গত অর্থবছরে পোশাক রফতানি বেড়েছে ১০ শতাংশেরও বেশি। ছোট-বড় প্রায় সব বাজারেই রফতানি বেড়েছে। এ প্রবণতার মধ্যেও অন্যতম বাজার তুরস্কে রফতানি কমেছে ৬ শতাংশ। দেশটিতে রফতানিতে এ অবস্থা চলছে টানা তিন অর্থবছর। ধারাবাহিক এ পতনের পেছনে স্থানীয় শিল্প রক্ষায় তুরস্ক সরকারের নেওয়া নীতি। বাংলাদেশসহ সব দেশ থেকে পোশাক আমদানিতে শুল্ক আরোপ করা হয় ২০১১ সালে। মূলত এ কারণেই তুরস্কে রফতানি কমছে ধারাবাহিকভাবে। এ ছাড়া বাংলাদেশের কাছে দ্বিতীয় রফতানিকারকের মর্যাদা হারানোর কারণে তৈরি হওয়া মনস্তাত্তি্বক দূরত্বও রফতানি কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ।
স্থানীয় পোশাক শিল্পের স্বার্থে ২০১১ সালে সুরক্ষা নীতি নেয় তুরস্ক সরকার। এ প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশসহ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে পোশাক আমদানিতে ২৭ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়। উন্নয়নশীল দেশের জন্য এ হার ৩৭ থেকে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত। ওই বছরের ২২ জুলাই থেকে এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হওয়ার আগে তুরস্কে রফতানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা ভোগ করেছে বাংলাদেশ। পোশাক ছাড়া অন্যান্য পণ্যের রফতানিও কমছে তুরস্কে। সার্বিক রফতানি ২০১৩-১৪ অর্থবছরের ৮৬ কোটি ডলারের রফতানি পরের অর্থবছর (২০১৪-১৫) ৭২ কোটি ডলারে নেমে আসে। গত অর্থবছরে ৬৬ কোটি ডলারে নেমে এসেছে। তৈরি পোশাকের বাইরে তুরস্কে রফতানি তালিকায় রয়েছে পাট, পাটের সুতা, চামড়া ও সিরামিক পণ্য।
কয়েকজন উদ্যোক্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মুসলিম দেশ হিসেবে সুরক্ষা নীতি থেকে বাংলাদেশকে অব্যাহতি দেওয়ার জন্য দু’দফা সফরে তুরস্ক সরকারকে অনুরোধ জানিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর এ অনুরোধ পরে বিবেচনা করা হবে বলে তুরস্ক সরকারের পক্ষে আশ্বাস দেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রীর সফরের আগে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারাসহ বিজিএমইএর একটি প্রতিনিধি দল এ বিষয়ে আলোচনার জন্য তুরস্ক সফরে যায়। স্থানীয় ব্যবসায়ী এবং সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে তারা বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করে। বাংলাদেশের পোশাকের কারণে তুরস্কের পোশাক খাত যে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে না_ তারা এ রকম বেশ কিছু তথ্য এবং দলিল তুলে ধরেন। কিন্তু কোনো অনুরোধ রক্ষা করেনি তুরস্ক সরকার। ২০১০ সালে তৈরি পোশাকের বিশ্ব বাজারে তুরস্ককে পেছনে ফেলে দ্বিতীয় প্রধান রফতানিকারক দেশের মর্যাদা পায় বাংলাদেশ। এর পরের বছরই পোশাক আমদানিতে শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
বিজিএমইএ সূত্রে জানা গেছে, সমাপ্ত অর্থবছরের ৪৬ কোটি ডলারের মধ্যে ৩৪ কোটি ডলার এসেছে ওভেন পোশাক খাত থেকে। আগের অর্থবছরে (২০১৪-১৫) ওভেনের অংশ ছিল ৩৬ কোটি ডলার। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ছিল ৪৪ কোটি ডলার। অর্থাৎ ওভেনের আয় ধারাবাহিকভাবে কমছে। পোশাকের অপর খাত নিটের অবস্থাও একই রকম। তিন অর্থবছরে নিটের রফতানি আয় কমে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে_ ১৮ কোটি, ১৩ কোটি ও ১২ কোটি ডলার। বিজিএমইএর পরিচালক আশিকুর রহমান তুহিন সমকালকে বলেন, তুরস্কে রফতানি কমে যাওয়ার পেছনে শুল্কারোপই একমাত্র কারণ নয়। কারণ যুক্তরাষ্ট্রেও বাংলাদেশের পোশাক রফতানিতে শুল্কারোপ রয়েছে। তার পরও রফতানি বাড়ছে। তার মতে, শুল্কারোপের সঙ্গে বাংলাদেশের কাছে দ্বিতীয় রফতানিকারকের মর্যাদা হারানোর কারণেই একটা মনস্তাত্তি্বক দূরত্ব তৈরি হয়েছে। রফতানি কমে যাওয়ার পেছনে এ বিষয়টিও কাজ করেছে।
২০১০ সালের নভেম্বরে ঢাকা সফরে তুরস্কের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী এবং বর্তমান প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়েপ এরদোয়ান বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য ৩০০ কোটি ডলারে উন্নীত করার ঘোষণা দেন। তবে পোশাক আমদানিতে শুল্ক আরোপের কারণে দুই দেশের বাণিজ্য তিন বছর আগের অবস্থানে থমকে আছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, দুই দেশের বাণিজ্য এখনও ১০০ কোটি ডলারের মধ্যেই সীমিত। তুলা এবং বস্ত্র খাতের যন্ত্রপাতি ও নির্মাণসামগ্রী আমদানি করা হয় তুরস্ক থেকে।