এক বছরের ব্যবধানে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে কনটেইনার পরিবহন বেড়েছে ১৭ শতাংশ। গত ১৫ বছরের মধ্যে এই হার দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। কনটেইনার পরিবহনের এই হার বেড়েছে মূলত পোশাকশিল্পের ওপর ভর করে। আবার নানা উন্নয়ন প্রকল্পের যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম আমদানি বাড়ায় কনটেইনার পরিবহন বাড়ছে। বন্দরের হিসাবে, সদ্য শেষ হওয়া অর্থবছরে বন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানি ও খালি কনটেইনার পরিবহন হয়েছে ২১ লাখ ৮৯ হাজার ৪৩৯টি (প্রতিটি ২০ ফুট দীর্ঘ হিসাবে)। গত বছর পরিবহন হয়েছিল ১৮ লাখ ৬৭ হাজার ৬২টি। বন্দর সূত্রে এমন তথ্য জানা গেছে।
বিজিএমইএর বন্দর ও জাহাজীকরণ-বিষয়ক কমিটির চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন চৌধুরী গতকাল মঙ্গলবার প্রথম আলোকে বলেন, বন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানি হওয়া কনটেইনার পণ্যের বড় অংশ পোশাকশিল্পের কাঁচামাল ও প্রস্তুত পণ্য। এ খাতে ব্যবসা বাড়ার কারণে পোশাকশিল্পের কাঁচামাল আমদানি যেমন বাড়ছে, তেমনি রপ্তানিও বাড়ছে। পোশাকশিল্পের পণ্য পরিবহন সামনে আরও বাড়বে। সে কারণে এখনই নতুন জেটি ও ইয়ার্ড নির্মাণ এবং যন্ত্রপাতি কেনার কাজে হাত দেওয়া উচিত; না হলে বিপদে পড়বে পোশাকশিল্প।
বন্দরের তথ্যে দেখা যায়, কনটেইনারে আমদানি পণ্যের বড় অংশ পোশাকশিল্পের কাঁচামাল ও যন্ত্রপাতি। এ ছাড়া রয়েছে ওষুধ ও ইস্পাত কারখানার কাঁচামাল, খাদ্যপণ্য, রাসায়নিক, ইলেকট্রনিক সামগ্রীসহ বিভিন্ন ধরনের সরঞ্জাম। রপ্তানি পণ্যের বড় অংশই পোশাকশিল্পের প্রস্তুত পণ্য। এর বাইরে হিমায়িত খাদ্য, পাট, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রয়েছে।
বন্দরের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, প্রতিবারের মতো এবারও আমদানি পণ্যভর্তি ও খালি কনটেইনার পরিবহন বেড়েছে বেশি। গত বছরের তুলনায় কনটেইনারে পণ্য আমদানি বেড়েছে ১৮ শতাংশ। খালি কনটেইনার পরিবহন বেড়েছে ৩০ শতাংশ। যে হারে পণ্য আমদানি হয়, সেই হারে রপ্তানি না হওয়ায় খালি কনটেইনার বিদেশে পাঠাতে হয়। এ কারণে খালি কনটেইনার বেড়েছে। কনটেইনারে রপ্তানি বেড়েছে ৬ শতাংশ। তিন ধরনের কনটেইনার মিলে গড়ে বেড়েছে ১৭ দশমিক ২৭ শতাংশ।
বন্দর পর্ষদ সদস্য জাফর আলম প্রথম আলোকে বলেন, দেশে ব্যবসার প্রবৃদ্ধি বাড়ছে। পোশাক খাতে আমদানি-রপ্তানি বাড়ছে। নানা মেগা প্রকল্প বাস্তবায়িত হওয়ায় কনটেইনারেও এসব প্রকল্পের যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম আনা হচ্ছে। এসব কারণে কনটেইনারে পণ্য আমদানি-রপ্তানি বাড়ছে। তিনি আরও বলেন, পণ্য আমদানি বাড়ায় পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল নামে নতুন একটি টার্মিনাল নির্মাণের কাজে হাত দেওয়া হচ্ছে। ঈদের আগে তিন সপ্তাহে খালি কনটেইনার রাখার ইয়ার্ডও নির্মিত হয়েছে। নতুন নতুন উন্নয়নকাজ হাতে নেওয়া হচ্ছে।
বন্দরের তথ্যে দেখা যায়, সমুদ্রপথে কনটেইনার পরিবহন হয় চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর দিয়ে। এর মধ্যে চট্টগ্রামে ৯৭ শতাংশ এবং মোংলা দিয়ে ৩ শতাংশ কনটেইনার আনা-নেওয়া হয়। খোলা ও বস্তাবন্দী পণ্য সাগরে বড় জাহাজ থেকে ছোট জাহাজে স্থানান্তর করা যায়। তবে জাহাজ থেকে কনটেইনার ওঠানো-নামানোর জন্য ভারী যন্ত্রপাতি ও অবকাঠামো দরকার।