চীনে শুরু হওয়া জি২০ সম্মেলনের প্রথম দিনই আন্তর্জাতিক তিন অর্থনৈতিক সংস্থার নেতারা সতর্ক করে বলেছেন, অনেক উন্নত দেশই বাণিজ্যের ক্ষেত্রে রক্ষণশীল মনোভাব পোষণ করে। এ ধরনের কার্যক্রম বিশ্ব অর্থনীতিকে আরো ঝুঁকির মুখে ঠেলে দেবে বলে আশঙ্কা করছেন তারা। উদ্বোধনী বক্তৃতায় চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংও বলেছেন, দেশগুলোকে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধির পদক্ষেপ গ্রহণের পাশাপাশি রক্ষণশীলতা পরিহার করতে হবে। খবর ব্লুমবার্গ ও রয়টার্স।
এক প্যানেল সেশনে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) প্রধান ক্রিস্টিন লাগার্দে ব্যবসায়ী নেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, তারা যেন নিজ দেশের সরকারকে বাণিজ্যপ্রবাহ সমুন্নত রাখতে সহায়তার অনুরোধ জানান। সেই সঙ্গে তিনি আগামী বছরের অর্থনীতির পূর্বাভাস নিয়েও সতর্ক করেছেন।
লাগার্দে বলেন, অনেক দিন ধরেই বাণিজ্যে ধীরগতি চলছে। শুধু তা-ই নয়, বর্তমানে বাণিজ্যবিরোধী পদক্ষেপে এক ধরনের আন্তঃপ্রবাহ দেখা যাচ্ছে; রাষ্ট্রের নীতিমালার ক্ষেত্রেও যার একটি প্রভাব থাকছে। আন্তর্জাতিক বাণিজ্য, বিনিয়োগ না হলে সাধারণ মানুষের জন্য সুযোগও কমে আসবে। বিশেষ করে কর্মসংস্থানের ওপর বড় ধরনের প্রভাব পড়বে। আইএমএফ প্রধানের এ মতামতকে সমর্থন করেছেন বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) মহাপরিচালক রবার্তো আজেভেদো।
এদিকে লাগার্দে এমন সময়ে বাণিজ্যে রক্ষণশীলতা নিয়ে কথা বললেন, যখন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে মুক্তবাণিজ্য চুক্তি ট্রান্স-প্যাসিফিক পার্টনারশিপ (টিপিপি) অনুমোদনের প্রক্রিয়া চলছে। মোট ১২টি দেশের মধ্যে চুক্তিটি সই হবে, যারা বিশ্ব অর্থনীতির ৪০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করছে। আসন্ন মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দুই প্রার্থী হিলারি ক্লিনটন ও ডোনাল্ড ট্রাম্প টিপিপির বিরুদ্ধে। এছাড়া বাণিজ্যে রক্ষণশীল মনোভাব পোষণ করে, এমন অনেক পশ্চিমা দেশ এ মুক্তবাণিজ্য নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
ইকোনমিক কোঅপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (ওইসিডি) মহাপরিচালক অ্যাঙ্গেল গুরিয়া জানিয়েছেন, বিশ্বে অর্থনৈতিক মন্দার পর বাণিজ্যে রক্ষণশীলতা-বিষয়ক মোট ১ হাজার ৪০০টি পদক্ষেপ পাস হয়েছে। টিপিপি নিয়ে উদ্বেগের পাশাপাশি নানা অনিশ্চয়তার কারণেই ব্রিটেন ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ত্যাগের উদ্যোগ নিয়েছে বলে মনে করেন তিনি।
জি২০ সম্মেলনে অংশ নেয়ার এ ফাঁকে নিজেদের মধ্যে বৈঠকে ব্রিকসভুক্ত দেশগুলো (ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন ও দক্ষিণ আফ্রিকা) বাণিজ্যে রক্ষণশীলতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে। ব্রিকসভুক্ত দেশগুলোর নেতারা এ প্রসঙ্গে দেয়া এক যৌথ বিবৃতিতে বলেন, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে নিম্নমুখী স্রোত রক্ষণশীলতা নিয়ে উদ্বেগ আরো বাড়িয়ে দিচ্ছে।
অন্যদিকে ডব্লিউটিও প্রধান রবার্তো আজেভেদো বলেছেন, বাণিজ্যবিরোধী পদক্ষেপগুলো সত্যিকার অর্থেই অনেক দুঃখজনক। আমরা যদি এখনই এসব কিছুর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণ না করি, তাহলে ভবিষ্যতে বাণিজ্য ও অর্থনীতি নিয়ে ভুল নীতিমালা গ্রহণ করা হবে। ফলে রক্ষণশীলতার পদক্ষেপগুলো আমরা কোনোভাবেই পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়া ছেড়ে দিতে পারি না। কারণ বাণিজ্যবিরোধী পদক্ষেপ গ্রহণ করলে তা প্রবৃদ্ধির বিপক্ষেই যাবে। ফলে আমাদের রক্ষণশীলতার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
প্রতিযোগিতামূলক মুদ্রা অবমূল্যায়ন না করার প্রতিশ্রুতি চীন-যুক্তরাষ্ট্রের: প্রতিযোগিতামূলকভাবে মুদ্রার অবমূল্যায়ন না করার নতুন প্রতিশ্রুতি দিয়েছে চীন ও যুক্তরাষ্ট্র। অন্যদিকে চীন জানিয়েছে, তারা স্থানীয় মুদ্রা ইউয়ানের বিনিময়মূল্য ক্রমেই বাজারবান্ধব করে তুলবে। জি২০ বৈঠকের এক ফাঁকে দেশ দুটি এ বিষয়ে প্রতিশ্রুতি দেয়।
চীনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা মুদ্রার বিনিময়হার ক্রমেই বাজারবান্ধব করে তুলবে। অন্যদিকে পৃথকভাবে বিদেশী ব্যবসায়ী দলগুলো বলছে, চীনে ঝুলে থাকা সাইবার নীতিমালা চলতি বছরই পাস হবে। তাদের মতে, এ নীতিমালার কারণে বিদেশী কোম্পানিগুলোর পক্ষে চীনের বাজারে প্রবেশ করা আরো কঠিন হবে।