কোরবানির ঈদে দুই বছর ধরে প্রায় এক কোটি বিভিন্ন ধরনের পশু কোরবানি দেওয়া হয়। প্রতিবছরই ৫ থেকে ৭ শতাংশ হারে এ সংখ্যা বাড়ছে। এ সময়ই ৫০ থেকে ৫৫ শতাংশ চামড়া সংগ্রহ করে ট্যানারিগুলো। বছরের বাকি সময়েও পশু জবাইয়ের পরিমাণ বাড়ছে। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পশু কোরবানি ও জবাই বাড়লেও চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রফতানি প্রবৃদ্ধিতে ভাটা পড়েছে। তিন বছর আগেও যেখানে রফতানিতে ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে, তা গত দু’বছরে ১ থেকে ২ শতাংশের ঘরে এসে ঠেকেছে। সম্ভাবনাময় এ খাতের রফতানি শতকোটি ডলারের বৃত্তে আটকা পড়েছে। এ খাতে এক ধরনের স্থবিরতাও চলছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১১-১২ অর্থবছরে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের রফতানি প্রবৃদ্ধি ছিল ২০ শতাংশ। পরের অর্থবছরে তা বেড়ে ৩২ শতাংশে পেঁৗছায়। পরের অর্থবছরেও প্রায় ৩০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয় এ খাতে। এর পর থেকেই হঠাৎ করে ব্যাপক ছন্দপতন হয় প্রবৃদ্ধিতে। টাকার অঙ্কে রফতানি বাড়লেও তার পরিমাণ অনেক কমে যায়। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে রফতানি প্রবৃদ্ধি ১ শতাংশে নেমে আসে। সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, গত অর্থবছরে প্রায় আড়াই শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারের দীর্ঘ মেয়াদে নীতিগত সহায়তা না থাকায় নতুন বিনিয়োগে কারও আগ্রহ নেই। এর বাইরে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমে যাওয়া অনেকাংশে দায়ী। ট্যানারি স্থানান্তরকে কেন্দ্র করে সরকারের সঙ্গে টানাপড়েনসহ কয়েকটি কারণে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। শিগগিরই এ অবস্থা থেকে উত্তরণের আশা দেখছেন না তারা। এ জন্য চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের সম্ভাবনা শুধু কাগজে-কলমে থেকে যেতে পারে বলে অনেকের আশঙ্কা।
জানতে চাইলে মেট্রোপলিটন চেম্বার অ্যান্ড কমার্স ইন্ডাস্ট্রি (এমসিসিআই) সভাপতি এবং অ্যাপেক্স ফুটওয়্যারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর সমকালকে বলেন, এ খাতের সম্ভাবনা কাজে লাগানোর জন্য সরকারের দীর্ঘমেয়াদি নীতিগত সহায়তা নেই। ৫ থেকে ১০ বছর মেয়াদি নীতি-সহায়তা দিতে পারলে নতুন করে বিনিয়োগ আসবে। ইপিবির মাধ্যমে স্টাডি করে সরকার এ ধরনের ব্যবস্থা নিতে পারে। নাসিম মঞ্জুর বলেন, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের আন্তর্জাতিক বাজার প্রায় ২০০ বিলিয়ন ডলার। সেখানে ১ শতাংশের একটু বেশি বাজার দখলে রেখেছে বাংলাদেশ। মূলত চামড়াজাত পণ্য রফতানি থেকেই এ বৈদেশিক মুদ্রা আসছে।
বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক শাখাওয়াত উল্লাহ সমকালকে বলেন, দুই বছর আগে যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি পাউন্ড চামড়া রফতানি করে ১০৬ ডলার পাওয়া যেত। এখন তা ৭০ ডলারে নেমে এসেছে। এভাবে গত কয়েক বছর ধারাবাহিকভাবে দর কমছে। তিনি বলেন, পোশাক খাতের মতো বড় অঙ্কের রফতানি আয়ের সুযোগ থাকার পরও তা সরকারের সহযোগিতার অভাবে কাজে লাগানো যাচ্ছে না। তিনি মনে করেন, কিছু কিছু ক্ষেত্রে উল্টো অসহযোগিতা করা হচ্ছে। কাঁচামাল আমদানিতে আড়াই শতাংশ শুল্ক ফেরত দিত সরকার। ছয় মাস ধরে তা বন্ধ রেখেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সংশ্লিষ্টদের মতে, চামড়া খাতের রফতানি জুতার ওপর নির্ভর হয়ে পড়েছে। গত পাঁচ বছরে দ্বিগুণেরও বেশি প্রবৃদ্ধি হয়েছে চামড়ার জুতা রফতানিতে। ২০১০-১১ অর্থবছরে ২০ কোটি ডলারের কম জুতা রফতানি হয়। গত অর্থবছরে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫০ কোটি ডলার। এর বিপরীতে চামড়ার রফতানি ক্রমাগতভাবে কমছে। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ৫০ কোটি ডলারের বেশি রফতানি আয় হলেও তা এখন কমে দাঁড়িয়েছে ২৮ কোটি ডলারে। রফতানিকারকরা বলেন, বাংলাদেশের চামড়ার মান ভালো হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্র, কোরিয়া ও চীনে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এ ছাড়া ইতালি, স্পেন ও পর্তুগালে রফতানি হয় চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য। তারা মনে করেন, কিছু উদ্যোগ নেওয়া হলেই এসব বাজারে ভালো অবস্থান তৈরি করা যাবে।