বাংলাদেশের পোশাক রফতানি বাড়ছে। এখন বিশ্বের ২য় বৃহত্তম পোশাক রফতানিকারক দেশ হচ্ছে এটি। পোশাক রফতানির ক্ষেত্রে বিশ্বে চীনের পরই বাংলাদেশের অবস্থান। বিশ্বব্যাংকের ২০১৪ সালের আন্তর্জাতিক ট্রেড পরিসংখ্যানে এ তথ্য উঠে এসেছে। সম্প্রতি এটি প্রকাশ করে সংস্থাটি। বলা হয়েছে, পোশাক খাতে বাংলাদেশের অংশীদারিত্ব হল ৫০৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার যা বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে ৫.১ শতাংশ। এ ক্ষেত্রে চীনের অংশীদারিত্বের পরিমাণ হল ৩৮.৬ শতাংশ এবং ভিয়েতনাম ও ভারতের অংশীদারিত্ব হল ৩.৭ শতাংশ।
কিন্তু বর্তমানে অতিরিক্ত উৎপাদন ব্যয় ও দক্ষ জনশক্তির অভাবে চীনের পোশাক খাতের সৃষ্ট বাজার ক্রমান্বয়ে সংকুচিত হচ্ছে। চীনের এ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের বাজার আরও সস্প্রসারিত হচ্ছে এবং সুবিধাজনক অবস্থায় রয়েছে। বিশ্বব্যাংক বলছে, বর্তমান বিশ্বের প্রতিযোগিতাপূর্ণ বাজারে বিভিন্ন দেশের বড় বড় খুচরা পোশাক ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো বাংলাদেশ থেকে অধিক হারে পোশাক ও তৈরি পোশাকজাত দ্রব্য ক্রয়ের ক্ষেত্রে বেশ আগ্রহী হয়ে উঠছে। ফলে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের চাহিদাও কয়েকগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।
২০১৪-২০১৫ অর্থবছরে বাংলাদেশ ২৫.৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের তৈরি পোশাক বিদেশে রফতানি করেছিল। ২০১৫-১৬ অর্থবছরের প্রথম ১১ (জুলাই-মে) মাসে বাংলাদেশ ২৫.০৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের তৈরি পোশাক রফতানি করে। ২০১৪-২০১৫ অর্থবছরে বাংলাদেশের পাঁচটি তৈরি পোশাক মোট পোশাক রফতানির ৭৮.৫৯ শতাংশ দখল করে এবং এ ক্ষেত্রে আয়ের পরিমাণ হল ২৫.৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। উল্লেখযোগ্য পণ্যগুলোর মধ্যে শার্ট, টি-শার্ট, ট্রাউজার, জ্যাকেট এবং সোয়েটার রয়েছে।
বলা হয়েছে, ২০১৪-২০১৫ অর্থবছরে পোশাক রফতানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ২৭.৩৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। বিভিন্ন দেশের নামিদামি ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো উল্লেখযোগ্য হারে বাংলাদেশ থেকে পোশাক ক্রয়ের চাহিদা বৃদ্ধি ও আগ্রহের কারণে এ দেশের তৈরি পোশাক শিল্পগুলোর উৎপাদন উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। সুইডেনের বিখ্যাত পোশাক আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান এইচঅ্যান্ডএম বাংলাদেশে তৈরি পোশাক শিল্পের অন্যতম একটি ক্রেতা প্রতিষ্ঠান এবং এ প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর ৩ বিলিয়ন ডলার মূল্যের তৈরি পোশাক ক্রয় করে থাকে। সুইডেনের ওই ক্রেতা প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশ থেকে প্রধানত পুরুষ ও মহিলা উভয়ের জন্য টি-শার্ট, সুতি ট্রাউজার, ওভেন শার্ট, জ্যাকেট এবং সোয়েটার ক্রয় করে থাকে। তৈরি পোশাক ক্রয়ের ক্ষেত্রে সুইডেনের এইচঅ্যান্ডএমের পরই অবস্থান হল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত প্রতিষ্ঠান ওয়ালমার্ট।
ওয়ালমার্টও বাংলাদেশ থেকে পুরুষ ও মহিলাদের জন্য টি-শার্ট, ট্রাউজার এবং শিশুদের ব্যবহার্য তৈরি পোশাক ক্রয় করে থাকে। অন্যান্য বৃহৎ খুচরা ক্রয়কারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো লি অ্যান্ড ফাং, যা ১.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের ট্রাউজার, টি-শার্ট এবং সোয়েটার ক্রয় করে থাকে। ব্রিটিশ খুচরা ক্রেতা প্রতিষ্ঠান প্রিমার্ক প্রতি বছর বাংলাদেশ থেকে ১.০০ বিলিয়ন ডলার মূল্যের জিন্স প্যান্ট, শার্ট এবং অন্যান্য তৈরি মোটা কাপড় ক্রয় করে থাকে। স্প্যানিশ প্রতিষ্ঠান ইনডিটেক্স বাংলাদেশ থেকে জারা, লেফটিস, বার্সকা এবং সিএন্ড এ ব্র্যান্ডের প্রায় ১.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের মহিলাদের জন্য ব্যবহার্য তৈরি পোশাক, ট্রাউজার বাংলাদেশ থেকে আমদানি করে থাকে। জার্মানির বিখ্যাত হুগো বস নামক একটি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ থেকে পোশাক ক্রয়ের চাহিদা উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি করেছে। এ প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশ থেকে টি-শার্ট এবং ফর্মাল শার্ট ক্রয় করে থাকে।