Home বাংলা নিউজ লক্ষ্যমাত্রার মধ্যেই ২০১৫-১৬ অর্থবছরের মূল্যস্ফীতি

লক্ষ্যমাত্রার মধ্যেই ২০১৫-১৬ অর্থবছরের মূল্যস্ফীতি

লক্ষ্যমাত্রার মধ্যেই ২০১৫-১৬ অর্থবছরের মূল্যস্ফীতি

সদ্যসমাপ্ত ২০১৫-১৬ অর্থবছরে সরকারের লক্ষ্যমাত্রার মধ্যেই থাকল মূল্যস্ফীতি। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাবে, এই অর্থবছরের বার্ষিক গড় মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৫ দশমিক ৯২ শতাংশ। সরকারের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬ দশমিক ২ শতাংশ। টানা দ্বিতীয় মেয়াদে দেশ পরিচালনায় থাকা আওয়ামী সরকারের গত সাতটি অর্থবছরে দ্বিতীয়বারের মতো মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হলো। অবশ্য সর্বশেষ জুন মাসে পয়েন্ট টু পয়েন্ট মূল্যস্ফীতি আগের মাসের চেয়ে বেশি হয়েছে।

 

গতকাল মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠক শেষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে মূল্যস্ফীতির হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করেন পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তিনি বলেন, সরকারের লক্ষ্য ছিল, বছরের গড় মূল্যস্ফীতি ৬ দশমিক ২০ শতাংশের মধ্যে রাখা। সরকার তা করতে পেরেছে। আওয়ামী লীগ সরকার যখন ক্ষমতায় আসে, তখন দুই অঙ্কের কোটায় ছিল মূল্যস্ফীতি। এখন তা অর্ধেকে নেমে এসেছে।

 

বিবিএসের হিসাবে, জুন মাসে পয়েন্ট টু পয়েন্ট মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৫ দশমিক ৫৩ শতাংশে। মে মাসে এ হার ছিল ৫ দশমিক ৪৫ শতাংশ। ঈদ উৎসব সামনে রেখে জুনে মূল্যস্ফীতি সামান্য বেড়েছে বলে মন্তব্য করেন মুস্তফা কামাল। বিবিএসের কর্মকর্তারা বলছেন, মূল্যসূচকে ব্যবহৃত সূচক ঝুড়িতে চালের ভার সবচেয়ে বেশি। আমন ও বোরোর বাম্পার ফলনের কারণে চালের মূল্য বছরজুড়ে স্থিতিশীল ছিল। এ কারণে খাদ্য মূল্যস্ফীতি অনেক কম ছিল। তবে খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী না হলে গড় মূল্যস্ফীতি ৫ শতাংশের নিচে থাকত।

জানতে চাইলে বিবিএসের মহাপরিচালক আবদুল ওয়াজেদ সমকালকে বলেন, বছরজুড়ে পণ্যের দামে বড় পরিবর্তন হয়নি। বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের মূল্য রেকর্ড পরিমাণ কম ছিল। আবার আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের দাম খুব স্থিতিশীল অবস্থায় আছে দীর্ঘ সময় ধরে। এসব কারণে ৬ শতাংশের নিচে রয়েছে গড় মূল্যস্ফীতি। একটি নির্দিষ্ট মাসের মূল্যস্ফীতি হলো, মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় ব্যবহৃত পণ্য ও সেবার দাম বিবেচনায় নিয়ে তৈরি জাতীয় ভোক্তা মূল্যসূচক আগের বছরের একই মাসের তুলনায় কত শতাংশ বাড়ল, তার হিসাব। একে বলে পয়েন্ট টু পয়েন্ট মূল্যস্ফীতি। ১২ মাসের পয়েন্ট টু পয়েন্ট মূল্যস্ফীতির গড় করলে বার্ষিক গড় মূল্যস্ফীতির হিসাব পাওয়া যায়। ২০১৩ সালের জুলাই থেকে নতুন ভিত্তিবছর ধরে (২০০৫-০৬) ভোক্তা মূল্যসূচক (সিপিআই) হিসাব করছে বিবিএস। এর আগে ১৯৯৫-৯৬ ভিত্তি বছর ধরে হিসাব করা হতো। জাতীয় মূল্যস্ফীতির পাশাপাশি গ্রাম ও শহরের মূল্যস্ফীতির আলাদা হিসাব করা হয়ে থাকে।

সরকার তার বাজেটে এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংক তার মুদ্রানীতিতে গড় মূল্যস্ফীতি একটি নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে রাখার ঘোষণা দেয়। বাংলাদেশ ব্যাংক তার মুদ্রানীতির মাধ্যমে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের কৌশল হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংক কয়েক বছর ধরে সংযত মুদ্রানীতি অনুসরণ করে আসছে। মুদ্রা সরবরাহ ও ঋণপ্রবাহে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সিনিয়র রিসার্চ ফেলো নাজনীন আহমেদ সমকালকে বলেন, চারটি কারণে মূল্যস্ফীতি সরকারের লক্ষ্যমাত্রার মধ্যেই রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংযত মুদ্রানীতি, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে স্থবিরতা, বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের মূল্য কম থাকা এবং চাল, আলুসহ কৃষিপণ্যের ভালো উৎপাদন। তবে এ মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিয়ে খুব বেশি সন্তুষ্টির সুযোগ নেই। কারণ, এটি অর্জনে ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে কিছুটা ছাড় দিতে হয়েছে, যা অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক নয়।

বিবিএসের তথ্যমতে, জুন মাসে খাদ্যসূচকে মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৪ দশমিক ২৩ শতাংশ। আগের মাসে তা ছিল ৩ দশমিক ৮১ শতাংশ। অন্যদিকে, খাদ্যবহির্ভূত সূচকে মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৭ দশমিক ৫০ শতাংশ। আগের মাসে ছিল ৭ দশমিক ৯২ শতাংশ।