Home বাংলা নিউজ এশিয়ার অর্থনৈতিক কেন্দ্র হওয়ার পথে হোঁচট খেল সিঙ্গাপুর

এশিয়ার অর্থনৈতিক কেন্দ্র হওয়ার পথে হোঁচট খেল সিঙ্গাপুর

এশিয়ার অর্থনৈতিক কেন্দ্র হওয়ার পথে হোঁচট খেল সিঙ্গাপুর

এশিয়ার অর্থনৈতিক কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠার পথে আরেক দফা হোঁচট খেল সিঙ্গাপুর। পুঁজিবাজার থেকে ক্রমেই বিনিয়োগ প্রত্যাহার ও ডিলিস্টিংয়ের পাশাপাশি স্থানীয় আর্থিক খাতের দুর্বলতা প্রকাশ এবং জ্বালানি চাহিদা হ্রাসের কারণে এ দুরবস্থা। খবর ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল। চলতি বছর সিঙ্গাপুরের শেয়ারবাজার প্রায় ৫৫০ কোটি ডলার হারাতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কনটেইনার অপারেটর নেপচুন ওরিয়েন্ট লাইনস ও রেলপথ অপারেটর এসএমআরটির ডিলিস্টিং সম্পন্ন হলে এ অর্থ প্রত্যাহূত হবে।

চলতি বছরের গোড়ার দিকে শর্ট সেলার ব্যবসায়ীরা কমোডিটি ব্যবসায়ী নোবল গ্রুপের হিসাবরক্ষণ ও প্রশাসন ব্যবস্থার সমালোচনা করেন। চীনসহ বিভিন্ন দেশে কয়লা ও অন্যান্য কমোডিটির চাহিদা হ্রাসের কথা জানিয়ে নোবল গ্রুপ ১২০ কোটি ডলার রাইট ডাউনের ঘোষণা দেয়। বিরাটকায় প্রতিষ্ঠানটির শেয়ার তখন ৪৪ শতাংশ মূল্য হারায়। সিঙ্গাপুরের শেয়ারবাজারে ট্রেডিং ভলিউম গত বছরের চেয়ে বেশি। কিন্তু বাজার নিস্তেজ হয়ে আছে।

সিঙ্গাপুরের স্টক এক্সচেঞ্জের ক্যাপিটালাইজেশন বর্তমানে ৬৬ হাজার ৪০০ কোটি ডলার। দুই বছর আগে কম্বাইন্ড ক্যাপিটালাইজেশন ছিল ৭৪ হাজার কোটি ডলার। নতুন তালিকাভুক্তির ঘটনা নগণ্য। উল্লেখযোগ্য তালিকাভুক্তির সর্বশেষ ঘটনা ঘটেছিল ২০১১ সালে। সেবার হংকংয়ের ধনকুবের লি কা-শিংয়ের ট্রাস্ট কোম্পানি ৫৫০ কোটি ডলারের গণপ্রস্তাব এনেছিল।

নতুন শেয়ারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ কমায় কোম্পানিগুলোরও খোলাবাজারে আসতে চাইছে না। পরিবর্তে নিজস্ব চুক্তি ও অন্যান্য ব্যবস্থায় পুঁজি গঠনে আগ্রহী হচ্ছে কোম্পানিগুলো। বেসরকারি অর্থপ্রবাহ ব্যবস্থাপনায় সিঙ্গাপুরের সুনামও কয়েকটি কারণে ক্ষুণ্ন হয়েছে। অর্থ পাচার রোধে প্রণীত আইন কার্যকরের ক্ষেত্রে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান শৈথিল্য দেখিয়েছে বলে স্থানীয় নিয়ন্ত্রক সংস্থা অভিযোগ করেছে। মালয়েশিয়ার বিনিয়োগ তহবিল ওয়ানএমডিবির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট তহবিলপ্রবাহের ব্যাপারে তদন্তের জের ধরে এ অভিয়োগ উঠেছে।

