান, নেদারল্যান্ডস, স্পেন, সুইজারল্যান্ড, ব্রিটেন ও উত্তর আয়ারল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশে রফতানির ক্ষেত্রে মিসইনভয়েসিংয়ের বিভিন্ন ধরন স্পষ্ট হয়েছে। জাতিসংঘের সহযোগী সংস্থাটি বলেছে, ১৯৯৬-২০১৪ সময়ে নাইজেরিয়া থেকে যুক্তরাষ্ট্রে তেল রফতানির ক্ষেত্রে আন্ডার-ইনভয়েসিংয়ের পরিমাণ ছিল ৬ হাজার ৯৮০ কোটি ডলার, যা যুক্তরাষ্ট্রে মোট তেল রফতানির ২৪ দশমিক ৯ শতাংশের সমপরিমাণ।
চাঞ্চল্যকর কিছু মিসইনভয়েসিংয়ের তথ্যও আঙ্কটাডের গবেষণায় উঠে এসেছে। জাম্বিয়ার সরকারি নথিপত্রে ১৯৯৫ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত সে দেশ থেকে সুইজারল্যান্ডে ২ হাজার ৮৯০ কোটি ডলারের তামা রফতানির উল্লেখ রয়েছে। তবে সুইজারল্যান্ডের কোনো নথিতে এর উল্লেখ নেই। একইভাবে ১৯৯০ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে চিলির সরকারি নথিপত্রে নেদারল্যান্ডসে ১ হাজার ৬০০ কোটি ডলারের তামা রফতানির কথা উল্লেখ রয়েছে। তবে নেদারল্যান্ডসের কোনো নথিতে এসব তামা আমদানির কথা উল্লেখ নেই।
আবার ১৯৯৫-২০১৪ সময়ে আইভরিকোস্টের নথিতে নেদারল্যান্ডসে ১ হাজার ৭২০ কোটি ডলার মূল্যের কোকো রফতানির তথ্য দেখা গেছে। কিন্তু আইভরিকোস্টের এ রফতানির ৩১ শতাংশ নেদারল্যান্ডসের আমদানি নথিপত্রে অনুপস্থিত। অর্থাত্ উল্লিখিত সময়ে নেদারল্যান্ডসে আইভরিকোস্ট থেকে ৫০০ কোটি ডলার মূল্যের কোকো আমদানি হয়েছে মিসইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে।