ঈদের ছুটির কারণে কনটেইনারের স্তূপ জমেছে চট্টগ্রাম বন্দরে। ছবিটি গতকাল দুপুরে তোলা l প্রথম আলোঈদের দিন ছাড়া দিনরাত ২৪ ঘণ্টা জাহাজ থেকে নামানো হয়েছে আমদানি পণ্যভর্তি কনটেইনার। কনটেইনার নামানো হলেও টানা চার দিন বন্দর চত্বর থেকে এক কনটেইনার পণ্যও খালাস করেননি আমদানিকারকেরা। ফলে কনটেইনার রাখার আর জায়গা নেই। এ কারণে জাহাজ থেকে এখন কনটেইনার নামিয়ে রাখা যাচ্ছে না। কনটেইনারের স্তূপের কারণে বন্দরের পরিচালন কার্যক্রমে স্থবিরতা তৈরি হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ছুটির কারণে তৈরি হওয়া এই জটে পড়ে সব পক্ষকেই মাশুল দিতে হচ্ছে। বাড়তি সময় অবস্থানের জন্য কনটেইনার জাহাজ পরিচালনাকারীর খরচ বাড়ছে। কনটেইনারে নির্ধারিত সময়ের বেশি পণ্য রাখার জন্য বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোকে জরিমানা দিতে হবে আমদানিকারকদের। ছুটি শেষে জরুরি প্রয়োজনেও কাঁচামাল হাতে পেতে সময় লাগবে পোশাকশিল্প মালিকদের। কারণ, পণ্যভর্তি কনটেইনার নিয়ে সাগরে অপেক্ষা করলেও ক্রম অনুযায়ী পালাক্রমে জেটিতে ভেড়ানো হবে এসব জাহাজ।
চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি মাহবুবুল আলম গতকাল শনিবার প্রথম আলোকে বলেন, এই জট থেকে শিক্ষা নিয়ে খুব দ্রুত বন্দর সম্প্রসারণে হাত দিতে হবে। কারণ, বন্দরের এখন যতটুকু ক্ষমতা রয়েছে তার সর্বোচ্চ ব্যবহৃত হচ্ছে। সামনে আমদানি-রপ্তানি দিন দিন আরও বাড়বে। সেই হারে অবকাঠামো না হলে এই ঈদের ছুটির সময়ের মতো সব সময় জট লেগে থাকবে। ব্যবসার খরচও বাড়বে।
বন্দর কর্মকর্তারা বলেন, কনটেইনার খুলে পণ্য খালাস নেওয়ার জন্য যেসব ফাঁকা জায়গা ছিল, সেখানেও এখন রাখা হয়েছে কনটেইনার। চট্টগ্রামের ১৬টি বেসরকারি ডিপো এবং আমদানিকারকেরা খালাস নেওয়ার পর জায়গা ফাঁকা হলে তখন জাহাজ থেকে কনটেইনার নামিয়ে বন্দর চত্বরে রাখা হচ্ছে। বন্দর সচল থাকবে কি না, তা এখন নির্ভর করছে এসব বেসরকারি ডিপো ও আমদানিকারকদের পণ্য খালাস করে নেওয়ার ওপর।
গতকাল পর্যন্ত বন্দরের ধারণক্ষমতার চেয়ে বাড়তি আমদানি পণ্যভর্তি কনটেইনার ছিল ৪ হাজারটি (প্রতিটি ২০ ফুট দীর্ঘ)। জেটিতে ছিল ১১টি কনটেইনার জাহাজ। জেটির বাইরে সাগরে অপেক্ষায় ছিল ২৩টি কনটেইনার জাহাজ। জেটিতে ভেড়ার অপেক্ষায় থাকা এসব জাহাজে কম-বেশি পণ্যভর্তি ১৮ হাজার কনটেইনার রয়েছে। এর আগে ঈদের ছুটির সময়ও এত জাহাজকে বাইরে অপেক্ষা করতে হয়নি। ছুটি শেষ হলেও খুব দ্রুত এই জট নিরসন হবে না বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
বন্দর পর্ষদ সদস্য জাফর আলম গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, আমদানিকারক ও কনটেইনার ডিপো পরিচালনাকারীরা বন্দর থেকে পণ্যভর্তি কনটেইনার খালাস না নেওয়ায় পণ্যভর্তি কনটেইনারের সংখ্যা বেড়ে গেছে। দুদিন শুল্কায়ন বন্ধ থাকার পর কাল (আজ রোববার) কাস্টমস খুলবে। সোমবার থেকে পণ্য খালাস শুরু হলে ধীরে ধীরে এই জট কমতে পারে। বন্দরের কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখতে ব্যবহারকারীদের নিয়ে দ্রুত বৈঠকে বসে সমস্যার সমাধান করা হবে।
বন্দর সূত্রে জানা গেছে, গতকাল বেসরকারি ডিপোগামী ৪ হাজার ৬৭৯ কনটেইনারভর্তি পণ্য বন্দর চত্বরে পড়ে ছিল। এসব পণ্য ডিপোতে খালাসের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কিন্তু ডিপোগুলোতেও পর্যাপ্ত জায়গা ও আনা-নেওয়ার যানবাহন না থাকায় এসব পণ্যভর্তি কনটেইনার নিতে পারছে না তারা। ফলে বন্দরে কনটেইনার জট আরও তীব্র হয়েছে।
আমদানিকারকের পক্ষে পণ্য খালাসে নিয়োজিত প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এ কে এম আকতার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ছুটির সময় পণ্য খালাসের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকসহ অনেকগুলো প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় পণ্য খালাসের হার এমনিতেই কম থাকে। তবে আজ রোববার থেকে সব অফিস খুলবে। পণ্য খালাসও শুরু হবে।