Home বাংলা নিউজ কর্মীদের অবাধ প্রবেশের বিনিময়ে ব্রিটেন পাবে একক বাজার: ইইউ

কর্মীদের অবাধ প্রবেশের বিনিময়ে ব্রিটেন পাবে একক বাজার: ইইউ

কর্মীদের অবাধ প্রবেশের বিনিময়ে ব্রিটেন পাবে একক বাজার: ইইউ

ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ত্যাগের পরও এ অঞ্চলের লোভনীয় একক বাজারে যুক্তরাজ্যের প্রবেশের সুযোগ রয়েছে। তবে এক্ষেত্রে অবশ্যই ইইউ কর্মীদের লন্ডনে অবাধ প্রবেশাধিকার দিতে হবে। ব্রাসেলসে ব্রেক্সিট ভোটপরবর্তী বৈঠকে লন্ডনের উদ্দেশে ইইউ নেতাদের পক্ষ থেকে এ কঠোর বার্তা দেয়া হয়। অন্যদিকে ব্রেক্সিটের কারণে বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি ও আর্থিক বাজার নতুন সংকটে পড়তে পারে বলে সতর্ক করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা এবং বিনিয়োগকারী জর্জ সরোস। খবর রয়টার্স, বিবিসি ও ব্লুমবার্গ।

ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন ইইউতে থাকার পক্ষে জোর প্রচারণা চালিয়েছেন। কিন্তু গত সপ্তাহের গণভোটে ইইউ ত্যাগের পক্ষে জনগণ রায় দেয়ার পর পদত্যাগের ঘোষণা দেন তিনি। ফলে ইইউ থেকে ব্রিটেনের চলে যাওয়ার যাবতীয় শর্তাবলি নিয়ে আলোচনার দায়ভার এখন তার উত্তরসূরির ওপরই। তবে ইইউ ত্যাগের পক্ষে থাকা নেতারা এখন পর্যন্ত স্পষ্ট করে বলছেন না তারা ব্রাসেলসের সঙ্গে ঠিক কেমন সম্পর্ক তৈরি করতে চান। এ অবস্থায় ব্রিটেনের সঙ্গে গোটা ইইউর ভবিষ্যত্ সম্পর্ক নিয়ে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছে।

বর্তমানে প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন সরকারের তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। গত মঙ্গলবার ইইউ নেতাদের সঙ্গে সর্বশেষ সম্মেলনে তিনি জানান, গণভোটের রায়ের ফলে ইইউ নাগরিকদের ব্রিটেনে অবাধ যাতায়াত বাধাগ্রস্ত হবে। এদিকে ইইউ তাদের কর্মীদের যে অবাধ প্রবেশাধিকার চাইছে তা কিন্তু ‘চারটি স্বাধীনতার’ একটি। বাকি তিনটি হচ্ছে মূলধন, পণ্য ও সেবার অবাধ প্রবাহ। ইইউর মতে, কোনো দেশ যদি তাদের একক বাজারে প্রবেশ করতে চায়, তাহলে তাকে অবশ্যই এই চার স্বাধীনতার শর্ত পালন করতে হবে। ইইউর ২৭ সদস্য দেশের সম্মেলনেও এ বিষয়টির ওপর জোর দেয়া হয়। সম্মেলন শেষে দেয়া বিবৃতিতে নেতারা বলেন, এ ধরনের কোনো কিছুর আভাস পাওয়া গেলে সেক্ষেত্রে কোনো আলোচনার প্রয়োজন নেই।

গণভোটের ফলাফলে হতাশ ডেভিড ক্যামেরন মনে করেন, ইইউ ত্যাগের পর দেশের অর্থনীতিকে এক কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে। অন্যদিকে ব্রিটেনের একজন জ্যেষ্ঠ আইনপ্রণেতা অ্যান্ড্রু তিরেই জানান, নতুন সরকার একটি আলোচনার পরিস্থিতিতে না এলে ব্রিটেনের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের আনুষ্ঠানিক নোটিস দেয়া হবে না। সবচেয়ে জরুরি বিষয় হচ্ছে, ইইউর বাজারে ব্রিটেনের সর্বোচ্চ প্রবেশাধিকার চিহ্নিত করা। অন্যদিকে ইইউ থেকে আসা অভিবাসীদের ওপর সীমারেখা নির্ধারণ করাও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

ক্যামেরনের দায়িত্বে সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে একজন স্টিফেন কার্ব। তিনি মনে করেন, অভিবাসন নিয়ন্ত্রণ করা খুবই জরুরি। যদিও তিনি জানেন এর বিপরীতে ইইউর বাজারে তাদের প্রবেশ সীমিত হয়ে পড়বে। অন্যদিকে লন্ডনের সাবেক মেয়র ও ক্যামেরনের উত্তরসূরির তালিকায় এগিয়ে থাকা বরিস জনসনের পরামর্শ, অতি গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক খাতসহ ইউরোপের গোটা বাজারে যুক্তরাজ্যের প্রবেশাধিকার থাকতে হবে। তিনি আরো বলেন, ব্রিটেনের নাগরিকদের অবশ্যই ইউরোপে অবস্থান ও কাজ করার অধিকার রয়েছে। যদিও তার সমালোচকরা বলছেন, এক্ষেত্রে বরিসের অবস্থান একেবারেই অবাস্তব।

এদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা সতর্ক করে বলেছেন, ইইউ ত্যাগের পক্ষে ব্রিটেনের ভোট বিশ্ব অর্থনীতির জন্য দীর্ঘমেয়াদে উদ্বেগ সৃষ্টি করবে। তিনি আরো মনে করেন, ব্রেক্সিটের ফলে ব্রিটেনসহ গোটা ইউরোপে সম্ভাব্য বিনিয়োগগুলো স্থগিত হয়ে পড়বে। এ অবস্থায় ব্রিটেনের ইইউ ত্যাগের প্রক্রিয়া যথাসম্ভব দ্রুত করার তাগিদ দিয়েছেন তিনি। কানাডা ও মেক্সিকোর সঙ্গে ওতাওয়াতে এক সম্মেলনে ওবামা বলেন, ব্রেক্সিটের বিষয়টি এভাবে চলতে থাকলে বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধিতে দীর্ঘমেয়াদি উদ্বেগ সৃষ্টি হবে। এমনিতেই বিশ্ব অর্থনীতি এখন দুর্বল।

অন্যদিকে অন্যতম বিনিয়োগকারী জর্জ সরোস বলেছেন, ব্রিটেন ইইউ ত্যাগের যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তাতে করে ২০০৭ ও ২০০৮ সালের মতো আর্থিক সংকটে জড়িয়ে পড়বে বিশ্ব অর্থনীতি। তিনি বলেন, ইউরোপের ব্যাংক খাত আর্থিক সংকটের সময় পাড়ি দিয়েছে। এখনো তাদের সক্ষমতা পরীক্ষা করা হচ্ছে।