Home বাংলা নিউজ বিদেশি বিনিয়োগকারীরা পরিস্থিতি নজরে রাখছে: এমসিসিআই

বিদেশি বিনিয়োগকারীরা পরিস্থিতি নজরে রাখছে: এমসিসিআই

এমসিসিআই

গুলশানে জঙ্গি হামলার ঘটনার পর বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশের ওপর থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়নি বলে মনে করে মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এমসিসিআই)। সংগঠনটি বলেছে, বাংলাদেশের অপেক্ষাকৃত কম খরচের শ্রমশক্তি ও দক্ষ সরবরাহ শৃঙ্খল এখনো বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছে আকর্ষণীয়। তবে জঙ্গি হামলার ঘটনার পর তারা ভবিষ্যতে কী হয়, তার দিকে তীক্ষ্ণ নজর রাখছে। দেশের অর্থনীতির ২০১৫-১৬ অর্থবছরের এপ্রিল-জুন প্রান্তিক নিয়ে এক পর্যালোচনায় এসব কথা বলেছে এমসিসিআই। প্রতি তিন মাস পরপর এমন পর্যালোচনা প্রকাশ করে ব্যবসায়ীদের এ সংগঠন।

এপ্রিল-জুন ছিল অর্থবছরের শেষ প্রান্তিক। তাই এমসিসিআইয়ের এবারের পর্যালোচনায় পুরো অর্থবছরের চিত্রই উঠে এসেছে। সংগঠনটি বলেছে, বাংলাদেশের অর্থনীতি ভালোভাবেই এগোচ্ছে, তবে গতি সম্ভাবনার চেয়ে কম। অপ্রতুল অবকাঠামো এবং গ্যাস-বিদ্যুতের ঘাটতি এখন অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি বাড়ানোর পথে সবচেয়ে বড় বাধা। বিনিয়োগের বাধা অপ্রতুল অবকাঠামো, গ্যাস-বিদ্যুতের ঘাটতি, নীতির ধারাবাহিকতার অভাব, প্রক্রিয়াগত জটিলতা, জমির অভাব ও রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার ঝুঁকি

পর্যালোচনায় আরও বলা হয়েছে, ২০২১ সাল নাগাদ মধ্যম আয়ের দেশ হতে চাইলে বিনিয়োগের হার বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই। সরকার এখন অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি বাড়াতে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধির চ্যালেঞ্জের মুখে আছে। এমসিসিআইয়ের পর্যালোচনায় বিগত অর্থবছরের ১১ মাসের সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগের (এফডিআই) চিত্র তুলে ধরে বলা হয়, এ সময় এফডিআই প্রায় ১৬৭ কোটি ডলার থেকে বেড়ে ১৮৭ কোটি ডলার হয়েছে। ২০১৩ সাল থেকে সম্ভাব্য বিদেশি বিনিয়োগকারীরা নতুন বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ‘ধীরে চলো নীতিতে’ এগোচ্ছে। গ্যাস-বিদ্যুতের ঘাটতি, অপ্রতুল অবকাঠামো, নীতির ধারাবাহিকতার অভাব, প্রক্রিয়াগত জটিলতা, জমির অভাব, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার ঝুঁকি ইত্যাদি নতুন বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বাধা। বিনিয়োগ টানতে এসব বাধা দূর করতে হবে।

পর্যালোচনায় সুদের হার নিয়ে আলোচনার অংশে দেশি বিনিয়োগের প্রসঙ্গটি উঠে আসে। এতে বলা হয়, বিনিয়োগ মন্থর পরিবেশের কারণে দেশের ব্যবসায়ীরা ব্যাংকঋণ নিয়ে ব্যবসা সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে অপেক্ষা করা এবং পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রাখার নীতি গ্রহণ করেছেন। এমসিসিআইয়ের পর্যালোচনায় বিগত অর্থবছরে অর্থনীতির বিভিন্ন সূচকের চিত্র তুলে ধরা হয়। বলা হয়, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সাময়িক হিসাবে গত বছর মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ৭ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ, যা আগের বছরের চেয়ে শূন্য দশমিক ৫০ শতাংশীয় পয়েন্ট বেশি। এ সময় শিল্প খাতে প্রবৃদ্ধি ৯ দশমিক ৬৭ শতাংশ থেকে বেড়ে ১০ দশমিক ১০ শতাংশ ও সেবা খাতে প্রবৃদ্ধি ৫ দশমিক ৮ শতাংশ থেকে বেড়ে ৬ দশমিক ৭ শতাংশ হয়েছে। অন্যদিকে কৃষিতে প্রবৃদ্ধি ৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ থেকে কমে ২ দশমিক ৬০ শতাংশ হয়েছে। কমার কারণ, মৌসুমে ধানের কম দর।

এমসিসিআই বলেছে, গত অর্থবছর প্রবাসী আয় ২ দশমিক ৫৩ শতাংশ কমেছে। জ্বালানি তেলের দাম কমায় এমন হয়েছে। বাংলাদেশের বেশির ভাগ শ্রমিক তেলসমৃদ্ধ দেশগুলোতে কাজ করে। তেলের দাম কমে যাওয়া ওই সব দেশে থাকা শ্রমিকদের মজুরির ওপর প্রভাব ফেলেছে। এ ছাড়া যুক্তরাজ্য, মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরে মুদ্রার অবমূল্যায়নও প্রবাসী আয় কমার কারণ। এমসিসিআই মনে করে, পোশাক খাতের সংস্কার ক্রেতাদের আস্থা বাড়িয়েছে, রপ্তানি আয় বৃদ্ধিতেও ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছে। বিগত অর্থবছর মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে ছিল, বিনিময় হার স্থিতিশীল ছিল এবং বৈদেশিক মুদ্রার মজুত স্বস্তিদায়ক পর্যায়ে উন্নীত হয়েছে।

পর্যালোচনায় চলতি ২০১৬-১৭ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিক (জুলাই-সেপ্টেম্বর) সম্পর্কে একটি পূর্বাভাস তুলে ধরা হয়েছে। এমসিসিআই মনে করে, এ সময় রপ্তানি আয়, আমদানি, প্রবাসী আয় ও বৈদেশিক মুদ্রার মজুত বাড়বে। চাহিদা বৃদ্ধি ও ঈদুল আজহার কারণে মূল্যস্ফীতি বাড়তে পারে। এমসিসিআই বলেছে, রাজস্ব আদায়ের ঘাটতি ও বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির দুর্বল বাস্তবায়ন অর্থনীতির জন্য প্রধান দুটি উদ্বেগ।