গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারি রেস্তোরাঁয় জঙ্গি হামলার ঘটনায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের ক্রেতাদের জোট অ্যাকর্ড উদ্বেগ জানিয়েছে। তবে তাদের কার্যক্রমে কোনো ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না। প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী বাংলাদেশের তৈরি পোশাক কারখানার কর্মপরিবেশ উন্নয়নে কাজ চালিয়ে যাবে জোটটি। রাজধানীর বাড্ডায় অ্যাকর্ডের ঢাকা কার্যালয়ে গতকাল সোমবার বিকেলে তৈরি পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর নেতাদের সঙ্গে নিয়মিত মাসিক বৈঠকে এই উদ্বেগ জানান অ্যাকর্ডের শীর্ষ কর্মকর্তারা। নিরাপত্তা ইস্যুতে আজ মঙ্গলবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে অ্যাকর্ডের প্রতিনিধিরা সাক্ষাৎ করবেন বলেও জানা গেছে।
বিজিএমইএর নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের একপর্যায়ে আমন্ত্রিত কয়েকজন সাংবাদিককে অ্যাকর্ডের নির্বাহী পরিচালক রব ওয়েজ বলেন, ‘আমরা এখানে আছি। আমাদের কর্মকর্তারাও এখানে আছেন। অ্যাকর্ড অন্যদের মতো কাজ চালিয়ে যাবে।’ তবে তিনি বলেন, ‘আমরা নিরাপত্তা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করব।’ বৈঠকে বিজিএমইএর সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান, সহসভাপতি মাহমুদ হাসান খান ও পরিচালক মিরান আলী, অ্যাকর্ডের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা ব্র্যাড লয়েন, বিশ্বখ্যাত খুচরা বিক্রেতাপ্রতিষ্ঠান এইচঅ্যান্ডএমের জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা কার্ল গুনার ফেগারলিন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এইচঅ্যান্ডএম, সিঅ্যান্ডএ, ইন্ডিটেক্স, বেনেটন, কেরিফোর, আমেরিকান ইগলসহ বিশ্বখ্যাত দুই শতাধিক ব্র্যান্ড ও ক্রেতাপ্রতিষ্ঠান, দুটি বৈশ্বিক শ্রম সংগঠন, আট বাংলাদেশি শ্রম সংগঠন ও চারটি বেসরকারি সংস্থার সমন্বয়ে অ্যাকর্ড গঠিত হয়েছে। রানা প্লাজা ধসের পর অ্যাকর্ডের পাশাপাশি বাংলাদেশে তৈরি পোশাকশিল্পের কর্মপরিবেশের উন্নয়নে কাজ করছে উত্তর আমেরিকার ক্রেতাদের জোট অ্যালায়েন্স। গত সপ্তাহে ঢাকায় নিযুক্ত সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত ও অ্যালায়েন্সের এদেশীয় পরিচালক (কান্ট্রি ডিরেক্টর) জেমস এফ মরিয়ার্টি বলেছেন, ‘দুঃখজনক ঘটনার পরও অ্যালায়েন্স ও তার সদস্যরা কাজ চালিয়ে যাবেন।’ গুলশানের ঘটনার পর ইউরোপের ব্র্যান্ড ও ক্রেতাপ্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে ব্যবসা চালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে কেমন মনোভাব দেখাচ্ছে জানতে চাইলে অ্যাকর্ডের নির্বাহী পরিচালক রব ওয়েজ বলেন, এটি তাদের (ব্র্যান্ড ও ক্রেতাপ্রতিষ্ঠান) বিষয়। তবে বড় ব্র্যান্ড ও ক্রেতাপ্রতিষ্ঠানের কথা উদ্ধৃত করে তিনি বলেন, ব্র্যান্ড ও ক্রেতাপ্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের পোশাকশিল্পের কর্মপরিবেশ উন্নতি করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। কারখানার নিরাপত্তা পরিস্থিতি এখন তারা তদারক করছে। তাদের প্রত্যাশা, তারা তাদের ব্যবসা চালিয়ে যাবে।
গুলশানে জঙ্গি হামলার ঘটনায় পোশাকশিল্পের ব্যবসায় তাৎক্ষণিক কোনো প্রভাব পড়বে না বলে দাবি করেছেন বিজিএমইএর সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান। তিনি বলেন, ‘গুলশানের ঘটনার পর ক্রেতাদের কাছ থেকে বলার মতো নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া পাইনি। এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি না হলে পোশাকের ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হবে না।’ বিজিএমইএ সভাপতি আরও বলেন, ‘অধিকাংশ বড় ব্র্যান্ড ও ক্রেতাপ্রতিষ্ঠানের লিয়াজোঁ অফিস ঢাকায় আছে। তাদের প্রতিনিধিরা অফিস করছেন এবং আমাদের কারখানাগুলোও চলছে।’ তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও শিল্প পুলিশ যথাযথভাবে নিরাপত্তা দিচ্ছে, যাতে করে বিদেশিরা অবাধে চলাচল করতে পারে। শিগগিরই বর্তমান পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ ঘটবে বলেও তিনি আশা প্রকাশ করেন।
বাংলাদেশ গার্মেন্ট বায়িং হাউস অ্যাসোসিয়েশন (বিজিবিএ) গত শনিবার সংবাদ সম্মেলন করে বলেছে, পরিস্থিতির উন্নতি না হলে আগামী দুই মৌসুমের ক্রয়াদেশ কমতে পারে। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে বিজিবিএর আশঙ্কাকে ‘অপরিণত’ বলে উল্লেখ করেন বিজিএমইএ সভাপতি। তিনি বলেন, পোশাকের মতো ব্যবসায় তাৎক্ষণিকভাবে কেউ কাউকে ছেড়ে যায় না। বৈঠকে উপস্থিত ক্রেতা প্রতিনিধিরা কী বলেছেন জানতে চাইলে বিজিএমইএর সহসভাপতি মাহমুদ হাসান খান গত রাতে প্রথম আলোকে বলেন, এইচঅ্যান্ডএম ও টেমা ব্র্যান্ডের প্রতিনিধিরা বৈঠকে ছিলেন। তাঁরা বলেছেন, বাংলাদেশে তাঁরা তাঁদের ব্যবসা অব্যাহত রাখবেন। অপর এক প্রশ্নের জবাবে মাহমুদ হাসান খান বলেন, অ্যাকর্ড নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন। তবে তাঁরা আতঙ্কিত নন। তিনি বলেন, নিরাপত্তা ইস্যুতেই অ্যাকর্ডের কর্মকর্তারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার ইচ্ছা পোষণ করেন। আর সেটিই বিজিএমইএ ব্যবস্থা করে দিয়েছে। বিজিএমইএর সভাপতি সেই বৈঠকে উপস্থিত থাকতে পারেন।