গুলশান ও কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় সাম্প্রতিক জঙ্গি হামলার পরিপ্রেক্ষিতে নিরাপত্তা ইস্যুতে নিজেদের সব সদস্য কারখানার পোশাকশ্রমিক ও কর্মকর্তাদের তথ্য যাচাই-বাছাই করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ। শ্রমিকদের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের অপরাধমূলক কাজের অভিযোগ আছে কি না, সেটি জানতেই এমনটি করা হবে বলে দাবি সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের। রাজধানীর কারওয়ান বাজারে বিজিএমইএর কার্যালয়ে গতকাল বুধবার বিকেলে অনুষ্ঠিত সংগঠনের পরিচালনা পর্ষদের মাসিক বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এতে সাম্প্রতিক জঙ্গি হামলার পর দেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতি ও পোশাকশিল্প নিয়ে আলোচনা করেন সংগঠনের সাবেক ও বর্তমান নেতারা।
বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন বিজিএমইএর সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান। এতে সংগঠনের পর্ষদের সদস্যদের ছাড়াও সাবেক চার সভাপতি টিপু মুন্সী, কুতুবউদ্দিন আহমেদ, আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী পারভেজ ও আতিকুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক শেষে গত রাতে বিজিএমইএর সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল পোশাকশিল্পের বিদেশি ক্রেতাদের এয়ারপোর্ট থেকে কারখানা পরিদর্শন পর্যন্ত নিরাপত্তা দেওয়ার নিশ্চয়তা দিয়েছেন। সেটি বিদেশি ব্র্যান্ড ও ক্রেতা প্রতিষ্ঠান, বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও কারখানার মালিকদের লিখিত আকারে অবহিত করার বিষয়ে আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত হয়েছে বৈঠকে। ক্রেতাদের আশ্বস্ত করতেই এটি করা হবে বলে জানান তিনি।
শ্রমিকের তথ্য যাচাই-বাছাইয়ের বিষয়ে জানতে চাইলে বিজিএমইএর সভাপতি বলেন, ‘কারখানাগুলো সব সময়ই পোশাকশ্রমিকদের তথ্য যাচাই-বাছাই করে। এটি উন্নত কর্মপরিবেশ পরিপালনের (কমপ্লায়েন্স) একটি শর্ত। তবে এবার আমরা বিজিএমইএর মাধ্যমে করার বিষয়ে প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এতে পোশাকশ্রমিকদের ভয় পাওয়ার কিছু নেই।’ তিনি বলেন, পোশাকশ্রমিকদের পাশাপাশি কারখানার মধ্যম সারির কর্মকর্তাদের তথ্যও যাচাই-বাছাই হবে। শ্রমিক ও কর্মকর্তার তথ্য যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়াটি কীভাবে সম্পন্ন হবে জানতে চাইলে বিজিএমইএর একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, কারখানা কর্তৃপক্ষ প্রথমে তাঁদের নিয়োগকৃত শ্রমিক ও কর্মকর্তার নাম-ঠিকানার বিস্তারিত বিজিএমইএ কার্যালয়ে পাঠাবে। পরে তাঁদের স্থায়ী ঠিকানা অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট জেলার পুলিশ সুপারের কাছে পাঠাবে বিজিএমইএ কর্তৃপক্ষ। সে অনুযায়ী পুলিশ খুঁজে দেখবে শ্রমিক ও কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কোনো মামলা বা অপরাধমূলক কাজের অভিযোগ আছে কি না। থাকলে সে অনুযায়ী আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
হাতে গোনা কয়েকটি ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের কমপ্লায়েন্স শর্ত মানতে কিছু কারখানা কর্তৃপক্ষ তাদের শ্রমিক ও কর্মকর্তার নাম-ঠিকানা স্থানীয় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) কাছে পাঠায়। তখন ওসি সেটি যাচাই-বাছাই করে শ্রমিক ও কর্মকর্তাদের পক্ষে কিংবা বিপক্ষে প্রতিবেদন তৈরি করে কারখানাকে পাঠান। তবে এ ক্ষেত্রে অনেক সময়ই সঠিক চিত্র পাওয়া যায় না বলে জানান বিজিএমইএর একাধিক নেতা।
জানতে চাইলে বিজিএমইএর সহসভাপতি মাহমুদ হাসান খান প্রথম আলোকে বলেন, শ্রমিক ও কর্মকর্তাদের তথ্য যাচাইয়ের বিষয়টি এখনো প্রাথমিক সিদ্ধান্ত। সবার আগে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিতে হবে। কারণ, মন্ত্রণালয় থেকে অনুমতি না দিলে পুলিশ সুপাররা তো কিছু করতে পারবেন না। তিনি বলেন, ‘নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্যই পোশাকশ্রমিক ও কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কোনো থানায় মামলা বা গ্রেপ্তারি পরোয়ানা আছে কি না, জানতেই তথ্য যাচাই-বাছাইয়ের সিদ্ধান্তটি নেওয়া হয়েছে। বিজিএমইএর তথ্য, ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগে সংগঠনটির সদস্য সংখ্যা ৪ হাজার ২৯৬। তবে ঢাকার ১ হাজার ১৬৩ কারখানা বর্তমানে বন্ধ আছে। বাকি কারখানায় কাজ করেন আনুমানিক ৩০ লাখ পোশাকশ্রমিক। তবে সুনির্দিষ্ট সংখ্যা তথ্যভান্ডারের কাজ শেষ হলে জানা যাবে বলে জানালেন মাহমুদ হাসান খান।
এদিকে গুলশানে জঙ্গি হামলার পর নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন ইউরোপীয় ক্রেতাদের জোট অ্যাকর্ডের প্রতিনিধিরা গত মঙ্গলবার দুপুরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। অ্যাকর্ডের পক্ষে ছিলেন জোটের নির্বাহী পরিচালক রব ওয়েজ, এইচঅ্যান্ডএমের জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা কার্ল গুনার ফেগারলিন প্রমুখ। বিজিএমইএর পক্ষে ছিলেন বিজিএমইএর সভাপতি সিদ্দিকুর রহমানসহ সাবেক দুই সভাপতি। বিজিএমইএ গতকাল এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি জানিয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যাকর্ডের প্রতিনিধিদের আশ্বস্ত করে বলেন, মন্ত্রণালয় ক্রেতাদের নিরাপত্তার বিষয়ে সব ধরনের সহযোগিতা করছে। ভবিষ্যতেও এটি অব্যাহত থাকবে। ক্রেতারা বিমানবন্দরে নামার পর থেকে কারখানা পরিদর্শনসহ সব ধরনের চলাফেরায় প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা পাবেন।
সভায় উপস্থিত শিল্প পুলিশের মহাপরিচালক আবদুস সালাম বলেন, ক্রেতারা কোথায় যাবেন, কোথায় থাকবেন, সেসব জানালে শিল্প পুলিশ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। বিজিএমইএর সভাপতি বৈঠকে এ নিয়ে বলেন, নিরাপত্তা ইস্যুতে সরকার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নিয়েছে। তারপরও ক্রেতারা যদি আপতত আসতে না চান, তবে পোশাক রপ্তানিকারকেরা বিদেশে গিয়ে তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। এ পরিস্থিতি সাময়িক বলেও জানান তিনি।