কোরবানির ঈদ সমাগত। এবারও কোরবানির পশুর চামড়ার মূল্য নির্ধারণ করবেন ব্যবসায়ীরা। তবে এবার চামড়ার দর ৩০ শতাংশ কমিয়ে নির্ধারণ করতে চান তারা। গত শনিবার চামড়া খাতের তিন সংগঠনের ব্যবসায়ীরা আলাদা বৈঠক করে প্রাথমিকভাবে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
আজ সোমবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে কোরবানির পশুর কাঁচা চামড়ার মূল্য নির্ধারণ, কাঁচা চামড়া সংগ্রহ, প্রক্রিয়াজাতকরণ ও অন্যান্য প্রাসঙ্গিক বিষয়ে সভা হবে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠকের আগে প্রস্তুতি হিসেবে আলাদাভাবে চামড়া-সংশ্লিষ্ট তিন ব্যবসায়ী সংগঠন বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএ), বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশন (বিএইচএসএমএ) এবং বাংলাদেশ ফিনিশড লেদার, লেদারগুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার এক্সপোর্টার অ্যাসোসিয়েশন (বিএফএলএলএফইএ) নিজেরা বৈঠক করেছে। মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠকের পর আগামী বৃহস্পতিবার রাজধানীর ধানমণ্ডিতে বিএফএলএলএফইএ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে চামড়ার নির্ধারিত দর ঘোষণা করার কথা রয়েছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বৈঠকে এবার পশুর চামড়ার দর কমিয়ে নির্ধারণের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন ব্যবসায়ীরা। ট্যানারি স্থানান্তরে অর্থ সংকট, রফতানি হ্রাস, আগের বছরের চামড়ার মজুদ ও আন্তর্জাতিক বাজারে দর কম থাকায় কাঁচা চামড়ার দর কমিয়ে নির্ধারণ করতে চান তারা। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গতবারের তুলনায় ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ দর কমতে পারে। এতে প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত গরুর চামড়ার দর ঢাকায় ৪০ থেকে ৪৫ টাকা ও ঢাকার বাইরে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা হতে পারে, যা গত বছর যথাক্রমে ৫০ থেকে ৫৫ ও ৪০ থেকে ৪৫ টাকা ছিল। একই হারে কমে ছাগল ও মহিষের চামড়ার দর নির্ধারণ করা হবে। তবে এভাবে দর নির্ধারিত হলে লবণের চড়া দামের কারণে অনেক স্থানে চামড়া সঠিকভাবে সংরক্ষণ হবে না। এমনকি চামড়া পাচার হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
বিএফএলএলএফইএর সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ মাহিন সমকালকে বলেন, এবার অন্য সব বছরের চেয়ে চামড়ার দাম বেশ কম হবে। চামড়া শিল্প রক্ষায় এবার কমিয়ে দাম নির্ধারণ করা হবে। আন্তর্জাতিক বাজারে চামড়ার দর ২৫ শতাংশ কমেছে। উল্টো দেশে উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে। এ ছাড়া ইউরোর দরপতন ও ইইউ বাজারে মন্দা চলছে। রফতানি কম হওয়ায় আগের বছরের চামড়ার মজুদ রয়ে গেছে। এছাড়া ট্যানারি স্থানান্তরে আর্থিক সংকট আছেন ব্যবসায়ীরা। ঋণের চড়া সুদ দিতে হচ্ছে তাদের। এ অবস্থায় বেশি দামে চামড়া কেনা সম্ভব হবে না। পাচার হওয়ার আশঙ্কার বিষয়ে তিনি বলেন, ভারতে এবার চামড়ার দর কম হবে। ওই দেশের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই দেশের বাজারে দর ঠিক করা হবে।
বিএইচএসএমএর মহাসচিব টিপু সুলতান বলেন, এবার চামড়ার দর ৩০ শতাংশ হারে কমিয়ে নির্ধারণ করা হবে। বিশ্ববাজারে দর কম থাকায় দেশেও চামড়ার দাম কম হবে। ট্যানারি স্থানান্তরে বিনিয়োগ করায় মালিকদের পুঁজি শেষ হয়ে গেছে। এখন ঋণ নিয়ে চড়া সুদ দিয়ে বেশি দামে চামড়া কিনবেন না তারা। ঋণের সুদ ও রফতানি মূল্যের সঙ্গে সমন্বয় করে দাম নির্ধারণ করা হলে এবার দাম কম হবে।
কাঁচা চামড়ার ব্যবসায়ী ও বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিতির মহাসচিব রবিউল ইসলাম বলেন, চামড়ার দর কম নির্ধারণ হলে, গত বছরের চেয়ে এবার চামড়া বেশি নষ্ট হবে। চড়া দামের লবণ দিয়ে সংরক্ষণ করতে অনেকেই এগিয়ে আসবেন না। অন্যদিকে ভারতের চেয়ে দেশে দাম কম হলে চামড়া পাচার হতে পারে। তিনি বলেন, ২৫ টাকা কেজি হিসেবে লবণ কিনে চামড়া সংরক্ষণ করে ৪০ থেকে ৪৫ টাকা বর্গফুটে বিক্রি করে লোকসান দেবেন না ব্যবসায়ীরা।
২০১১ ও ২০১২ সালে দাম নির্ধারণ না হওয়ায় বাজারে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছিল। এর পর বাধ্য হয়ে ২০১৩ সালে কোরবানির আগেই চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয়। তখন বেচাকেনা ভালো হয় এবং সঠিকভাবে দাম পাওয়া চামড়া সংরক্ষণ করেছিলেন কাঁচা চামড়ার আড়তদাররা। এর পর থেকে প্রতি বছর দর নির্ধারণ করা হয়; কিন্তু গত কয়েক বছর টানা কমছে কাঁচা চামড়ার দর, যে দর ২০১৩ সালের তুলনায় প্রায় অর্ধেক নেমেছে। এ ক্ষেত্রে সব বছরেই একই অজুহাত ছিল বিশ্ববাজারে দরপতন। চামড়া ব্যবসায়ীদের হিসাব অনুযায়ী, গত বছর কোরবানিতে সারাদেশে এক কোটি পশুর চামড়া পাওয়া গেছে। এর মধ্যে গরু ও মহিষের চামড়া ৪০ লাখ এবং ছাগল ও ভেড়ার চামড়া ছিল প্রায় ৬০ লাখ।
চামড়ার সর্বোচ্চ দর ছিল ২০১৩ সালে। ওই বছরে প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত গরুর চামড়া ঢাকায় ৮৫ থেকে ৯০ টাকা এবং ঢাকার বাইরে ছিল ৭৫ থেকে ৮০ টাকা। খাসির চামড়া ৫০ থেকে ৫৫ টাকা, বকরি ও মহিষের চামড়া ৪০ থেকে ৪৫ টাকা। পরের বছর গরুর চামড়ায় ১৫ টাকা, মহিষের চামড়ায় ৫ টাকা, খাসির চামড়ায় ২০ টাকা এবং বকরির চামড়ায় ১৫ টাকা করে কমানো হয়। গত বছর প্রতি বর্গফুট খাসির চামড়া ২০ থেকে ২২ টাকা এবং বকরির চামড়া ১৫ থেকে ১৭ টাকা ও মহিষ ৩০ থেকে ৩৫ টাকা ছিল।