পরিবেশবান্ধব শিল্পায়নের জন্য বর্তমানের চেয়ে কম সুদে ঋণ চান উদ্যোক্তারা। এজন্য একটি ‘সবুজ অর্থায়ন এজেন্সি’ করার প্রস্তাব এসেছে উদ্যোক্তাদের পক্ষ থেকে। একই সঙ্গে কোন শিল্প কোথায় স্থাপন হবে সেজন্য একটি অঞ্চলভিত্তিক ব্যবস্থা (জোনিং) করারও প্রস্তাব করেছেন উদ্যোক্তারা। গতকাল রোববার পরিবেশবান্ধব শিল্পায়ন নিয়ে মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এমসিসিআই) ও এশিয়া ফাউন্ডেশন আয়োজিত সেমিনারে তারা এসব প্রস্তাব করেন। সেমিনারের অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, একক কোনো শিল্প প্রতিষ্ঠানের পক্ষে ইটিপি স্থাপনের মতো পরিবেশবান্ধব উদ্যোগ নেওয়া সম্ভব নয়। যে কারণে শিল্প-কারখানায় বর্জ্য পরিশোধনাগার (ইটিপি) ও বর্জ্য ফেলার জায়গা নির্মাণ সরকারিভাবে করলে সহজ সমাধান হবে। এজন্য অর্থমন্ত্রী অবশ্য উদ্যোক্তাদের বেশি কর দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। মুহিত বলেন, সরকারের বর্তমানে যে রাজস্ব আয় হয় তা দিয়ে এ কাজ করা সম্ভব নয়। সরকারের কাছ থেকে এই সেবা পেতে হলে রাজস্ব আয় বাড়াতে হবে।
অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, শিল্পে বর্জ্য তৈরি হচ্ছে। কিন্তু তার পরিশোধনাগার নেই। আবার বর্জ্য ফেলার বা সংরক্ষণের ব্যবস্থা নেই। ট্যানারি শিল্পে সরকার বর্জ্য পরিশোধনাগার করে দিচ্ছে। সরকারের কাছ থেকে এই সমাধান পেতে রাজস্ব বাড়াতে হবে। অর্থমন্ত্রীও জোনিংয়ের পক্ষে মত দেন। এমসিসিআই সভাপতি সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর বলেন, পরিবেশবান্ধব শিল্পায়ন এখন সময়ের দাবি। সামাজিক ও পরিবেশগতভাবে যেসব শিল্প প্রতিষ্ঠান সবুজ কার্যক্রমের অংশ হতে পারছে না, বিশ্বায়নে তাদের টিকে থাকা এখন চ্যালেঞ্জ। বাংলাদেশ এ বিষয়ে এখনও প্রস্তুত নয়। যে কারণে বাংলাদেশের এখনই এ বিষয়ে একটি নীতিমালা করা প্রয়োজন, যাতে দেশের শিল্প খাত দীর্ঘ মেয়াদে সবুজ শিল্পায়নে উদ্যোগ নিতে পারে। এজন্য তিনি সরকারকে একটি গ্রিন ফান্ডিং এজেন্সি প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানান।
এমসিসিআইর সাবেক সভাপতি আনিস উদ দৌলা বলেন, ইটিপি কারোর একার পক্ষে করা সহজ নয়। এজন্য যৌথভাবে করার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। শিল্প সচিব মোশাররফ হোসেন ভঁূইয়া বলেন, শিল্পনীতিতে পরিবেশবান্ধব শিল্পায়নের বিষয়ে উদ্যোগ রয়েছে। এ বিষয়টি সরকারের অগ্রাধিকার কার্যক্রমগুলোর অন্যতম। উদ্যোক্তারা যে কোনো ধরনের সহায়তা পাবেন। ওয়াশিং ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব মহিউদ্দিন শেখ বলেন, অর্থায়নের অভাবে এ খাতে ইটিপি করা সম্ভব হচ্ছে না। তিনি পরিবেশের স্বার্থে কম সুদে ঋণের ব্যবস্থা করার দাবি জানান। এনভয় গ্রুপের চেয়ারম্যান কুতুবউদ্দিন আহমেদ বলেন, পরিবেশবান্ধব কার্যক্রমে প্রাথমিক বিনিয়োগ বেশি বলে মনে হয়। কিন্তু এক পর্যায়ে এটা আর্থিক সাশ্রয়ী হিসেবে কাজ করে। রহিমআফরোজ রিনিউএবল এনার্জি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুনাওয়ার মিসবাহ মঈনও এ খাতে ঋণের সুদহার বেশি বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, পরিবেশবান্ধব শিল্পায়নে নবায়নযোগ্য জ্বালানি ভূমিকা রাখতে পারে। মতিঝিলে চেম্বার ভবনে অনুষ্ঠিত সেমিনারে পরিবেশবান্ধব শিল্পায়ন নিয়ে দুটি উপস্থাপনা তুলে ধরেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এম আবু ইউসুফ ও সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক ফাহমিদা খাতুন।