নিয়ন্ত্রক সংস্থা যেসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে শৈথিল্যের অভিযোগ করেছে, সিঙ্গাপুরের বৃহত্তম ব্যাংক ডিবিএস তার অন্যতম। এছাড়া স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ও ইউবিএস গ্রুপের স্থানীয় শাখার বিরুদ্ধেও অর্থ পাচার রোধে শৈথিল্যের অভিযোগ উঠেছে। তিনটি ব্যাংকই দাবি করেছে, সন্দেহজনক লেনদেনের ব্যাপারে তারা আগেই সিঙ্গাপুরের কেন্দ্রীয় ব্যাংককে জানিয়েছে। অন্যদিকে ওয়ানএমডিবি কোনো রকম অন্যায়ের অভিযোগ অস্বীকার করেছে। মালয়েশিযার রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানটি বলেছে, আন্তর্জাতিক চুক্তির আওতায় গ্রহণযোগ্য যেকোনো আইনানুগ তদন্তে তারা সিঙ্গাপুর কর্তৃপক্ষকে সহযোগিতা করবে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক মনিটারি অথোরিটি অব সিঙ্গাপুরের (এমএএস) ব্যবস্থাপনা পরিচালক রবি মেনন সিঙ্গাপুরের সুনাম ক্ষুণ্ন হওয়ার কথা স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, সাম্প্রতিক অনুসন্ধানের ফলাফল পরিচ্ছন্ন ও বিশ্বস্ত আর্থিক খাত হিসেবে সিঙ্গাপুরের পরিচিতিকে আঘাত করেছে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। তেলসহ বিভিন্ন কমোডিটি ট্রেডিংয়ের আঞ্চলিক কেন্দ্রের ভূমিকায় ছিল সিঙ্গাপুর। সাম্প্রতিক সময়ে দ্বীপরাষ্ট্রটি এক্ষেত্রেও ক্ষয় দেখছে। বৈশ্বিক বাজারে জ্বালানি চাহিদা হ্রাসের কারণে সিঙ্গাপুরের এ ব্যবসাটির ব্যস্ততা ও গুরুত্ব কমেছে। একই কারণে স্থানীয় বাজারে তালিকাভুক্ত অনেক কোম্পানির শেয়ারদর নিচে নেমেছে।

তবে সম্পদ ব্যবস্থাপনা ব্যবসায় সিঙ্গাপুরের অবস্থানটি এখনো দুর্বল হয়নি। গোল্ডম্যান স্যাকস ও মরগান স্ট্যানলির মতো ওয়াল স্ট্রিটের প্রতিষ্ঠানগুলো দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় নিজেদের সম্পদ ব্যবস্থাপনা ব্যবসাটি সিঙ্গাপুর থেকে পরিচালনা করছে। কয়েকটি প্রতিষ্ঠান সিঙ্গাপুরে বিনিয়োগ ব্যাংকিং কার্যক্রম সংকুচিত করলেও সম্পদ ব্যবস্থাপনা ব্যবসায়ের পরিধি বাড়িয়েছে। সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, সিঙ্গাপুরভিত্তিক সম্পদ ব্যবস্থাপকরা ২০১৪ সালে ১ লাখ ৮০ হাজার কোটি ডলারের সম্পদ দেখভাল করেছে। এর এক বছর আগে তাদের ব্যবস্থাধীন সম্পদের পরিমাণ ৩০ শতাংশ কম ছিল।

ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন অব এক্সচেঞ্জের তথ্য অনুযায়ী, ২০০৮-২০১৫ সময়কালে বিশ্বে তালিকাভুক্ত কোম্পানির সংখ্যা ৬ শতাংশ কমে ৪৩ হাজার ৫৩৯-এ নেমেছে। যদিও এ সময়ে বিশ্বের পুঁজিবাজারগুলোয় অর্থের পরিমাণ বেড়েছে। মূলত বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রণোদনা ও সস্তা ঋণের সুবাদে ২০০৮-২০১৫ সময়কালে বিশ্বজুড়ে পুঁজিবাজারে অর্থের পরিমাণ ৩২ দশমিক ৩ ট্রিলিয়ন থেকে বেড়ে ৬১ দশমিক ৮ ট্রিলিয়ন হয়েছে। সিঙ্গাপুর এক্সচেঞ্জ লিমিটেডের চু সুটাট মনে করেন, প্রাইভেট মার্কেট ও অধিগ্রহণ-একীভূতকরণের (এমঅ্যান্ডএ) আবেদন বৃদ্ধির কারণেই কোম্পানিগুলো পুঁজির জন্য খোলাবাজারমুখো হচ্ছে না। এমঅ্যান্ডএ কার্যক্রমের গতি বৃদ্ধির পেছনেও সস্তা ঋণের অবদান রয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

বিশ্বজুড়ে প্রাথমিক গণপ্রস্তাবনার (আইপিও) দুর্বলতা দেখা যাচ্ছে। বার্কশায়ার হ্যাথাওয়ের ওয়ারেন বাফেট ও জেপি মরগান চেজ অ্যান্ড কোম্পানির জেমস ডিমনের মতো সিইওরা তাই আইপিও বাজার চাঙ্গা করার আহ্বান জানাতে জোটবদ্ধ হয়েছেন। সিঙ্গাপুরের স্বপ্ন হোঁচট খাওয়ার আরেকটি কারণ হংকং। চীনের মূল ভূখণ্ড থেকে আইপিওর নিরবচ্ছিন্ন প্রবাহ দেখছে সিঙ্গাপুর। এ তালিকায় সর্বশেষ সংযোজন ৭০০ কোটি ডলারে পোস্টাল সেভিংস ব্যাংক অব চায়নার তালিকাভুক্তি। হংকংয়ের এক্সচেঞ্জ অপারেটরের আকার ৩ হাজার কোটি। সিঙ্গাপুর এক্সচেঞ্জ হলো ৬১০ কোটি।